ইসমাইল আলী:ডলার সংকটে কয়লা আমদানি ব্যাহত হচ্ছে। এমনকি ফার্নেস অয়েল আমদানির বিল পরিশোধ করা যাচ্ছে না। এতে একে একে বন্ধ হচ্ছে বিদ্যুৎকেন্দ্র। ব্যাহত হচ্ছে বিদ্যুৎ উৎপাদন, বাড়ছে লোডশেডিং। আবার বিদেশি ঋণের কিস্তিও নিয়মিত পরিশোধ করতে পারছে না বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানিতেও জটিলতা তৈরি করছে ডলার সংকট। সব মিলিয়ে ডলার সংকট নিয়ে বিপাকে পড়েছে বিদ্যুৎ খাতসংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো।
সূত্র জানায়, আগামী জানুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সে পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিয়ে সম্প্রতি বিদ্যুৎ বিভাগে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে আগামী জানুয়ারি পর্যন্ত ডলারের সম্ভাব্য চাহিদা জানতে চাওয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে চলতি মাস থেকে আগামী বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত বিদ্যুৎ খাতে ডলারের সম্ভাব্য চাহিদা প্রাক্কলন করা হয়েছে।
এতে দেখা যায়, আট মাসে মোট পাঁচ বিলিয়ন ডলারের বেশি লাগবে এ খাতে। ফার্নেস অয়েল ও কয়লা আমদানির বিল পরিশোধ, ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির দাম পরিশোধ এবং পিডিবির ইসিএ (এক্সপোর্ট ক্রেডিট এজেন্সি) ও অন্যান্য সংস্থার ঋণ পরিশোধে এ ডলার লাগবে। চাহিদামতো ডলার সরবরাহ না করা হলে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের মতো পরিণতি ভোগ করতে হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বৈঠকের তথ্যমতে, মে পর্যন্ত কয়লা আমদানির বিল বকেয়া রয়েছে ৫৮৪ মিলিয়ন ডলার এবং ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির বিল বকেয়া ৩০০ মিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ গত মাস পর্যন্ত বিল পরিশোধে লাগবে ৮৮৪ মিলিয়ন ডলার। আর চলতি মাসে ফার্নেস অয়েল আমদানির বিল বাবদ লাগবে ২১৩ মিলিয়ন ডলার ও কয়লা আমদানিতে ৭৯ মিলিয়ন ডলার। ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির বিল পরিশাধে লাগবে ১১৫ মিলিয়ন ডলার। এছাড়া পিডিবির ইসিএ ঋণের কিস্তি ৩২ মিলিয়ন ডলার, পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের ঋণের কিস্তি ১৩৮ দশমিক ২৬ মিলিয়ন ডলার এবং আশুগঞ্জ পাওয়ার প্লান্টের কিস্তি রয়েছে ৩৭ দশমিক ০৮ মিলিয়ন ডলার। সব মিলিয়ে চলতি মাসে লাগবে প্রায় ৬১৩ মিলিয়ন ডলার।
এদিকে জুলাই মাসে ফার্নেস অয়েল আমদানির বিল বাবদ লাগবে ২৪১ মিলিয়ন ডলার ও কয়লা আমদানিতে ৯৭ মিলিয়ন ডলার। আর ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির বিল পরিশাধে লাগবে ১৫৬ মিলিয়ন ডলার। এছাড়া পিডিবির ইসিএ ঋণের কিস্তি রয়েছে ২৪ মিলিয়ন ডলার এবং বিআর পাওয়ার জেনের ঋণের কিস্তি আট দশমিক ০৮ মিলিয়ন ডলার। সব মিলিয়ে আগামী মাসে লাগবে প্রায় ৫২৬ মিলিয়ন ডলার।
এদিকে আগস্টে সব মিলিয়ে লাগবে ৫৩৭ মিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে ফার্নেস অয়েল আমদানির বিল বাবদ লাগবে ২৪১ মিলিয়ন ডলার ও কয়লার বিল ১১৬ মিলিয়ন ডলার। আর ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির বিল পরিশাধে লাগবে ১৫৬ মিলিয়ন ডলার এবং পিডিবির ইসিএ ঋণের কিস্তি পরিশোধে ১২ মিলিয়ন ডলার। এছাড়া নর্থওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি কিস্তি রয়েছে ১২ দশমিক ৬৯ মিলিয়ন ডলার।
