আতঙ্কিত না হলে দেশে দুর্ভিক্ষ হবে না : খাদ্যমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক: খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেছেন, দুর্ভিক্ষ আসছে এই আতঙ্কে যদি মানুষ ৩-৪ গুণ খাদ্য কিনে মজুত না করে, গ্যারান্টি দিয়ে বলছি, বাংলাদেশে দুর্ভিক্ষ আসবে না, আসবে না, আসবে না। তিনি বলেন, যে দেশের মাটিতে বীজ দিলেই ফসল হয়, আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে, ইরি ও বোরোর জন্য পর্যাপ্ত সার মজুত আছে, খাদ্যের মজুত থাকার পরেও আমদানি অব্যাহত রয়েছে, সেখানে দুর্ভিক্ষ প্রশ্নই আসে না।

গতকাল রোববার নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের কার্যালয়ে কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য রপ্তানির জন্য ‘হেলথ সার্টিফিকেট’ প্রদান অনুষ্ঠানে খাদ্যমন্ত্রী এমন মন্তব্য করেন।

খাদ্যমন্ত্রী বলেন, আগে খাদ্য রপ্তানি করতে গেলে বিদেশ থেকে কর্তৃপক্ষ এসে সনদ দিত। এখন থেকে আর সেটির প্রয়োজন হবে না। বাংলাদেশই আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী সনদ দেবে। এতে করে সারাবিশ্ব জানবে, বাংলাদেশে নিরাপদ খাদ্য পাওয়া যায়। যার ফলস্বরূপ, রপ্তানি আরও ত্বরান্বিত হবে।

বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ (বিএফএসএ) পণ্যের এ স্বাস্থ্য সনদ প্রদান করে। প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে দুটি প্রতিষ্ঠানকে পণ্যের স্বাস্থ্য সনদ দেয়া হয়। এগুলো হলো, ইএসএল বাংলাদেশ লিমিটেড ও ট্রাস্ট অ্যান্ড ট্রেড এম ইমপেক্স।

উদাহরণ হিসেবে মন্ত্রী বলেন, গত সপ্তাহে ডাক্তারের চেম্বারে এক লোক চালসহ খাদ্যদ্রব্য মজুত করে রাখতে সবাইকে পরামর্শ দিচ্ছেন। ওই লোক জানান, তিনি দেড় বছরের জন্য চাল-ডালসহ নিত্যপণ্য মজুত করে রেখেছেন। তার মতো আতঙ্কিত না হয়ে সবাই খাদ্যদ্রব্য মজুত না করে তাহলে দেশে খাদ্য সংকট হবে না। এছাড়া দেশে দুর্ভিক্ষ হওয়ারও কোনো আশঙ্কা নেই।

পণ্যের স্বাস্থ্য সনদ প্রসঙ্গে সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, আমাদের সার্টিফিকেট দিয়ে প্রমাণ করতে হচ্ছে রপ্তানির জন্য নিরাপদ খাদ্য দরকার। এখন আমাদের সবার উচিত সচেতন হওয়া। আমরা যদি সব খাদ্য নিরাপদ করতে পারি তাহলে এত সার্টিফিকেটের প্রয়োজন হবে না। নিজেদের সুস্বাস্থ্য ও খাদ্যদ্রব্য রপ্তানির জন্য নিরাপদ খাদ্যের একটা অবস্থা তৈরি করতে হবে। যাতে সার্টিফিকেট নয়, আমাদের নাম শুনলেই বিদেশিরা যেন খাদ্যদ্রব্য আমদানিতে আগ্রহী হন।

তিনি বলেন, আমাদের উচিত যখন একটা শিশু জš§ হয় তখনই নামিদামি ব্র্যান্ডের গুঁড়াদুধ না খাইয়ে অন্তত প্রথম ছয় মাস শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো। বিপরীতে বাজারের গুঁড়াদুধ খাওয়ালে ৪-৫ বছর বয়সেই শিশু নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হতে পারে। এভাবে সব ক্ষেত্রেই আমাদের নিজেদের আগে সচেতন হতে হবে।

তিনি আরও বলেন, এত দিন খাদ্যদ্রব্য রপ্তানির জন্য রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান দেশ-বিদেশের ল্যাব থেকে পণ্যের মান পরীক্ষা করে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) কাছে দিত। ওইসব পরীক্ষা নিরীক্ষার সব কাজ এখন থেকে বিএফএসএ নিজেই করবে। এতে একদিকে রপ্তানিকারকদের ভোগান্তি কমবে, অন্যদিকে পণ্যের মানের বিষয়েও কম্প্রোমাইজ করার সুযোগ থাকবে না। 

খাদ্য সচিব মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, আন্তঃমন্ত্রণালয়ের কাজের যাতে ওভারল্যাপিং না হয়, তা আমরা বসে সমাধানের চেষ্টা করব। তিনি খাদ্যদ্রব্য রপ্তানির ক্ষেত্রে সর্বজনস্বীকৃত স্বাস্থ্য সনদ প্রদান করার জন্য আস্থা তৈরির ওপর জোর দেন। পাশাপাশি বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ নিজেদের দায়িত্ব যথাযথ ও নির্ভুলভাবে প্রদান করবে বলে আশা প্রকাশ করেন।

বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল কাইউম সরকার বলেন, খাদ্যদ্রব্য রপ্তানির ক্ষেত্রে বিএফএসএ’র দেয়া স্বাস্থ্য সনদ দেশের সামগ্রিক রপ্তানি বৃদ্ধি করবে।

কর্মশালায় নিরাপদ খাদ্য আইন ও বিধি সম্পর্কে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিএফএসএর সদস্য মঞ্জুর মোর্শেদ আহমদ। তাতে নিরাপদ খাদ্য আইন-২০১৩ এর বিভিন্ন ধারা ও অধ্যায়, খাদ্য দূষণকারী, সংযোজন দ্রব্য ব্যবহার, স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ সংরক্ষণ, খাদ্যস্পর্শক, ব্যবসায়ীর বাধ্যবাধকতা, দূষণ, টক্সিন ও ক্ষতিকর অবশিষ্টাংশ, ট্রান্স ফ্যাটি এসিড নিয়ন্ত্রণ ও বিষাক্ত পদার্থযুক্ত খাদ্যদ্রব্য প্রত্যাহার বিষয়ক প্রবিধানমালার বিষয়ে আলোচনা করা হয়।

কর্মশালায় জানানো হয়, বিশ্বে প্রতি বছর ১০ জনে একজন খাদ্যজনিত অসুস্থতায় ভোগেন এবং ৪ লাখ ২০ হাজার জন মারা যান। প্রতি তিনজনের মধ্যে একজন শিশু মারা যায় খাদ্যজনিত অসুস্থতায়। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ১৫ কোটি মানুষ অসুস্থ হচ্ছেন এই কারণে। যার মধ্যে মারা যান ১ লাখ ৭৫ হাজার, যার মধ্যে ৫০ হাজার শিশু রয়েছে। আমদানিকারক দেশের চাহিদা অনুযায়ী রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান পণ্যের ল্যাব টেস্ট রিপোর্ট আনলে ইপিবি তা দেখে সার্টিফিকেট ইস্যু করত। যেসব রপ্তানিকারকের সার্টিফিকেট দরকার, বন্দর থেকে তাদের পণ্যের নমুনা এনে পরীক্ষা করে সার্টিফিকেট প্রদানের সবগুলো কাজই করবে বিএফএসএ। তবে ল্যাব টেস্টে কোনো পণ্যে হেলথ হ্যাজার্ড পাওয়া গেলে তা আর রপ্তানির অনুমতি দেয়া হবে না।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০