ক্রীড়া প্রি তবেদক: টপ অর্ডারের ব্যর্থতায় গত পরশুই হারের মঞ্চটা প্রস্তুত হয়েছিল। তবে এক প্রান্ত আগলে রেখে মুশফিকুর রহিম দেখিয়েছিলেন লিডের স্বপ্ন। কিন্তু গতকাল বাস্তবতার সঙ্গে তার কিছুই মেলেনি। উল্টো ইডেনের নন্দনকাননে শুরুর ঘণ্টায় গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। এর ফলে আরেকটি ইনিংস হারের তেতো স্বাদ পায় টিম টাইগার্স। শুধু তাই দুই ম্যাচের সিরিজও ভারতের কাছে দলটি হেরে বসে ২-০ ব্যবধানে।
ছুটির দিন থাকায় গতকাল সকাল থেকেই ইডেনে আসতে শুরু করেন দর্শক। তারা আশা ছিল, অন্তত এ টেস্টের তৃতীয় দিনের পুরোটা সময় ব্যাটিং করুক বাংলাদেশ। কিন্তু কোথায় কী? বল মাঠে গড়ানোর ৪৭ মিনিটের মধ্যেই মাত্র ১৯৫ রানে গুটিয়ে যায় টাইগারদের দ্বিতীয় ইনিংস। আগের দিন চোট নিয়ে ফেরা মাহমুদউল্লাহ মাঠেই নামতে পারেননি! এর ফলে ইনিংস ও ৪৬ রানে হেরে বসে মুমিনুল হকের দল।
গোলাপি বলে দিবারাত্রির লড়াইয়ে ইনিংস হার বাঁচাতে গতকাল বাংলাদেশের দরকার ছিল ৮৯ রান। হাতে মাত্র ৪ উইকেট। ভরসার নাম হয়েছিলেন মুশফিকুর রহিম। আগের দিনের ৫৯ রান নিয়ে এদিন শুরুটাও বেশ দেখেশুনেই করেছিলেন তিনি। কিন্তু বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। উমেশ যাদবের অফস্টাম্পের বাইরের লেংথে বল উড়িয়ে মারতে গিয়ে ভুল করেন। সেøায়ারে টাইমিং হয়নি। বল চলে যায় রবীন্দ্র জাদেজার হাতে। ৭৪ রানে থামেন তিনি। তার আগে অবশ্য বিদায় নেন ইবাদত। উমেশ যাদবের ডেলিভারিতে সিøপে বিরাট কোহলির হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি।
মুশফিকের পর আবু জায়েদও চটজলদি ফেরেন। তাকে সাজঘরের পথ দেখান মোহাম্মদ শামি। এর সঙ্গে সঙ্গে লেখা হয়ে যায় বাংলাদেশের আরেকটি ব্যর্থতার কাব্য!
এর আগে ইন্দোরে সিরিজের প্রথম টেস্টে বাংলাদেশ হেরেছিল ইনিংস ও ১৩০ রানে। কলকাতায় ইতিহাসে প্রথম গোলাপি বলের টেস্টে সোয়া দুদিনে মুমিনুল হকের দল হার মেনে নেয় ইনিংস ও ৪৬ রানে।
ভারতের বিপক্ষে হারলেও তেমন সমস্যা দেখছেন না বাংলাদেশ অধিনায়ক মুমিনুল। তিনি এখান থেকে আরও শিক্ষা নিতে চাইছেন, ‘হারলে সমস্যা নেই; কিন্তু কিছু ইতিবাচক ব্যাপার আছে। এবাদত ভালো বল করেছে। রিয়াদ ভাই ও মুশফিক ভাই ভালো ব্যাট করেছেন। অবশ্যই দুদলের মধ্যে অনেক ব্যবধান। এ দুটি ম্যাচ থেকে আমাদের শিখতে হবে এবং ভুলগুলো শুধরে নিতে হবে।’
টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার পর বাংলাদেশের কেটে গেছে ১৯ বছর। এর মধ্যে টাইগাররা সাদা পোশাকে খেলেছে ১১৭ ম্যাচ। সব মিলিয়ে হেরেছে ৮৮ ম্যাচ। তার মধ্যে আবার রয়েছে ইনিংস ব্যবধানে হার ৪২টি। তাই প্রশ্ন উঠতেই পারে: টেস্ট শিখতে আর কতদিন লাগবে বাংলাদেশের!
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস: ১০৬/১০ (৩০.৩ ওভারে, সাদমান ২৯, ইমরুল ৪, মুমিনুল ০, মিঠুন ০, মুশফিক ০, মাহমুদউল্লাহ ৬, লিটন দাস ২৪ রিটায়ার্ড হার্ট, নাঈম হাসান ১৯, এবাদত ১, মেহেদি ৮, আল-আমিন ১, আবু জায়েদ ০, অতিরিক্ত ১৪; ইশান্ত ৫/২২, উমেশ ৩/২৯ ও শামি ২/৫)।
ভারত প্রথম ইনিংস: ৮৯.৪ ওভারে ৩৪৭/৯ (ডি.) (আগের দিন ১৭৪/৩) (মায়াঙ্ক ১৪, রোহিত ২১, পূজারা ৫৫, কোহলি ১৩৬, রাহানে ৫১, জাদেজা ১২, ঋদ্ধিমান ১৭*, অশ্বিন ৯, উমেশ ০, ইশান্ত ০, শামি ১০*; আল-আমিন ৩/৮৫, আবু জায়েদ ২/৭৭, ইবাদত ৩/৯১ ও তাইজুল ১/৮০)।
বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংস: ১৯৫/১০, ৪১.১ ওভার (সাদমান ০, ইমরুল ৫, মুমিনুল ০, মিঠুন ৬, মুশফিক ৭৪, মাহমুদউল্লাহ ৩৯ রিটায়ার্ড হার্ট, মিরাজ ১৫, তাইজুল ১১, এবাদত ০, আল-আমিন ২১ ও আবু জায়েদ ২*; উমেশ ৫/৫৩ ও ইশান্ত ৪/৫৬)।
ম্যাচসেরা: ইশান্ত শর্মা (ভারত)।
সিরিজসেরা: ইশান্ত শর্মা (ভারত)।
ম্যাচ ফল: ভারত ইনিংস ও ৪৬ রানে জয়ী।
সিরিজ ফল: দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ ২-০ ব্যবধানে জিতল ভারত।