একইভাবে সেপ্টেম্বরে বিদ্যুৎ খাতে লাগবে ৫৭২ মিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে ফার্নেস অয়েল আমদানির বিল বাবদ লাগবে ২৩৩ মিলিয়ন ডলার ও কয়লার বিল ১১২ মিলিয়ন ডলার। ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির বিল পরিশাধে লাগবে ১৫৬ মিলিয়ন ডলার এবং পিডিবির ইসিএ ঋণের কিস্তি শোধে ১৭ মিলিয়ন ডলার। এছাড়া নর্থওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির কিস্তি রয়েছে ১৩ দশমিক ৪৪ মিলিয়ন ডলার এবং আরপিসিএল-নরিনকোর কিস্তি শোধে লাগবে ৪০ দশমিক ৪ মিলিয়ন ডলার।
অক্টোবর ও নভেম্বরে পিডিবি ছাড়া অন্য কোনো সংস্থার ঋণের কিস্তি নেই। এ দুই মাসে বিদ্যুৎ খাতে লাগবে যথাক্রমে ৫১৫ ও ৩৮৫ মিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে অক্টোবরে ফার্নেস অয়েল আমদানির বিল বাবদ লাগবে ২২১ মিলিয়ন ডলার ও কয়লার বিল ১১৬ মিলিয়ন ডলার। আর ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির বিল পরিশাধে অক্টোবরে লাগবে ১৫৬ মিলিয়ন ডলার এবং পিডিবির ইসিএ ঋণের কিস্তি শোধে ২২ মিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে, নভেম্বরে ফার্নেস অয়েল আমদানির বিল বাবদ লাগবে ১১৬ মিলিয়ন ডলার ও কয়লার বিল ১১২ মিলিয়ন ডলার। ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির বিল পরিশাধে অক্টোবরে লাগবে ১৫০ মিলিয়ন ডলার এবং পিডিবির ইসিএ ঋণের কিস্তি শোধে সাত মিলিয়ন ডলার।
ডিসেম্বরে বিদ্যুৎ খাতে লাগবে ৬০৭ মিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে ফার্নেস অয়েল আমদানির বিল বাবদ লাগবে ১২০ মিলিয়ন ডলার ও কয়লার বিল ১৩৫ মিলিয়ন ডলার। ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির বিল পরিশাধে লাগবে ১৪৬ মিলিয়ন ডলার এবং পিডিবির ইসিএ ঋণের কিস্তি শোধে ৩০ মিলিয়ন ডলার। এছাড়া পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের ঋণের কিস্তি ১৪০ দশমিক ৮৯ মিলিয়ন ডলার এবং আশুগঞ্জ পাওয়ার প্লান্টের কিস্তি রয়েছে ৩৪ দশমিক ৮ মিলিয়ন ডলার।
এদিকে আগামী বছর জানুয়ারিতে বিদ্যুৎ খাতে লাগবে ৪৩৩ মিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে ফার্নেস অয়েল আমদানির বিল বাবদ লাগবে ১২০ মিলিয়ন ডলার ও কয়লার বিল ১৫৩ মিলিয়ন ডলার। ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির বিল পরিশাধে লাগবে ১৫২ মিলিয়ন ডলার। তবে জানুয়ারিতে পিডিবির ইসিএ ঋণের কিস্তি নেই। যদিও ওই মাসে বিআর পাওয়ার জেনের ঋণের কিস্তি রয়েছে আট দশমিক ০৮ মিলিয়ন ডলার।
জানতে চাইলে বৈঠকে উপস্থিত পিডিবির একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, ডলার সংকটে জ্বালানি তেল ও গ্যাস (এলএনজি) আমদানি করতে না পারায় গত জুলাই থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। তবে এপ্রিল ও জুনের প্রথম সপ্তাহে সংকট চরমে ওঠে। ডলার সংকট এখনও কাটেনি। পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হয়ে গেছে ডলার দিতে না পারায়। তাই আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে ডলারের প্রয়োজনীয় পরিমাণ সরকারের কাছে তুলে ধরা হবে।