Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 3:59 pm

আদা আমদানি করে লোকসান গুনছেন আমদানিকারকরা

আয়নাল হোসেন: চীন থেকে আদা আমদানি করে বিপুল অঙ্কের টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে আমদানিকারকদের। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজারে চাহিদার তুলনায় বিপুল পরিমাণ আদার সরবরাহ গড়ে ওঠেছে। এ কারণে লোকসান দিয়ে তাদের বিক্রি করতে হচ্ছে।

আদা আমদানিকারকরা জানান, বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি টন চীনা আদা বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৩২০ মার্কিন ডলারে। এ হিসাবে প্রতি কেজি আদায় আমদানি খরচ পড়ছে ১২০ টাকার মতো। অথচ তারা বিক্রি করছেন ৭০ টাকায়। এতে প্রতি কেজি আদায় তাদের লোকসান গুনতে হচ্ছে ৫০ টাকা।

অন্যদিকে বর্তমানে প্রতি টন ভারতীয় কেরালা আদা আন্তর্জাতিক বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ২৯০ মার্কিন ডলারে। দেশে পৌঁছানোসহ প্রতি কেজি আদায় খরচ পড়ছে ৪৮ টাকার মতো। অথচ পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি ভারতীয় আদা বিক্রি হচ্ছে ৪৩ টাকায়। অর্থাৎ প্রতি কেজি আদায় লোকসান গুনতে হচ্ছে ৫ টাকা।

রাজধানীর পুরান ঢাকার শ্যামবাজারের আদা আমদানিকারক মেসার্স সরমা বাণিজ্যালয়ের স্বত্বাধিকারী ঝুটন চন্দ্র সাহা জানান, চীন থেকে আদা আমদানি করে প্রতি কনটেইনারে (২২ টন) তাদের লোকসান গুনতে হচ্ছে ১৫ লাখ টাকা। ভারতীয় আদায়ও তাদের লোকসান গুনতে হচ্ছে। বাজারে বিপুল পরিমাণ আদার সরবরাহ থাকলেও চাহিদা কমে গেছে। এ কারণে লোকসান দিয়ে তারা বিক্রি করছেন।

একাধিক আমদানিকারক জানান, বর্তমানে আদা আমদানি করে ব্যবসায়ীরা লোকসান দিচ্ছেন। এ ব্যবসায়ীরা বছরের কোনো একসময় লাভ করবেন বলে তাদের টার্গেট থাকে। ব্যবসায়ীরা যখন লোকসান দেন তখন সরকার কিংবা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কারও হদিস থাকে না। এমনকি গণমাধ্যম কর্মীদেরও তখন কোনো সাড়া পাওয়া যায় না। কিন্তু বছরের কোনো একসময় হঠাৎ দাম বাড়ছে, তখন সর্ব মহলে হইচই শুরু হয়। একসময় সরকারের কর্তা-ব্যক্তিদের নির্দেশে চালানো হয় ভ্রাম্যমাণ আদালত। এতে অনেক ব্যবসায়ীকে জেল-জরিমানা গুনতে হয়। তাদের ভাষ্য, যখন তারা লোকসান দেন তখন তো সরকারের কর্তা-ব্যক্তিদের খবর থাকে না। লোকসানের কথা জানাতে গেলেও কোনো সহায়তা পাওয়া যায় না।

রাষ্ট্রায়ত্ত বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, গতকাল রাজধানীর খুচরা বাজারগুলোয় প্রতি কেজি দেশি আদা বিক্রি হয়েছে ৭০ থেকে ১১০ টাকা; যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৭০ থেকে ১২০ টাকা। আর এক মাস আগে ছিল ১০০ থেকে ১১০ টাকা। আর গতকাল প্রতি কেজি বিদেশি আদা বিক্রি হয়েছে ৮০ থেকে ১৩০ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৬০ থেকে ১৩০ টাকা। একই আদা এক মাস আগে বিক্রি হয়েছিল ৭০ থেকে ৯০ টাকায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দেশে আদার মোট চাহিদার অধিকাংশই আমদানিনির্ভর। দেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানসহ কয়েকটি জেলায় যে পরিমাণ আদা উৎপাদন হয় তা দিয়ে দুই মাস পরিচালনা করা সম্ভব। অবশিষ্ট আদা মূলত চীন ও ভারত থেকে আমদানি করতে হয়।

আমদানিকারক, পরিবেশক ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, দেশে বছরে কী পরিমাণ আদার চাহিদা রয়েছে। দেশে বছরে কী পরিমাণ আদা উৎপাদন হয়। কোন কোন দেশ থেকে কী পরিমাণ আদা দেশে আসছে সে-সংক্রান্ত সঠিক কোনো পরিসংখ্যান সরকার কিংবা ব্যবসায়ী কারও কাছেই নেই। আর এতে করে কখন অস্বাভাবিক আমদানি হয় আবার কখনও স্বল্প পরিমাণে আমদানি হয়। এতে কখনও ব্যবসায়ীরা মোটা অঙ্কের মুনাফা করেন আবার কখনও কখনও লোকসান দেন।