আদানি, পায়রা, এস আলম, সামিটের ক্যাপাসিটি চার্জ ১৪,৮১০ কোটি টাকা

ইসমাইল আলী: এক দশকের বেশি সময় ধরে বিদ্যুৎ খাতে একক দাপট ধরে রেখেছিল সামিট গ্রুপ। তবে গত দুই-তিন বছরে বড় বেশ কয়েকটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে আসে। এতে সামিট কিছুটা পিছিয়ে গেলেও সার্বিকভাবে এখনও বেসরকারি বিদ্যুৎ খাতের উল্লেখযোগ্য অংশ তাদের নিয়ন্ত্রণে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আদানি, পায়রা, এসএস পাওয়ার ও রামপাল। এসব কোম্পানির বিদ্যুৎকেন্দ্রের পেছনেই ক্যাপাসিটি চার্জের বড় অংশ চলে যাচ্ছে।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) তথ্যমতে, ২০২৩-২৪ অর্থবছর বিদ্যুৎ খাতে ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধের পরিমাণ দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৪৬৫ কোটি ১৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে আদানি, পায়রা ও এস আলমের এসএস পাওয়ার এবং সামিটের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর জন্যই ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করতে হয়েছে ১৪ হাজার ৮১০ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। অর্থাৎ শীর্ষ চারটি কোম্পানি বা গ্রুপের পেছনেই ক্যাপাসিটি চার্জের প্রায় ৫৪ শতাংশ চলে গেছে। এর সঙ্গে ইউনাইটেড গ্রুপ ও রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র যুক্ত করলে শীর্ষ ছয়টি কোম্পানি বা গ্রুপের পেছনে ক্যাপাসিটি চার্জের প্রায় ৬৬ শতাংশ ব্যয় হয়েছে। আর শীর্ষ ১২টি গ্রুপ বা কোম্পানি বিবেচনা করলে এর পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৮১ শতাংশ। অর্থাৎ বর্তমানে দেশের বেসরকারি খাতের বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা গুটিকয়েক কোম্পানি বা গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে।

পিডিবির কয়েক বছরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত অর্থবছর বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার ব্যবহার হয়েছে মাত্র ৩৬ শতাংশ, যা দেড় দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন। বর্তমানে বেসরকারি খাতে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ৩৬৯ মেগাওয়াট। আদানি, এসএস পাওয়ারসহ বড় বিভিন্ন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদন শুরু করায় সক্ষমতা অনেক বেড়ে গেছে। এছাড়া সামিট, ইউনিকসহ বেশকিছু তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস তথা এলএনজিচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র অর্থবছরের শেষ দিকে উৎপাদন শুরু করে। এসব কেন্দ্রের কারণে ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পায়।
২০২৩-২৪ অর্থবছর বেসরকারি আইপিপির (ইন্ডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার) সংখ্যা দাঁড়ায় ৬৫টি। এর মধ্যে ফার্নেস অয়েলচালিত ৪৩টি, কয়লাভিত্তিক চারটি, ডিজেলচালিত একটি ও গ্যাসচালিত ১৭টি কেন্দ্র রয়েছে। আর রেন্টাল কেন্দ্র ছিল ৯টি, যার মধ্যে ছয়টি ফার্নেস অয়েল ও তিনটি গ্যাসচালিত। এছাড়া আদানি থেকে নিয়মতি বিদ্যুৎ আমদানি করা হয়েছে। সব মিলিয়ে এসব কেন্দ্রের জন্য ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করতে হয়েছে ২৭ হাজার ৪৬৫ কোটি ১৪ লাখ টাকা।

এদিকে ২০২২-২৩ অর্থবছর বেসরকারি খাতে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ছিল ১২ হাজার ৪১৫ মেগাওয়াট। ওই অর্থবছর উৎপাদন সক্ষমতার ৪২ শতাংশ ব্যবহার হয়। তবে ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হয়েছিল ১৭ হাজার ৭৮৮ কোটি ৪২ লাখ টাকা। অর্থাৎ গত অর্থবছর ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ বেড়েছে ৯ হাজার ৬৭৬ কোটি ৭২ লাখ টাকা বা ৫৪ দশমিক ৪০ শতাংশ। যদিও এ সময় উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে তিন হাজার ৯৫৪ মেগাওয়াট বা ৩১ দশমিক ৮৫ শতাংশ। পিডিবির তথ্যমতে, গত অর্থবছর সর্বোচ্চ ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হয় ভারতের আদানি পাওয়ারের ঝাড়খণ্ডের গড্ডা বিদ্যুৎকেন্দ্রটির জন্য। এক হাজার ৪৯৬ মেগাওয়াট সক্ষমতার কেন্দ্রটি ২০২৩-২৪ অর্থবছর ৬২ শতাংশ ব্যবহার হয়। এতে ৮১৬ কোটি ৬৬ লাখ কিলোওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। এতে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির জন্য চার হাজার ৯৮০ কোটি ৯৮ লাখ টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করতে হয়। গড়ে মাসে ৪১৫ কোটি টাকা করে ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করতে হয়েছে আদানিকে।

