(১৯০৭-১৯৯১) আইনজীবী ও রাজনীতিক। ঢাকার ধামরাই উপজেলার বালিয়া গ্রামে ১৯০৭ সালের ১ জুলাই তার জন্ম। তিনি ঢাকার পগোজ স্কুল থেকে ১৯২৪ সালে ম্যাট্রিক এবং জগন্নাথ কলেজ থেকে ১৯২৭ সালে এফএ পাস করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৩০ সালে অর্থনীতিতে বিএ (অনার্স) পাস করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৩৬ সালে বিএল ডিগ্রি লাভ করে তিনি ১৯৩৭ সালে ঢাকা জেলা কোর্টে আইনব্যবসা শুরু করেন। আতাউর রহমান ১৯৪২ সালে মুন্সেফ পদে চাকরি গ্রহণ করেন, কিন্তু দু’বছর পর চাকরি ছেড়ে আবার তিনি ওকালতি শুরু করেন।
প্রজা সমিতিতে যোগদানের মধ্য দিয়ে আতাউর রহমান খানের রাজনৈতিক জীবনের সূচনা। ১৯৩৪-৩৫ সালে তিনি ঢাকা জেলা প্রজা সমিতির সম্পাদক ছিলেন। ১৯৪৪ সালে তিনি মুসলিম লীগে যোগ দেন। আতাউর রহমান খান আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠনে (১৯৪৯) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
তিনি সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদের সদস্য হিসেবে ভাষা আন্দোলন সংগঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন এবং পরে ১৯৫২ সালের মার্চ মাসে পুনর্গঠিত কর্মপরিষদের আহ্বায়ক নির্বাচিত হন।
আতাউর রহমান খান ১৯৫৪ সালের নির্বাচনের প্রাক্কালে গঠিত যুক্তফ্রন্টের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন (১৯৫৩-৫৫) এবং যুক্তফ্রন্ট মনোনীত প্রার্থী হিসেবে পূর্ববঙ্গ আইন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের প্রাদেশিক মন্ত্রিসভায় বেসামরিক সরবরাহ মন্ত্রী ছিলেন (১৯৫৪)। ১৯৫৫ সালে তিনি পাকিস্তান গণপরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৫৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তিনি পূর্ব পাকিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী হন এবং ১৯৫৮ সালে দেশে সামরিক শাসন জারির আগ পর্যন্ত এ পদে বহাল ছিলেন। ১৯৬০ সালে সামরিক সরকার কর্তৃক তার ওপর এবডো আইন প্রয়োগ করা হয়। ১৯৬৯ সালে তিনি ঢাকা হাইকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এবং ১৯৭০ সালে বার কাউন্সিলের সদস্য নির্বাচিত হন। আতাউর রহমান খান ১৯৬৯ সালে জাতীয় লীগ নামে রাজনৈতিক দল গঠন করেন এবং দলের সভাপতি নির্বাচিত হন।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে আতাউর রহমান খান পাকবাহিনী কর্তৃক গ্রেপ্তার হন এবং পাঁচ মাস কারাভোগের পর সেপ্টেম্বর মাসে মুক্তি লাভ করেন। ১৯৭৩ সালে তিনি জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৫ সালে তিনি বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগে (বাকশাল) যোগ দেন এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নিযুক্ত হন। বাকশাল বিলুপ্তির পর আতাউর রহমান ১৯৭৬ সালে জাতীয় লীগ পুনরুজ্জীবিত করেন। ১৯৭৯ সালে তিনি জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। পরবর্তী সময়ে তিনি জেনারেল এরশাদের মন্ত্রিসভায় যোগ দেন এবং ১৯৮৪ সালের মার্চ মাসে প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হন। ১৯৮৫ সালের ১ জানুয়ারি পর্যন্ত তিনি এ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন।
আতাউর রহমান খান রচিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ‘ওজারতির দুই বছর’, ‘স্বৈরাচারের দশ বছর’, ‘প্রধানমন্ত্রিত্বের নয় মাস’ ও ‘অবরুদ্ধ নয় মাস’। ১৯৯১ সালের ৭ ডিসেম্বর তিনি ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।