Print Date & Time : 19 June 2025 Thursday 4:51 am

আদানিকে নিয়ে ভারতে তদন্ত কার্যক্রম স্থগিত

শেয়ার বিজ ডেস্ক: ভারতে আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে দেশটির পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সেবির তদন্ত কার্যক্রম স্থগিত। এই গোষ্ঠীটিকে নিয়ে ভারতে রাজনৈতিক জটিলতা বাড়ছে। প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস তাদের বিরুদ্ধে কয়েক বছর ধরে নানা অনিয়মের অভিযোগ করে আসছে। খবর: ইকোনমিক টাইমস।
সম্প্রতি কংগ্রেস আদানি গোষ্ঠীর মরিশাসে অবস্থতি দুটি কোম্পানির উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। হিনডেনবার্গ রিসার্চ নামে যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিনিয়োগ গবেষণা সংস্থা এবং শর্ট-সেলিং ফার্মের অভিযোগের পর ভারতের সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে তদন্ত করে সেবি। কিন্তু কংগ্রেসের বক্তব্য, তদন্ত নিয়ে এখন খোদ বাজার নিয়ন্ত্রকদেরই অনেক কিছুর জবাব দিতে হবে। সব অভিযোগ তদন্তের কাজ দুই মাসের মধ্যে শেষ করে সুপ্রিম কোর্টের কাছে সেবির প্রতিবেদন দেয়ার কথা ছিল।

কিন্তু এরপর ১৮ মাস পার হয়ে গেছে। গত মাসে হিনডেনবার্গ রিসার্চের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরাসরি সেবি চেয়ারপারসন মাধবী পুরি বুচও আদানি গোষ্ঠীর গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত। এ কারণেই ১৮ মাসেও তারা আদানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি। গোপন নথির উল্লেখ করে হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ দাবি করেছে, আদানি কেলেঙ্কারিতে ব্যবহƒত অফশোর সংস্থাগুলোয় সেবি প্রধানের অংশীদারিত্ব ছিল। হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ তার অভিযোগে বলেছে, এপ্রিল ২০১৭ থেকে মার্চ ২০২২ পর্যন্ত মাধবী পুরি বুচ সেবির সদস্য ও চেয়ারপারসন ছিলেন।

মরিশাসের দুটি বিনিয়োগকারীর কোম্পানির উদ্দেশ্য নিয়ে কংগ্রেসের দাবি, বেআইনিভাবে আদানি গোষ্ঠীর শেয়ার কিনে দাম বাড়ানোর পেছনে এই দুটি কোম্পানির ভূমিকা রয়েছে। একই অভিযোগ হিনডেনবার্গ রিসার্চও করেছিল। সেবির নতুন বিধিতে বলা হয়েছে, ভারতের পুঁজিবাজারে পুঁজি বিনিয়োগের কারণে উপকৃত হলে সে বিষয়ে সেবিকে তথ্য দিতে হবে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের। ঘুরপথে পুঁজিবাজারে বেনামে বিনিয়োগ করা হচ্ছে কি না, তা খতিয়ে দেখতেই সেবির নতুন এই পদক্ষেপ। ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে হিনডেনবার্গ রিসার্চের প্রতিবেদনে মরিশাসের দুটি বিনিয়োগকারী কোম্পানির কথা বলা হয়েছিল। অভিযোগ ছিল, সেবির বিদেশি বিনিয়োগ বিধি লঙ্ঘন করে আদানি গোষ্ঠীর টাকা ঘুরপথে তাদেরই কোম্পানিতে বিনিয়োগ করা হয়। কিন্তু সম্প্রতি সেবি বিদেশি বিনিয়োগসংক্রান্ত নতুন বিধি প্রণয়নের পর তা থেকে ছাড় পেতে সিকিউরিটি বাজারের আপিল ট্রাইব্যুনালের (স্যাট) কাছে আবেদন জানিয়েছে সেই দুটি কোম্পানি। সে কারণে সন্দেহ আরও ঘনীভূত হচ্ছে। ভারতের বিরোধী দল কংগ্রেস বিষয়টি যথাযথভাবে আমলে নিয়েছে বলেই বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক জয়রাম রমেশ বলেন, মোদানি (মোদি ও আদানি) মহা কেলেঙ্কারিতে মরিশাসের দুটি বিনিয়োগকারী কোম্পানির নাম এসেছে। বিদেশি বিনিয়োগ-সংক্রান্ত সেবির নতুন বিধান মান্য করার সময়সীমা দেয়া হয়েছে ৯ সেপ্টেম্বর। তার আগে সেবির নতুন বিদেশি বিনিয়োগ বিধি মানা থেকে রেহাই চেয়ে স্যাটের কাছে আবেদন জানিয়েছে তারা। এ রকম বিধান আগে না থাকায় কোম্পানিগুলো তার সুবিধা নিয়েছিল।

সম্প্রতি কংগ্রেস আদানি গোষ্ঠীর বিষয়ে বেশ সরব হয়েছে। তাদের অভিযোগ, আদানি গোষ্ঠীর কারণে বিশ্বে ভারতের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের সঙ্গে আদানি গোষ্ঠীর বিদ্যুৎ কেনার চুক্তির কথা বলেছে তারা। সেই সঙ্গে কেনিয়ার নাইরোবিতে এক বিমানবন্দর অধিগ্রহণের প্রস্তাব দিয়েছে আদানি গোষ্ঠী; তা নিয়েও কেনিয়ায় অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। এরই মধ্যে চীনে সাবসিডিয়ারি কোম্পানি খুলেছে আদানি গোষ্ঠী। পুঁজিবাজারকে আদানি এন্টারপ্রাইজেস জানিয়েছে, সিঙ্গাপুরে তাদের অধীন একটি সংস্থার মাধ্যমে চীনের সাংহাইয়ে আদানি এনার্জি রিসোর্সেস নামে কোম্পানি গঠন করেছে তারা।

উল্লেখ্য, সিঙ্গাপুরে আগোরা পার্টনার্স নামে একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানে সেবি প্রধানের ১০০ শতাংশ শেয়ার ছিল। ২০২২ সালের ১৬ মার্চ সেবি চেয়ারপারসন হিসেবে নিয়োগের দুই সপ্তাহ আগে মাধবী পুরি বুচ তার স্বামী ধাওয়াল বুচের নামে ওই কোম্পানিতে তার শেয়ার স্থানান্তর করেছিলেন।