প্রতিটি প্রাণীকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। যত সুরক্ষিত জায়গায় থাকুক না কেন মৃত্যু তাকে গ্রাস করবেই। নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও মানুষ হরেক রকম স্বপ্ন বুনে। কল্পনার রাজ্যে বিচরণ করে, নিজেকে নিয়ে ভাবনার অন্ত নেই। মাঝে মাঝে সব স্বপ্ন ধূলিসাৎ করে, পৃথিবীর মায়াজাল ছিন্ন করে চলে যাওয়ার মতো কুৎসিত সিদ্ধান্ত নিতেও দ্বিধাবোধ করে না মানুষ।
আত্মহত্যা কখনও সুষ্ঠু ও সুন্দর সমাধান হতে পারে না। বরং সমস্যার কাছে মাথা নত করে নেয়ার একটা ব্যর্থ প্রক্রিয়া। একজন বীর পুরুষ কখন আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে পারে না। কাপুরুষরা বার বার হেরে যায়, শির নত করে বারংবার, অল্পতেই বিদ্ধ হয়ে যায়, আত্মহত্যায়ই সমাধান খোঁজে। মানুষের জীবনটাই একটা পরিপূর্ণ যুদ্ধক্ষেত্র। প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করতে হয় বুক চিতিয়ে, নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ নিতে হয়, স্বাগতম জানাতে হয়। জীবনযুদ্ধে টিকে থাকার মধ্যেই জীবনের প্রকৃত স্বাদ আস্বাদন করা সম্ভব। ইসলাম কখনও আত্মহত্যার মতো কোনো অপরাধকেই সমর্থন করে না। এহেন কর্ম থেকে বিরত থাকার গুরুত্ব প্রদান করে আল্লাহ পবিত্র কোরআনে একাধিক বার ঘোষণা করেনÑ ১. ‘তোমরা নিজেদের হত্যা করোনা; নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের প্রতি ক্ষমাশীল।’ (সুরা নিসা : আয়াত ২৯) ২. ‘তোমরা নিজ হাতে নিজেকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিও না।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৯৬) আত্মহত্যার শাস্তির ধরণ সম্পর্কে হাদিসের বর্ণনায় এসেছে হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করবে, সে জাহান্নামে (অনুরূপভাবে) নিজেকে ফাঁস লাগাতে থাকবে আর যে ব্যক্তি বর্শার আঘাতে আত্মহত্যা করবে, সে জাহান্নামে (অনুরূপভাবে) বর্শা বিদ্ধ হতে থাকবে।’ (বুখারি) তবুও মানুষ আত্মহত্যার মতো জঘন্য পথ বেছে নিতে দ্বিধাবোধ করে না। বিগত বছরগুলোতে আত্মহত্যার মিছিল বেড়েই চলেছে। কোনো ক্রমেই যেন এ হার কমছে। সম্প্রতি বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আঁচল ফাউন্ডেশন এক সমীক্ষা প্রকাশ করে। সমীক্ষার তথ্য, চলতি বছর (আগস্ট মাস পর্যন্ত) সারাদেশে ৩৬১ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। এতে ছাত্রীর সংখ্যা বেশি, ২১৪ জন। আর ছাত্র ছিল ১৪৭ জন। বিষয়টা ব্যথিত করার মতো এক বছরেও আত্মহত্যা বন্ধে বড় ধরনের পরিবর্তন সাধন হয়নি। গত বছর এবং এ বছর চলমান প্রতিবেদন বলে দেয় বন্ধ হওয়ার বদলে আত্মহত্যা করার প্রবণতা কতটা তীব্র থেকে তীব্রতা হচ্ছে, দিনে দিনে কতটা ভয়াবহ পরিস্থিতির দিকে ঝুঁকে যাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। গত বছরের একই সময়ে আত্মহত্যা করেছিল ৩৬৪ জন শিক্ষার্থী। প্রতি মাসে গড়ে প্রায় ৪৫ দশমিক ১৩ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করে। যেখানে স্কুল শিক্ষার্থী ১৬৯ জন, কলেজের ৯৬ জন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬৬ জন এবং মাদ্রাসা শিক্ষার্থী রয়েছেন ৩০ জন। বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, আত্মহত্যার পেছনে বেশ কিছু কারণ লুকিয়ে আছে। পরীক্ষার মধ্যে কাক্সিক্ষত ফলাফল করতে না পারা এর একটি অন্যতম কারণ। ফলাফলের কারণে আত্মতৃপ্তি লাভ করতে না পারায় এবং কে কী ভাববে এসব কারণেও কেউ কেউ এ দিকে ঝুঁকে। আত্মহত্যার আরেকটি বড় কারণ হলো সেশনজট। কভিড মহামারিকালে শিক্ষার্থীদের জীবন থেকে হারিয়েছে দুটো মূল্যবান বছর। কোনোভাবেই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে না পারা, অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কথা ভেবে হতাশার মাঝে ডুবে যায় অনেক শিক্ষার্থী। আর অনেকেই ভাবে অন্ধকার ও অনিশ্চিত জীবন থেকে মুক্তির পথ হয়তো আত্মহত্যা। কিন্তু এটি সমাধান নয়। বেঁচে থেকেই সব সমস্যা কাঠিয়ে ওঠার যোগ্য হয়ে উঠতে হবে শিক্ষার্থীদের । জুবায়েদ মোস্তফাশিক্ষার্থী, লোক প্রশাসন বিভাগ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