নিজস্ব প্রতিবেদক: গ্রিনফিল্ড বা এখনও বাণিজ্যিক কার্যক্রমে আসেনি এমন কোম্পানিকেও পুঁজিবাজার থেকে মূলধন উত্তোলনের সুযোগ দিতে তৈরি করা হয়েছে এসএমই প্ল্যাটফর্ম। ২০১৯ সালের ৩০ এপ্রিল দেশের প্রধান শেয়ার মার্কেট ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এসএমই প্ল্যাটফর্ম উদ্বোধন করে। তবে এত দিনেও সেই মার্কেটে কোনো লেনদেন হয়নি। অবশেষে আড়াই বছর পর এসএমই প্ল্যাটফর্মে লেনদেন শুরু হলো।
ছয়টি কোম্পানি নিয়ে এসএমই প্ল্যাটফর্মে লেনদেন চালু করা হয়েছে। গতকাল রাজধানীর নিকুঞ্জে অবস্থিত ডিএসই ভবনে আয়োজিত ‘ইনোগুর্যাল ট্রেডিং অ্যাট ডিএসই এসএমই প্ল্যাটফর্ম’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থেকে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কমিশনার ড. মিজানুর রহমান।
ডিএসইর চেয়ারম্যান ইউনুসুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারিক আমিন ভূইয়া। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও ডিএসইর পরিচালক অধ্যাপক ড. মাসুদুর রহমান। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডিএসইর প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা সাইফুর রহমান মজুমদার।
এসএমই প্ল্যাটফর্মে লেনদেন চালুর ফলে শেয়ারবাজারে ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রতিষ্ঠান আসার পথ যেমন সুগম হলো, তেমনি বিনিয়োগকারীদের জন্য তৈরি হলো নতুন বিনিয়োগের জায়গা।
ডিএসইতে যে ছয়টি কোম্পানি নিয়ে এসএমই প্ল্যাটফর্মের যাত্রা করা হয়েছে, এগুলোর মধ্যে নতুন দুটো ও ওটিসি থেকে ফেরত চারটি কোম্পানি রয়েছে।
নতুন কোম্পানি দুটো হলো প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের আবেদন শেষে বিওতে শেয়ার পাঠানো মাস্টার ফিড লিমিটেড ও অরিজা অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। আর ওটিসি থেকে ফেরত চারটি কোম্পানি হলো অ্যাপেক্স ওয়েভিং অ্যান্ড ফিনিশিং মিলস, ওয়ান্ডারল্যান্ড টয়েস, হিমাদ্রি লিমিটেড ও বেঙ্গল বিস্কুট লিমিটেড। সম্প্রতি বিএসইসি ওটিসি মার্কেট ভেঙে দেয়ায় সেখানে থাকা কোম্পানিগুলোর মধ্যে এ চারটিকে ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে এসএমই প্ল্যাটফর্মে লেনদেনের সুযোগ দেয়া হচ্ছে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএসইসির কমিশনার অধ্যাপক মিজানুর রহমান দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের বিভিন্ন চিত্র তুলে ধরেন।
ডিএসইর এমডি তারেক আমিন ভূঁইয়া বলেন, এসএমই প্ল্যাটফর্ম পুরোপুরি চালু হলে দেশের শেয়ারবাজার নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ড. মো. মাসুদুর রহমান বলেন, ১৯৭১ সালের বাজেটের থেকে ২০২১ সালের বাজেটের আকার যেমন বেড়েছে, তেমনি দেশের কোম্পানিগুলোর মূলধনও বড় আকার ধারণ করেছে। এর মধ্যেও কিছু সংখ্যক কোম্পানির মূলধন তেমন বাড়েনি। ডিএসইর এ এসএমই প্ল্যাটফর্ম থেকে ওইসব ছোট মূলধনের কোম্পানিগুলো ভালো অবস্থান গড়ে নিতে পারবে বলে মনে করছি।
তিনি বলেন, এসএমই প্ল্যাটফর্মের কোম্পানিগুলোর বেশিরভাগই ব্যাংকের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক গড়তে পারে না। ফলে ব্যাংক থেকে তারা অর্থও সংগ্রহ করতে পারে না। ডিএসইর এসএমই প্ল্যাটফর্ম চালুর ফলে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা তাদের প্রতিষ্ঠানের মূলধন বাড়িয়ে দেশের উন্নয়নে অবদান রাখবে বলে মনে করছি। পাশাপাশি বিনিয়োগকারীরাও নতুন ও ভালো একটি বিনিয়োগ প্ল্যাটফর্ম পাবে।
ডিএসই চেয়ারম্যান ইউনুসুর রহমান বলেন, ক্যাপিটাল মার্কেটের অবস্থা ব্যাংকের থেকে ভালো অবস্থায় আছে, তবে সেটা আশানুরূপ নয়। গত বছরও আমাদের ক্যাপিটাল মার্কেট জিডিপির ১০ শতাংশ ছিল, কিন্তু সেই ধারা গত ছয় থেকে সাত মাসে অনেকটা বেড়ে ১৮ থেকে ১৯ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। আমরা জিডিপিতে আরও অবদান রাখতে কাজ করে যাচ্ছি। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর অর্থনীতিতে তাদের ক্যাপিটাল মার্কেট যতটা অবদান রাখছে, আমাদের দেশের ক্যাপিটাল মার্কেটও ভবিষতে জিডিপিতে অবদান রাখবে। আমরা এসএমই প্ল্যাটফর্ম চালু করেছি, যা আমাদের এ গতিকে বেগবান করবে বলে মনে করছি।
এর আগে গত ১০ জুন অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) দেশের ইতিহাসে এসএমই প্ল্যাটফর্মে প্রথম লেনদেনের মাধ্যমে ইতিহাস গড়া হয়। নিয়ালকো অ্যালয়ের লেনদেনের মাধ্যমে সিএসইতে এসএমই প্ল্যাটফর্মের যাত্রা শুরু হয়।