পলাশ শরিফ: রাষ্ট্রায়ত্ত বিদ্যুৎ সঞ্চালনকারী প্রতিষ্ঠান পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) কাছ থেকে সেবা নিচ্ছে দেশি-বিদেশি কোম্পানি ও সংস্থা। এর বিপরীতে ট্রান্সমিশন-হুইলিং ও অপটিক্যাল ফাইবার চার্জ নিচ্ছে কোম্পানিটি। কিন্তু সেবা নিয়েও পিডিবি, ডেসকো, ডিপিডিসি ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিসহ রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি আটটি কোম্পানি ও সংস্থা ওই ফি দিচ্ছে না। বহু চেষ্টা-তদবির করেও ওই কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে প্রায় ৫৪৫ কোটি টাকা বকেয়া পাওনা আদায় করতে পারছে না পিজিসিবি, যে কারণে ওই অর্থ আদায় করা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
তথ্যমতে, ২০১৯ সালের জুন শেষ হওয়া আর্থিক বছর শেষে সেবা প্রদানের বিপরীতে ট্রান্সমিশন-হুইলিং ও অপটিক্যাল ফাইবার চার্জ হিসেবে দেশি-বিদেশি ও রাষ্ট্রায়ত্ত-বেসরকারি মিলিয়ে প্রায় ৫৫৪ কোটি ২২ লাখ টাকা পাওনা দেখিয়েছে পিজিসিবি। এর মধ্যে বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড (বিপিডিবি), ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি), ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো), পল্লী বিদ্যুৎতায়ন বোর্ড (পিবিএস), ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডব্লিউজেডপিডিসিএল), নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (এনইএসসিও), কুষ্টিয়ার বিডব্লিউডিবি জিকে প্রজেক্ট ভেড়ামারা ও বেসরকারি কোম্পানি আবুল খায়ের স্টিল প্রোডাক্ট এ আট কোম্পানি নিয়মিতভাবে ওই চার্জ দিচ্ছে না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০০৫ সাল থেকে পিজিসিবির ওই পাওনা আদায় হচ্ছে না, যে কারণে বছরের পর বছর ধরে বকেয়ার অঙ্ক বাড়ছে। এর মধ্যে বিপিডিবির কাছে পাওনা প্রায় ১৯০ কোটি টাকা। সংস্থাটির কাছ থেকে নেওয়া সম্পদের মূল্যের সঙ্গে এ পাওনা সমন্বয় করা হয়েছে।
এর বাইরে পল্লি বিদ্যুৎ সমিতিগুলোর কাছে পাওনা প্রায় ১৮২ কোটি টাকা, ডিপিডিসির কাছে ১১১ কোটি ২৩ লাখ টাকা, ডেসকোর কাছে প্রায় ৩২ কোটি টাকা, ডব্লিউজেডপিডিসিএলের কাছে পাওনা ১৯ কোটি ৪৬ লাখ টাকা উল্লেখযোগ্য।
অন্যদিকে আরেক রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান রুরাল পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের (আরপিসিএল) কাছে পাওনা প্রায় ৫৪ কোটি ৩৯ লাখ টাকা আদায় করতে না পেরে এর বিপরীতে শতভাগ প্রভিশন রেখেছে পিজিসিবি। চার্জ বকেয়া রাখা কোম্পানিগুলো পাওনা পরিশোধ না করতে সময়ে সময়ে বিভিন্ন অজুহাত দিচ্ছে। এর মধ্যে সিংহভাগ কোম্পানি রাষ্ট্রায়ত্ত হওয়ার কারণে এ বিষয়ে সরকারি আন্তঃসংস্থা দেনা-পাওনাসংক্রান্ত কমিটিতেও আলোচনা হয়েছে। কিন্তু তার পরও ওই পাওনা আদায় করা যাচ্ছে না।
আলাপকালে পিজিসিবির কোম্পানি সচিব জাহাঙ্গীর আজাদ শেয়ার বিজকে বলেন, ‘এটা অনেক পুরোনো বিষয়। অনেক দিন ধরে এ নিয়ে আলোচনা-পর্যালোচনা হচ্ছে। সরকারি আন্তঃসংস্থা দেনা-পাওনাসংক্রান্ত কমিটিও এ নিয়ে কাজ করছে। কিন্তু কোম্পানিগুলো বিভিন্ন অজুহাত দিয়ে কালক্ষেপণ করছে। আমরা এ বিষয়টি গুরুত্বসহ দেখছি। প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করে বকেয়া পরিশোধের তাগিদ দেওয়া হচ্ছে।’
এদিকে পাওনা আদায় না হওয়ায় পিজিসিবির আয়-ব্যয় নিরীক্ষাকারী প্রতিষ্ঠান একনাবীন চার্টার্ড অ্যাকাউনট্যান্টস এ বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছে। পিজিসিবির ওই পাওনার বিপরীতে প্রভিশন রাখতে হলে ২০১৮-১৯ আর্থিক বছরের আয়-মুনাফা উল্লেখযোগ্য হারে কমে যেত। এ বিষয়ে পিজিসিবির দায়িত্বশীলদের নজর দেওয়ার তাগিদ দিয়েছে নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠানটি।
উল্লেখ্য, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি পিজিসিবি। ৭১২ কোটি ৭২ লাখ টাকা পরিশোধিত মূলধনের ওই কোম্পানিটির ৮৪ দশমিক ৬৪ শতাংশ শেয়ারই বিপিডিবির হাতে রয়েছে। এর বাইরে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে কোম্পানিটির ১২ দশমিক ১০ শতাংশ, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের হাতে শূন্য দশমিক ১৭ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে তিন দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। বিদ্যুতের আওতার সঙ্গে সঙ্গে পিজিসিবির আয়-মুনাফাও উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে। এর বিপরীতে প্রতি বছর নগদ লভ্যাংশের হারও বাড়ছে।