আদনান হারুনকে শুল্ক গোয়েন্দা কার্যালয়ে হাজির হতেই হবে

শেয়ার বিজ ডেস্ক: বনানীর রেইনট্রি হোটেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এইচএম আদনান হারুনকে শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগে তলবের নোটিস হাইকোর্ট স্থগিত করার সাড়ে তিন ঘণ্টার মাথায় সুপ্রিমকোর্টের চেম্বার আদালতে তা আটকে গেছে। তাই আদনান হারুনকে অভিযোগের ব্যাখ্যা দিতে শুল্ক গোয়েন্দা কার্যালয়ে যেতেই হবে।

এর আগে ঝালকাঠির সরকারদলীয় সংসদ সদস্য বজলুল হক হারুনের ছেলে আদনান হারুন শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের ওই নোটিসের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। তার আবেদন শুনে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ সোমবার নোটিসের কার্যকারিতা এক মাসের জন্য স্থগিত করে দেন। পাশাপাশি ওই নোটিস কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে নাÑতা জানতে চেয়ে রুলও জারি করা হয়।

হাইকোর্টের ওই আদেশ পাওয়ার পরপরই তা আটকাতে চেম্বার আদালতে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। বিকালে শুনানি নিয়ে চেম্বার আদালতের বিচারপতি মির্জা হোসেন হায়দার হাইকোর্টের ওই আদেশ স্থগিত করে দেন।

চেম্বার আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। তিনি বলেন, ‘চেম্বার আদালত ছয় সপ্তাহের জন্য হাইকোর্টের আদেশটি স্থগিত করেছেন। তাই নোটিসের নির্দেশনা অনুযায়ী আদনান হারুনকে আজ (মঙ্গলবার) শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত বিভাগের কাকরাইল কার্যালয়ে হাজির হয়ে অবৈধভাবে মদ রাখা এবং ভ্যাট ও শুল্ক ফাঁকির অভিযোগের ব্যাখ্যা দিতে হবে।’

আপন জুয়েলার্সের অন্যতম মালিক দিলদারের ছেলে সাফাত আহমেদ ও তার বন্ধুরা গত ২৮ মার্চ বনানীর রেইনট্রি হোটেলে জš§দিনের দাওয়াতে ডেকে নিয়ে দুই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীকে ধর্ষণ করেন বলে গত ৬ মে থানায় মামলা হয়। দিলদার ও তার ভাইদের বিরুদ্ধে সোনা চোরাচালানের অভিযোগ থাকায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নির্দেশে একটি অনুসন্ধান কমিটি করে তদন্ত শুরু করে শুল্ক গোয়েন্দা অধিদফতর। এর অংশ হিসেবে গত ১৪ ও ১৫ মে ঢাকায় আপন জুয়েলার্সের পাঁচটি শাখায় অভিযান চালিয়ে সাড়ে ১৩ মণ স্বর্ণালঙ্কার ও ৪২৭ গ্রাম হীরার গয়না ‘আটক’ করা হয়, যার মোট দাম ১৭৯ কোটি টাকা। ওই সময়ই বনানীর হোটেল রেইনট্রিতে অভিযান চালান শুল্ক গোয়েন্দারা। চার তারকা ওই হোটেলের বিভিন্ন কক্ষ তল্লাশি করে ১০ বোতল বিদেশি মদ ও নথিপত্র জব্দ করা হয়। বারের লাইসেন্স ছাড়াই ওই হোটেলে মদ রাখা হয়েছিল। এছাড়া গত জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময় ভ্যাট নিবন্ধন নিলেও কোনো অর্থ পরিশোধ না করে ওই হোটেল কর্তৃপক্ষ আট লাখ ১৫ হাজার টাকা ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে বলেও তথ্য পেয়েছে শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ।

এদিকে গত ১৪ মে ‘ব্যাখ্যাহীনভাবে’ সোনা ও হীরার গয়না মজুতের অভিযোগে আপন জুয়েলার্স এবং অবৈধভাবে মদ রাখার অভিযোগে বনানীর রেইনট্রি হোটেলের মালিকদের তলব করা হয়। সে অনুযায়ী আপন জুয়েলার্সের তিন মালিক দিলদার ও তার দুই ভাই গুলজার আহমেদ এবং আজাদ আহমেদ গত ১৭ মে শুল্ক গোয়েন্দা কার্যালয়ে হাজির হলে তাদের পাঁচ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। কিন্তু তারা আটক গয়নার কোনো বৈধ কাগজপত্র দেখাতে না পারায় ২৩ মে (মঙ্গলবার) আবারও হাজির হতে বলা হয়। তবে রেইনট্রির এমডি আদনান হারুন সেদিন অসুস্থতার কথা বলে নিজে না গিয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে সময়ের আবেদন পাঠান।

শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের মহাপরিচালক মইনুল খান সেদিন বলেন, ‘রেইনট্রির ব্যবস্থাপনা পরিচালক অসুস্থতার কথা বলে এখানে আসেননি। কিন্তু তার অসুস্থতার কোনো কাগজপত্রও আইনজীবীরা দেখাতে পারেননি। আগামী ২৩ মে বেলা ১১টায় তাদের আসতে বলা হয়েছে। সেদিন না এলে শুল্ক গোয়েন্দা দফতর একতরফাভাবেই শুনানির নিষ্পত্তি করবে।’

উল্লেখ্য, বনানীতে আবাসিক এলাকায় কে ব্লকের ২৭ নম্বর সড়কের ৪৯ নম্বর বাড়িতে চারতারকা ওই হোটেলটির মালিক আল-হুমায়রা গ্রুপ। ঝালকাঠি-১ আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য বজলুল হক হারুন ওই গ্রুপের চেয়ারম্যান। তার ছেলে এইচএম আদনান হারুন ওই হোটেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তবে আদনান হারুনের ভাই মাহির হারুনই হোটেলটি দেখাশোনা করেন। মাহিরের বন্ধু পরিচয়েই সাফাত ধর্ষণের ঘটনার দিন ওই হোটেলে উঠেছিলেন বলে পুলিশকে জানিয়েছেন হোটেলকর্মীরা। মামলার আসামিদের মধ্যে সাফাত, তার বন্ধু সাদমান সাকিফ, সাফাতের গাড়িচালক বিল্লাল হোসেন ও দেহরক্ষী রহমত আলীও ইতোমধ্যে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। মামলার আরেক আসামি নাঈম আশরাফকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।

 

 

 

Add Comment

Click here to post a comment

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০