নিজস্ব প্রতিবেদক: চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ এলাকার সদ্য বিদেশ ফেরত আশিকুর রহমান। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ১৮৪ টাকার নাস্তা করে ইএফডিতে ভ্যাট দিলেন ৮ টাকা। তাতেই তিনি পুরস্কার পেলেন নগদ ৫০ হাজার টাকা। ইএফডির দ্বিতীয় পুরস্কার পেয়ে বললেন, ভাগ্য যাচাই করলাম। লটারি লেগে গেলো। সঙ্গে আমি যে সচেতন, তাও প্রমাণ হয়ে গেলো। অপরদিকে, ব্যবসায়ী মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। কয়েকজন দুপুরের খাবার খেয়ে ইএফডিতে ভ্যাট দিলেন ৭৪ টাকা। পেয়ে গেলেন ৩য় পুরস্কার হিসেবে ২৫ হাজার টাকা। বললেন, আমার ভ্যাট যে সরাসরি সরকারি কোষাগারে যাচ্ছে, তার প্রমাণ পেয়ে গেলাম। এখন থেকে আমি প্রতিটি কেনাকাটায় ইএফডি চালান নেবো।
## ইএফডি লটারিতে দ্বিতীয় ও তৃতীয় পুরস্কার জিতল চট্টগ্রামের দুইজন বিজয়ী

আশিকুর রহমান ও মোহাম্মদ মিজানুর রহমান চট্টগ্রাম ভ্যাট কমিশনারেটের আওতাধীন দুইটি রেস্তোঁরায় খাবার খেয়ে ইএফডি চালানে ভ্যাট দিয়ে এই পুরস্কার জিতেছেন। প্রথমবারের মতো এই কমিশনারেটের আওতাধীন দুইজন ভোক্তা এনবিআর ঘোষিত দ্বিতীয় ও তৃতীয় পুরস্কার জিতেছেন। রোববার (৩০ জানুয়ারি) কমিশনারেটের সম্মেলন কক্ষে কমিশনার মোহাম্মদ আকবর হোসেন দুইজনের হাতে পুরস্কারের চেক হস্তান্তর করেন। ইএফডিএমএস হতে ইস্যুকৃত চালানের ভিত্তিতে লটারির মাধ্যমে আর্থিক পুরস্কার প্রদান নীতিমালা, ২০২১ অনুযায়ী বিজয়ীদের ইনভয়েস নম্বর, চালানের কপি, আইডি যাচাই করে তাৎক্ষণিকভাবে পুরস্কারের চেক হস্তান্তর করা হয়। অনুষ্ঠানে ভ্যাট কমিশনারেটের কর্মকর্তা এবং চালান ইস্যুকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে কমিশনার সবাইকে কেনাকাটার সময় চালান সংগ্রহ করে তা লটারির জন্য সংরক্ষণ করার অনুরোধ করেন।
এ বিষয়ে আশিকুর রহমান শেয়ার বিজকে বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন দেশের বাইরে ছিলাম। দামপাড়ার দিকে গেলেই বেভারলী আইল্যান্ড রেস্তোঁরা খাওয়া পড়ে। ২৯ ডিসেম্বর পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ওই রেস্তোঁরায় নাস্তা করেছি (পরোটা, চা ও পানি)। বিল দিয়েছি ১৮৪ টাকা ৮৫ পয়সা, যাতে ভ্যাট ছিলো ৮ টাকা ৭৯ পয়সা। আমি ওই রেস্তোঁরায় ইএফডির পোস্টার দেখেছি। সেখানে ভ্যাট দেয়ার বিনিময়ে পুরস্কারের কথা লেখা ছিলো। ভ্যাট দিতে আমারও আগ্রহ তৈরি হলো, আবার ভাগ্য যাচাই করতেও ইএফডি চালান নিলাম। শেষে পুরস্কার পেয়ে গেলাম। সরকার এটা ভালো উদ্যোগ নিয়েছে। যাতে মানুষ কিছু পুরস্কারও পাবে, আর জনসচেতনতাও তৈরি হবে।’

মোহাম্মদ মিজানুর রহমান শেয়ার বিজকে বলেন, ‘আমি ব্যবসা করি। আমরা কয়েকজন আল মক্কা হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্টে দুপুরের খাবার খেয়েছি। এক হাজার ৫৫৫ টাকা বিল দিয়েছি, যাতে ৭৪ টাকা ছিলো ভ্যাট। আমাদের ইএফডি চালান দেয়া হয়েছে। শেষে ২৫ হাজার টাকা পুরস্কার পেলাম। ভ্যাট দিতে সরকার আমাদের উৎসাহিত করছে।’ ভালো উদ্যোগ নেয়ার জন্য তিনি এনবিআরকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘আমার ভ্যাট যে সরাসরি সরকারি কোষাগারে যাচ্ছে, তা বিশ্বাস হচ্ছে। এজন্য আমি কেনাকাটার ক্ষেত্রে ইএফডিতে ভ্যাট দিয়েছি।’
চট্টগ্রাম ভ্যাট কমিশনারেটের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইএফডি ও এসডিসি বিষয়ে ব্যবসায়ী ও ভোক্তার সচেতনতা বাড়াতে নানা উদ্ভাবনী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে চট্টগ্রাম ভ্যাট কমিশনারেট। ব্যাপক প্রচারণার পাশাপাশি ক্রিকেট সেলিব্রেটি আকরাম খানকে দিয়ে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষা ও প্রমিত বাংলায় ইএফডি এর প্রচারনামূলক পোষ্টার এখন চট্টগ্রাম শহরের আনাচে কানাচে দেখা যাচ্ছে। ইএফডি চালান ইস্যু করে ব্যবসায়ীরা সুনাগরিকের দায়িত্ব পালন করছেন। জনগণ সচেতন হয়ে ইএফডি চালান সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করে একদিকে যেমন নিজেদের দেয়া মূসক সরকারি কোষাগারে জমা নিশ্চিত করছেন, অন্যদিকে লটারি বিজয়ী হয়ে পুরস্কার জিতে নিচ্ছেন।
কর্মকর্তারা আরো জানিয়েছেন, ভোক্তা বা ক্রেতার দেয়া ভ্যাট যাতে সরকারি কোষাগারে জমা নিশ্চিত হয়, সে লক্ষ্যে বিভিন্ন দোকানে ইএফডি স্থাপন করা হয়েছে। প্রতিটি কেনাকাটার পর ইএফডি মেশিন হতে চালান গ্রহণ হলে ক্রেতা কর্তৃক পরিশোধিত ভ্যাট সরকারি কোষাগারে জমা নিশ্চিত হবে। বন্দর নগরী চট্টগ্রামে ইতোপূর্বে স্থাপিত ৫২০টি মেশিনের পাশাপাশি আরও ৫০০টি মেশিন স্থাপনের কাজ চলছে। প্রতিটি ইএফডি মেশিন এনবিআরের কেন্দ্রীয় সার্ভারের সাথে অনলাইনে সংযুক্ত রয়েছে। এর ফলে ক্রেতাদের প্রদত্ত ভ্যাট সরকারি কোষাগারে জমা প্রদান নিশ্চিত হচ্ছে। এছাড়াও ক্রেতাদের উৎসাহিত করতে প্রতি মাসের ৫ তারিখে এনবিআর একটি বিশেষ লটারির আয়োজন করেছে। এ লটারিতে ১০১টি পুরস্কারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
###