আদানি পরিবারের সদস্যরাও প্রতারণায় জড়িত

শেয়ার বিজ ডেস্ক: হিনডেনবার্গ রিসার্চের গবেষণায় শুধু গৌতম আদানি বা তার সংস্থা নয়, তার পরিবারের সদস্যরাও যে পুঁজিবাজারে প্রতারণায় ও হীরা নিয়ে দুর্নীতিতে জড়িত, তা উঠে এসেছে। আদানি পরিবারের একাধিক সদস্য জালিয়াতিতে জড়িত। খবর: দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল।

যুক্তরাষ্ট্রের ছোট বিনিয়োগ কোম্পানি হিনডেনবার্গ দেখিয়েছে, আদানি পরিবারের কোন কোন সদস্য পুঁজিবাজার দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। তাদের তালিকায় রয়েছেন গৌতম আদানির ভাই ও শ্যালকসহ অনেকে। অভিযোগ রয়েছে, একাধিক দুর্নীতিতে জড়িয়ে রয়েছেন আদানি পরিবারের এ সদস্যরা।

হিনডেনবার্গের ১০৬ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে বিনোদ আদানির (গৌতম আদানির বড় ভাই) নাম রয়েছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি আদানি গোষ্ঠীর একটি ভুয়া সংস্থার পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন। ২০১৬ সালে পানামা দুর্নীতি ও ২০২১ সালে প্যান্ডোরা পেপার দুর্নীতিতেও তার নাম ছিল। স্থায়ীভাবে দুবাইয়ে থাকেন বিনোদ আদানি। প্রবাসী ভারতীয়দের মধ্যে তার সম্পদ নজরকাড়া। কয়েক সপ্তাহ আগে বিশ্বে সবচেয়ে ধনী প্রবাসী ভারতীয়দের তালিকায় বিনোদের নাম শীর্ষে উঠে এসেছিল।

গৌতম আদানির আরেক ভাই রাজেশ আদানির নামও রয়েছে হিনডেনবার্গে। বর্তমানে আদানি গোষ্ঠীর ম্যানেজিং ডিরেক্টর। রাজেশ হীরার বেআইনি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বলে দাবি হিনডেনবার্গের। তিনি হীরা দুর্নীতিতে কেন্দ্রীয় ভূমিকা রেখেছেন। ভারত সরকারের ডিরেক্টরেট অব রেভিনিউ ইন্টেলিজেন্স (ডিআরআই) তাকে দুর্নীতিতে অভিযুক্ত করেছিল। ১৯৯৯ ও ২০১০ সালে দুবার রাজেশকে গ্রেপ্তারও করা হয়।

গৌতম আদানির শ্যালক সমীর ভোরার নামও এসেছে হিনডেনবার্গের প্রতিবেদনে। হীরা দুর্নীতিতে নাম জড়িয়েছিল সমীরের। বর্তমানে তিনি আদানির অস্ট্রেলিয়া বিভাগের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর। ডিআরআই সমীরকেও হীরা দুর্নীতিকাণ্ডের অন্যতম হোতা হিসাবে চিহ্নিত করেছিল। তিনি দুর্নীতি ঢাকার জন্য একাধিক মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছিলেন। হিনডেনবার্গের প্রতিবেদনে গৌতম আদানির স্ত্রী প্রীতি আদানির নাম রয়েছে। তিনি পেশায় দন্ত চিকিৎসক। আদানি ফাউন্ডেশনের চেয়ারওম্যান প্রীতি। প্রতিবেদনে হীরা দুর্নীতিতে জড়িত যতীন মেটার নাম রয়েছে। তার ছেলে আদানির ভাইয়ের মেয়ের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ।

হীরা নিয়ে এক হাজার কোটি রুপির আর্থিক দুর্নীতি হয়েছে। আদানি পরিবার এ দুর্নীতিতে জড়িত। তারা কর ফাঁকি দিয়ে হীরা ও সোনার গয়নার ব্যবসা চালিয়েছেন।

হিনডেনবার্গের এ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আদানিরা কারচুপি করে ধনী হয়েছেন। পুঁজিবাজারে তারা কৃত্রিমভাবে নিজেদের দর বাড়িয়েছেন। এভাবে বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। এছাড়া এলআইসি থেকে শুরু করে বিভিন্ন ব্যাংকের সঙ্গে আদানি গোষ্ঠীর যোগসূত্র রয়েছে। আদানিদের অনেক শেয়ার কিনেছে এসব সংস্থা। তাই আদানিদের বিপর্যয়ের মুখে উদ্বেগে ভারতের সাধারণ মানুষও।

এ কারণে আদানি গোষ্ঠী নিয়ে বিনিয়োগকারীদের শঙ্কা বাড়ছে। গোষ্ঠীটির তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর হু-হু করে পড়ছে। সেই সঙ্গে কমেছে বন্ডের দাম। এ পরিস্থিতিতে গোষ্ঠীটির বন্ডহোল্ডাররা আর্থিক উপদেষ্টা ও আইনজীবীদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছেন। বন্ডহোল্ডাররা এই ভেবে শঙ্কিত যে আদানি গোষ্ঠী বাজারের আত্মবিশ্বাস পুনরুদ্ধার করতে না পারলে তাদের বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।

এদিকে হিনডেনবার্গের সব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে আদানি গোষ্ঠী। ৪১৩ পৃষ্ঠার একটি পাল্টা বিবৃতি দিয়ে তারা জানিয়েছে, যাবতীয় অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। হিনডেনবার্গের প্রতিবেদনকে তারা ভারতের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত হামলা বলেও দাবি করেছে। কিন্তু আদানিদের জবাবের প্রভাব পড়তে দেখা যায়নি পুঁজিবাজারে। তারপরও ক্রমেই নেমেছে তাদের শেয়ারের দর। বিপর্যয়ের মুখে তড়িঘড়ি করে ২০ হাজার কোটি রুপির এফপিও বাতিল করে দেন আদানি। গত ২৫ জানুয়ারি হিনডেনবার্গের এ প্রতিবেদন প্রকাশ করার পর আদানির ব্যক্তিগত সম্পদমূল্য প্রায় অর্ধেক কমে গেছে। এ সময়ে আদানি গোষ্ঠীর বিভিন্ন কোম্পানির বাজার মূলধন ১০০ বিলিয়ন বা ১০ হাজার কোটি ডলারের বেশি কমেছে।

স্থানীয় অর্থনীতি ও বিশ্ব অর্থনীতিতে আদানিদের এ পতন কেমন প্রভাব ফেলবে, তা নিয়ে বিশ্বের অনেক দেশ শঙ্কিত। দেশটির দুই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নির্মলা সীতারামন ও পীযূষ গয়াল আশ্বাস দিয়েছেন, কোনো অর্থনৈতিক অপরাধ হয়ে থাকলে ভারতীয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা ব্যবস্থা নেবে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০