এর আগে ২০২২-২৩ অর্থবছরের এপ্রিল থেকে বাণিজ্যিকভাবে কেন্দ্রটির একটি ইউনিট চালু হয়েছিল। ওই তিন মাসে ৭৪৮ মেগাওয়াটের জন্য ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করতে হয়েছিল মাত্র ৬৩২ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। অর্থাৎ পূর্ণ সক্ষমতায় উৎপাদন শুরু করায় ২০২৩-২৪ অর্থবছর আদানির কেন্দ্রটির জন্য ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ সাত দশমিক ৮৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এদিকে ২০২৩-২৪ অর্থবছর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হয় পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য। এ কেন্দ্রটির ক্যাপাসিটি চার্জের পরিমাণ ছিল চার হাজার ২৬৪ কোটি ৪১ লাখ টাকা। বাংলাদেশ ও চীনের যৌথ মালিকানায় নির্মাণ করা এ বিদ্যুৎকেন্দ্রটির উৎপাদন সক্ষমতা এক হাজার ২৪৪ মেগাওয়াট। গত অর্থবছর কেন্দ্রটির ৬৫ শতাংশ ব্যবহƒত হয়েছে। ২০২০ সালের মে মাসে প্রথম ইউনিট ও ডিসেম্বরে দ্বিতীয় ইউনিট উৎপাদন শুরু করে।

তালিকায় তৃতীয় স্থানে রয়েছে এস আলম গ্রুপের এসএস পাওয়ার। চীনের সেপকো-থ্রির সঙ্গে যৌথভাবে নির্মাণ করা এ বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন সক্ষমতা এক হাজার ২২৪ মেগাওয়াট। গত অর্থবছর কেন্দ্রটির সক্ষমতার মাত্র ২১ শতাংশ ব্যবহার করা হয়। জাতীয় গ্রিডের সঙ্গে সঞ্চালন লাইন সংযোগ নির্মাণকাজ শেষ না হওয়ায় বছরের বেশিরভাগ সময় বসে থাকে কেন্দ্রটি। তারপরও এ কেন্দ্রের জন্য সরকারকে ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হয়েছে, যার পরিমাণ তিন হাজার ২৮৭ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। পূর্ণ সক্ষমতায় চললে এ কেন্দ্রটির ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ চার হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।

তালিকায় চতুর্থ স্থানে থাকা সামিট গ্রুপের আটটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য গত অর্থবছর ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হয়েছে দুই হাজার ২৭৭ কোটি ২৪ লাখ টাকা। বর্তমানে এ আটটি কেন্দ্রের উৎপাদন সক্ষমতা এক হাজার ৯৮১ মেগাওয়াট। এর মধ্যে সর্বশেষ যুক্ত হয়েছে ৫৮৯ মেগাওয়াটের দ্বৈত জ্বালানিভিত্তিক (গ্যাস/ডিজেল) মেঘনাঘাট-২ কম্বাইন্ড সাইকেল (সিসিপিপি) বিদ্যুৎকেন্দ্রটি। গত অর্থবছর শেষ দিকে এটি উৎপাদনে আসে। ফলে এ কেন্দ্রটির সক্ষমতার পূর্ণ ব্যবহার হলে ভবিষ্যতে সামিটের ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ বাড়বে।
সামিট গ্রুপের বাকি সাতটি বেশ কয়েক বছর ধরেই উৎপাদনে রয়েছে। এর মধ্যে সামিট ৩৩৫ মেগাওয়াট মেঘনাঘাট-১ ও বিবিয়ানা-২ ৩৪১ মেগাওয়াট গ্যাসভিত্তিক (সিসিপিপি) বিদ্যুৎকেন্দ্র। এছাড়া ফার্নেস অয়েলচালিত কড্ডা-১ ১৪৯ মেগাওয়াট, যা এইস অ্যালায়েন্স নামে পরিচিত। কড্ডা-২ ৩০০ মেগাওয়াট, সামিট বরিশাল ১১০ মেগাওয়াট, সামিট মদনগঞ্জ-১ ৫৫ মেগাওয়াট ও মদনগঞ্জ-২ ১০২ মেগাওয়াট।
ক্যাপাসিটি চার্জের দিক থেকে পঞ্চম স্থানে রয়েছে ইউনাইটেড গ্রুপ। এ গ্রুপের পাঁচটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্যাপাসিটি চার্জ ছিল এক হাজার ৭৪৪ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। এসব কেন্দ্রের উৎপাদন সক্ষমতা ৯৬০ মেগাওয়াট। এ গ্রুপের আরও দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে থাকলেও তারা সরাসরি ঢাকা ও চট্টগ্রাম ইপিজেডের (রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল) কাছে বিদ্যুৎ বিক্রি করে। ফলে ওই কেন্দ্র দুটির জন্য পিডিবিকে কোনো ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হয় না।

