নিজস্ব প্রতিবেদক: কর ফাঁকি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলায় হোটেল লো মেরিডিয়েনের মালিক আমিন আহমেদের জামিন আবেদন নাচক করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। গতকাল বুধবার ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মোহাম্মদ আসসামস জগলুল হোসেনের আদালতে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এহসানুল হক সমাজীর মাধ্যমে আত্মসমর্পণ ও জামিন আবেদন করেন আমিন আহমেদ। আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারক বিকালে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বলে আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী জানিয়েছেন।
ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় জমি ক্রয় ও প্রকৃত মূল্য গোপন করতে আমিন আহমেদ বেসিক ব্যাংকের শেখ আব্দুল হাই বাচ্চুকে সহযোগিতা করে অর্থ আত্মসাৎ ও কর ফাঁকি দিয়েছেন বলে জানান দুদকের আইনজীবী রফিকুল ইসলাম জুয়েল। অভিযুক্তের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী শুনানিতে বলেন, আমিন আহমেদ তফসিল-বর্ণিত সম্পত্তি বিক্রির বিপরীতে সমুদয় কর এ মামলা দায়েরের আগেই পরিশোধ করেছেন। সুতরাং তার বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ আদৌ ধোপে টেকে না। ভিত্তিহীন এ মামলায় এজন্য তিনি জামিন পাওয়ার অধিকারী।
বিচারক অন্য অভিযুক্তদের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অপর অভিযুক্তদের মামলা কেন ঝুলে আছে, কেন সুরাহা করা হচ্ছে না, আমি জানি না।’ রাষ্ট্রপক্ষ থেকে তার এ বক্তব্যের বিরোধিতা করে আমিন আহমেদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করতে আদালতে বক্তব্য রাখা হয়। পরে আসামিকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বিচারক।
রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট বাজারের ৩০ দশমিক ২৫ কাঠা জমি ক্রয় দেখিয়ে প্রায় ৯৫ কোটি টাকা গোপন করার চেষ্টা এবং সাড়ে আট কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগে বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আব্দুল হাই বাচ্চু এবং হোটেল লো মেরিডিয়ানের মালিক আমিন আহমেদসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ২০২৩ সালের ৩ অক্টোবর এই মামলা দায়ের করেন দুদকের উপ-পরিচালক নুরুল হুদা। মামলার অন্য আসামিরা হলেন শেখ আব্দুল হাই বাচ্চুর স্ত্রী শিরিন আক্তার, তার ভাই শেখ শাহরিয়ার পান্না, বাচ্চুর ছেলে শেখ রাফা হাই ও শেখ ছাবিদ হাই অনিক।
মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামি শেখ আব্দুল হাই বাচ্চু ২০১২ সালের ৮ জুলাই ক্যান্টনমেন্ট বাজার এলাকার ৬ নম্বর প্লটের ৩০ দশমিক ২৫ কাঠা জমি ১১০ কোটি টাকায় কিনতে আমিন আহমেদের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তিপত্র করেন। চুক্তি করা জমির মূল্য ১১০ কোটি টাকা এবং চুক্তিপত্র স্বাক্ষরের সময় পরিশোধিত অর্থ ১০ কোটি টাকা। চুক্তিপত্র অনুযায়ী দুটি দলিল রেজিস্ট্রি করা হয়, যার মধ্যে ২০১২ সালের ১৬ অক্টোবর প্রথম দলিলে ১৮ কাঠা জমির দাম ৯ কোটি টাকা উল্লেখ করা হয়েছে, যেখানে গ্রহীতা শেখ আব্দুল হাই বাচ্চু, শেখ শাহরিয়ার পান্না ও মিসেস শিরিন আক্তার।
অন্যদিকে দ্বিতীয় দলিলে একই বছরে ১২ দশমিক ২৫ কাঠার দাম ছয় কোটি ২৫ লাখ টাকা ধরা হয়েছে, যেখানে গ্রহীতা হলেন শেখ ছাবিদ হাই অনিক ও শেখ রাফা হাই। অর্থাৎ জমির মোট রেজিস্ট্রেশন মূল্য ধরা হয়েছে ১৫ কোটি ২৫ লাখ টাকা। অর্থাৎ রেজিস্ট্রেশনে মূল্য ৯৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা কম দেখিয়ে অবৈধ আয় গোপন করার চেষ্টা করেন আমিন আহমেদ। এছাড়া জমির মূল্য কম দেখিয়ে সরকারের আট কোটি ৫২ লাখ ৭৫ হাজার টাকার রাজস্বও ফাঁকি দিয়েছেন বলে মামলায় বলা হয়েছে।
মামলায় আরও অভিযোগ করা হয়েছে, জমি বিক্রি ও প্রকৃত মূল্য গোপন করতে শেখ আব্দুল হাই বাচ্চুকে সহযোগিতা করেছেন আমিন আহমেদ। আমিন আহমেদ ১৩৪টি পে-অর্ডারের মাধ্যমে ৭৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা এবং নগদে ৩১ কোটি ৫০ লাখ টাকা গ্রহণ করেছেন। অন্যদিকে তাদের আয়কর নথিতে জমির জন্য মূল্য প্রদর্শন করেছেন ২৪ কোটি ৬৪ লাখ ৩৮ হাজার ৪৫৪ টাকা। অর্থাৎ শেখ আব্দুল হাই বাচ্চুর আয়-ব্যয় এবং প্রকৃত সম্পদের মধ্যে কোনো সামঞ্জস্য পাওয়া যায়নি।
তিনি বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান থাকার সময় ক্ষমতার অপব্যবহার করে অস্তিত্বহীন ও নামসর্বস্ব বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ভুয়া ঋণ মঞ্জুর করে আত্মসাৎ করা অর্থ হস্তান্তর, রূপান্তর ও ছদ্মাবরণের মাধ্যমে গোপন করেছেন। বাচ্চুর অবৈধ অর্থের বৈধতা দিতে সরাসরি সহায়তা করেছেন আসামি আমিন আহমেদ।
মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২-এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।