নিজস্ব প্রতিবেদক: গত আড়াই বছরে দুর্নীতিবাজদের প্রায় সাড়ে ৪০০ কোটি টাকার সম্পদ বাজেয়াপ্ত করেছেন আদালত। একই সময় আদালতের নির্দেশে দুই হাজার ১০০ কোটি টাকার সম্পদ ক্রোক ও অবরুদ্ধ করা হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় এসব করা হয়েছে। গতকাল দুদক সচিব ড. মু. আনোয়ার হোসেন হওলাদার সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
দুদক সচিব বলেন, অবৈধপথে অর্জিত সম্পদ যাতে ব্যবহার করতে না পারে সে দিকে লক্ষ্য রাখা হচ্ছে। আড়াই বছরে দুর্নীতিবাজদের প্রায় সাড়ে ৪০০ কোটি টাকা দুদকের অনুরোধে আদালত বাজেয়াপ্ত করেছে।
দুদকের বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর আগস্ট পর্যন্ত দুই কোটি ৩৬ লাখ ৯৫ হাজার ৩২ টাকার সম্পত্তি, ২০২০ সালে তিন কোটি তিন লাখ ৬৯ হাজার টাকার সম্পত্তি ও ২০১৯ সালে ৪৩৬ কোটি ৮৮ লাখ ৯৫ হাজার ৩৩৪ টাকার সম্পদ রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত হয়।
এর মধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা আফজাল হোসেন ও তার স্ত্রীর দুটি বাড়ি ও একটি কমার্শিয়াল স্পেস, চট্টগ্রামের পটিয়া থানার সাবেক ওসি রেফায়েত উল্লাহ চৌধুরী একটি ফ্ল্যাট এবং কক্সবাজারের টেকনাফ থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রদীপ কুমার দাশের একটি ছয় তলা বাড়ি, একটি সেমিপাকা ঘর, দুটি গাড়ি ও একটি ফ্ল্যাট উল্লেখযোগ্য।
অন্যদিকে তিন বছরে ফ্রিজ ও ক্রোক সম্পত্তির পরিসংখ্যান পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২০১৯ সালে দেশে ১৪ দশমিক ৪৪ একর জমি, ১৭টি বাড়ি, ১৭টি ফ্ল্যাট, ৯টি প্লট, চারটি কমার্শিয়াল স্পেস, ৯টি গাড়ি ও চারটি স্থাপনা আদালতের আদেশে ক্রোক করা হয়। এছাড়া দুবাইয়ে দুটি কোম্পানির শেয়ারও ক্রোক করা হয়। একই বছর দেশে ২৮৮টি ব্যাংক হিসাব, ছয়টি বিও হিসাব ও ৩৬টি সঞ্চয়পত্র/বন্ড, জামানত; পলিসি/ইন্স্যুরেন্স ফ্রিজ করা হয়েছে। এছাড়া মালয়েশিয়ার পাঁচটি ব্যাংক হিসাবও ফ্রিজ করা হয়েছে। ২০১৯ সালে মোট ১১৫ কোটি ৫৬ লাখ ৩০ হাজার ২১১ টাকার স্থাবর সম্পদ ক্রোক করা হয়েছে। আর একই বছর ১১৮ কোটি ৫৯ লাখ ৬৫ হাজার ৮৭৬ টাকার অস্থাবর সম্পদ ফ্রিজ করা হয়েছে।
২০২০ সালে দেশে ২৫৬ দশমিক ৩৪৫ একর জমি, ৩৪টি বাড়ি ও ভবন, ৩৫টি ফ্ল্যাট, সাতটি কমার্শিয়াল স্পেস, ১৭টি গাড়ি ক্রোক করা হয়েছে। এসব স্থাবর সম্পদের মূল্য ১৮০ কোটি ১১ লাখ ৯১ হাজার ৭৪৬ টাকা। একই বছর এক হাজার ১১৮টি ব্যাংক হিসাব ও এফডিআর ফ্রিজ করা হয়। এসব অস্থাবর সম্পদের মূল্য বা ওইসব অ্যাকাউন্টে ১৫২ কোটি চার লাখ ৩৬ হাজার ৪৯৬ টাকা ছিল।
আর চলতি বছর সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশে ১২৭ দশমিক ৪৮৪ একর জমি, ৩০টি বাড়ি ও ভবন, ১৪টি ফ্ল্যাট, একটি প্লট ২৭টি গাড়ি ক্রোক করা হয়েছে। এসব স্থাবর সম্পদের মূল্য ৩২৪ কোটি ৫৯ লাখ ৮৬ হাজার ৫৯২ টাকা। একই সময় দেশে ৯১৬টি ব্যাংক হিসাব, ৫৬টি সঞ্চয়পত্র ও বন্ড/শেয়ার, তিনটি পিস্তল, সাতটি জাহাজ ফ্রিজ করা হয়েছে। এছাড়া দেশের বাইরে কানাডায় ১১টি, অস্ট্রেলিয়ায় ২৩টি, সিঙ্গাপুরে পাঁচটি ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করা হয়েছে। এসব অস্থাবর সম্পদের মূল্য এক হাজার ১৬৭ কোটি সাত লাখ ১৫ হাজার ৬০৮ টাকা।