পরের স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ মালিকানাধীন রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রটি। এর উৎপাদন সক্ষমতা এক হাজার ২৩৪ মেগাওয়াট। তবে গত অর্থবছর এর একটি ইউনিট বেশিরভাগ বন্ধই ছিল। ফলে সক্ষমতার মাত্র ২৪ শতাংশ ব্যবহার হয়েছে রামপালের। এ কেন্দ্রটির জন্য গত অর্থবছর ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করতে হয়েছে এক হাজার ৫৯৯ কোটি ১৩ লাখ টাকা। পূর্ণ সক্ষমতায় চললে এ কেন্দ্রটির ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ চার হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। শীর্ষ এ ছয়টি কেন্দ্র বা কোম্পানি ও গ্রুপের জন্য মোট ১৮ হাজার ১৫৪ কোটি ২৫ লাখ টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করতে হয়েছে। তালিকায় সপ্তম অবস্থানে থাকা ডরিন গ্রুপ তার সাতটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য ক্যাপাসিটি চার্জ পেয়েছে ৭৯৬ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। আর সিঙ্গাপুরের সেম্বকর্প ও বাংলাদেশে নর্থওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির যৌথ উদ্যোগে নির্মিত ৪১৪ মেগাওয়াটের একটি কেন্দ্রের জন্য ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হয়েছে ৭৬৮ কোটি ৩২ লাখ টাকা।

৯ম স্থানে থাকা কনফিডেন্স গ্রুপের চারটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য ২০২৩-২৪ অর্থবছর ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হয়েছে ৭৬৪ কোটি ৮১ লাখ টাকা। দশম স্থানে পটুয়াখালী কয়লাভিত্তিক বরিশাল ইলেকট্রিক পাওয়ার কোম্পানির ক্যাপাসিটি চার্জ ৭১১ কোটি ৩২ লাখ টাকা। এ কেন্দ্রটির সক্ষমতা ৩০৭ মেগাওয়াট। তবে গত অর্থবছর এ সক্ষমতার মাত্র ৩০ শতাংশ ব্যবহার হয়। কয়লা সংকটে বছরের বেশিরভাগ সময় কেন্দ্রটি বন্ধ ছিল। পরের অবস্থানে রয়েছে রুরাল পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (আরপিসিএল)। চারটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য এ কোম্পানিটি ক্যাপাসিটি চার্জ পেয়েছে ৫৩৬ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। আর ওরিয়ন গ্রুপ চারটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য গত অর্থবছর ক্যাপাসিটি চার্জ পেয়েছে ৫২০ কোটি আট লাাখ টাকা। সব মিলিয়ে শীর্ষ ১২টি কোম্পানির জন্য পিডিবিকে ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করতে হয়েছে ২২ হাজার ২৩৪ কোটি ২৭ লাখ টাকা। তবে এসব কোম্পানি বা গ্রুপের বিভিন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্র বছরের বেশিরভাগ সময়ই বসে ছিল।

গত অর্থবছর বেসরকারি খাতের অন্যান্য কোম্পানি বা কেন্দ্রগুলোর ক্যাপাসিটি চার্জ ছিল ৫০০ কোটি টাকার নিচে। এর মধ্যে ইউনিক মেঘনাঘাট বিদ্যুৎকেন্দ্রটির ক্যাপাসিটি চার্জ ৪৭৭ কেটি ৭১ লাখ টাকা এবং নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির ৪৩১ কোটি টাকা। এছাড়া বারাকা গ্রুপ ক্যাপাসিটি চার্জ পেয়েছে ৪৫৬ কোটি ২২ লাখ টাকা, বি-আর পাওয়ার জেন ৪০৮ কোটি ৯৮ লাখ, ইয়ুথ গ্রুপ ৩৮১ কোটি ৪০ লাখ, বাংলাক্যাট ৩৬২ কোটি ৫৪ লাখ, দেশ গ্রুপ ৩৫০ কোটি ৯৮ লাখ, ইপিভি গ্রুপ ৩৩২ কোটি ৫২ লাখ, মালয়েশিয়ার সিডিসি ৩৩২ কোটি ৬২ লাখ. প্যারামাউন্ট ৩০২ কোটি টাকা ৮১ লাখ, লঙ্কা গ্রুপ ২৬৭ কোটি ৪৮ লাখ, ম্যাক্স গ্রুপ ২২৩ কোটি ২৯ লাখ, আনলিমা গ্রুপ ২১১ কোটি আট লাখ ও হোসাফ গ্রুপের ২০৯ কোটি ৩৪ লাখ টাকা।
প্রসঙ্গত, বেসরকারি খাতের রেন্টাল ও আইপিপি (ইন্ডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার) কেন্দ্রগুলোর উৎপাদন সক্ষমতার ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ উৎপাদন করার শর্তে লাইসেন্স দেয়া হয়। যদিও গড়ে কোনো বছরই এগুলোর সক্ষমতার ৫০ শতাংশও ব্যবহার হয় না। ফলে বসিয়ে রেখে সরকারের অর্থ গচ্চা দিতে হয়।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০