Print Date & Time : 18 June 2025 Wednesday 2:36 pm

আড়ালের মানবসেবীদের খুঁজে পুরস্কৃত করুন: প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক:‘দেশ ও মানুষের কল্যাণে যারা আড়ালে থেকে কাজ করে যাচ্ছেন, কখনও নিজেকে প্রকাশ্যে আনেন না, তাদের খুঁজে বের করে পুরস্কৃত করার তাগিদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘দেশের আনাচে-কানাচে অনেক মানুষ পড়ে আছেন, যারা মানুষের সেবা করেন নিজেদের উদ্যোগে। সেই ধরনের মানুষগুলোকে আমাদের খুঁজে বের করতে হবে এবং তাদেরকেও পুরস্কৃত করতে হবে।’ গতকাল ২০২২ সালের স্বাধীনতা পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এ বছরের বিজয়ীদের নিজ হাতে পুরস্কার তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

স্বাধীনতা পদক পাওয়া গুণীদের অভিনন্দন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যারা মানুষের কল্যাণে অবদান রেখে যাচ্ছেন, দেশের উন্নয়নে অবদান রেখে যাচ্ছেন। হয়তো তারা কখনও প্রচারে আসে না। তারা দৃষ্টিসীমার বাইরে থাকে। তাদের খুঁজে বের করে তাদের পুরস্কৃত করা উচিত এই কারণে যে, তাদের দেখে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজš§ও শিখবে, অন্যরাও শিখবে। মানুষের সেবা করার মধ্য দিয়ে, মানুষের কল্যাণে কাজ করার মধ্য দিয়ে যে আত্মতৃপ্তি পাওয়া যায়, হাজার ধনসম্পদ বানালেও সেটা হয় না, সেটা আসে না।’

স্বাধীনতার সুফল ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয়ার প্রত্যয় জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যে স্বাধীনতা আমরা অর্জন করেছি এই স্বাধীনতা আমাদের ধরে রেখে এর সুফলটা প্রত্যেক ঘরে ঘরে আমরা পৌঁছাব। এটাই হচ্ছে আমাদের লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এদেশকে আমরা এমনভাবে গড়ে তুলব, বাঙালি জাতিকে যেন আর কখনও বিশ্বের কারও কাছে মাথা নত করে চলতে না হয়। মাথা উঁচু করে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে গড়ে তুলব এবং মাথা উঁচু করে বিশ্ব দরবারে আমরা এগিয়ে যাব।’

দেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে সবার সহযোগিতা চেয়ে তিনি বলেন, ‘অনেক চড়াই-উৎরাই পার হয়ে আজকে উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় আমরা যে এগিয়ে যাচ্ছি, এ যাত্রা যেন অব্যাহত থাকে, সমগ্র জাতির কাছে, প্রজন্মের পর প্রজন্মের কাছে সেটাই আমার আহ্বান থাকবে, অনুরোধ থাকবে।’

‘শতভাগ বিদ্যুতায়নের’ মতো দেশে একদিন কোনো গৃহহীন মানুষও থাকবে না আশা করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘১৯৯৬ সালে এসে তার (বঙ্গবন্ধুর) পদাঙ্ক অনুসরণ করে ভূমিহীন-গৃহহীনদের ঘর বানানোর কাজ শুরু করি। এখন খুব অল্প লোকই বাকি আছে। ইনশাল্লাহ এমন দিন বাংলাদেশে আসবে যে একটি মানুষও ভূমিহীন থাকবে না, গৃহহীন থাকবে না। ঠিকানাবিহীন থাকবে না। সেটা আমরা করতে সক্ষম হব।’

স্বাবলম্বী হওয়ায় বাংলাদেশের ওপর দাতাদেশগুলোর প্রভাব কমেছে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘অনেকগুলো মেগা প্রজেক্ট আমরা করে যাচ্ছি। আমাদের যেকোনো উন্নয়ন প্রকল্প করতে গেলে আগে অনেকের কাছ থেকে অনেক পরামর্শ, অনেক দিকনির্দেশনা, অনেক কিছুই শুনতে হতো। আজকে আমরা অর্থনৈতিকভাবে এতদূর স্বাবলম্বী হয়েছি, আমাদের উন্নয়ন প্রকল্পের ৯০ ভাগই আমরা নিজস্ব অর্থায়নে করতে সক্ষমতা অর্জন করেছি। এটা যেন অব্যাহত থাকে সেটাই আমরা চাই।’

উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে সরকারের পরিকল্পনা ও কার্যক্রমের কথা অনুষ্ঠানে তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের ব-দ্বীপ, এই বাংলাদেশ। এই অঞ্চলের মানুষ যেন আগামীতে একটা সুরক্ষিত জীবন পায়, উন্নত জীবন পায় এবং তা প্রজন্মের পর প্রজন্ম যেন পেতে থাকে একটা সুন্দর জীবন, সুন্দর ভবিষ্যৎ, সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ প্রণয়ন করে তার কিছু আমরা বাস্তবায়নের কাজও শুরু করে দিয়েছি। আমি আশা করি, এরপর ভবিষ্যতে যারাই আসবে ক্ষমতায় তারা এই দিকটি লক্ষ্য রেখেই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। যার ফলে বাংলাদেশ আর কখনও মুখাপেক্ষী থাকবে না। বাংলাদেশ মর্যাদা নিয়ে মাথা উঁচু করে বিশ্ব দরবারে চলবে। উন্নত, সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে বাংলাদেশ গড়ে উঠবে সেটাই আমরা চাই। সে লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’

জাতীয় পর্যায়ে গৌরবোজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ৯ ব্যক্তি ও ২ প্রতিষ্ঠানকে ২০২২ সালের স্বাধীনতা পুরস্কার দেয়া হয় এ অনুষ্ঠানে।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শাপলা হলে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।