আদিতমারীতে আড়াই হাজার গ্রাহকের টাকা নিয়ে লাপাত্তা সমিতি

ফারুক আলম, লালমনিরহাট: লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলায় ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘শাপলা সমবায় সমিতি লিমিটেড’ নামে একটি এনজিও। স্থানীয় আড়াই হাজার সদস্য সমিতিতে আমানত রাখেন। ক্ষুদ্র এসব আমানতকারীর টাকা মেয়াদ শেষেও ফেরত দিচ্ছে না সমবায় সমিতিটি। অধিকংশ গ্রাহক গচ্ছিত আমানতের টাকার জন্য তিন বছর ধরে ঘুরছেন স্থানীয় মাতবর ও সমিতির অফিসারদের দ্বারে দ্বারে। কাজ হয়নি কিছুই। উল্টো সমিতির মালিক করছেন বহুতল ভবন। ব্যবস্থাপক করেছিলেন বাড়ি। রাতারাতি বাড়ি বিক্রি করে চম্পট।

জানা যায়, লোভনীয় সব বিজ্ঞাপন দিয়ে এসব গ্রাহককে আকৃষ্ট করেন সমিতির কর্তারা। ফলে গ্রাহকরা ১০ থেকে ১০০ করে প্রতি মাসে টাকা আমানত রাখেন। কিন্তু বর্তমানে সমিতি লোকসানে আছে বলে কোনো গ্রাহককে টাকা দিচ্ছে না। অথচ সমিতিটি প্রতিষ্ঠার পরে নিজেদের প্রাতিষ্ঠানিক অর্থে বাড়ি, গাড়ি সব করেছে।

আদিততমারী সমবায় অফিস থেকে কোয়ার্টার কিলো দূরে অবস্থিত সমিতিটি নিয়ে সময়বায় অফিসার ফজলে এলাহীর সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের সঙ্গে। তিনি জানান, সমিতিটির গ্রাহক হয়রানির বিষয়ে তার অফিস বা সরকারের কিছুই করার নেই! সমবায় অফিস থেকে সমিতিটি লসে আছে, এমন সাফাই গাওয়া হয়েছে। প্রতি বছর অডিট করেও তারা সমিতির বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কিছুই করেনি।

শাপলা সমবায়ের এক স্টাফ বলেন, আমরা প্রতি মাসে সমবায়ে স্টেটমেন্ট দিয়েছি। প্রতি বছর অডিট করেছে। সদস্যদের আমানত আর ঋণের বিষয়ে কেনো নজর দেয়নি। তা শুধু সমবায় অফিসের লোকজনই জানে। তার দাবি, এই সংকট অনেক আগে শুরু হয়েছে। অনেক কিছুই মুখ বুজে সয়ে কাজ করতে হয়েছে।

শাপলা সমবায়ের অফিস স্টাফ সূত্র বলছে, এ টাকা জমা এবং বিতরণে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়েছে। প্রথম দিকে ভালো চললেও, গত তিন বছর আগে স্বেচ্ছাচারিতা শুরু করে সমবায় সমিতিটির সভাপতি, সেক্রেটারি। তারা কিছু হলেই সাবেক এক সমবায় কর্মকর্তাকে এনে মিটিংয়ে বসাত। এতে বিভিন্ন প্রকার চটকদার কথা শুনে তারা তাদের কাজ চালিয়ে গেছে। এখন তারা সদস্যদের আসল টাকা দিচ্ছে না। তাই কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না।

জানা যায়, শাপলা সঞ্চয় প্রকল্পের জমা টাকা উত্তোলনের ক্ষেত্রে লভ্যাংশ ও বোনাসের পূর্ণতা ২, ৩, ৪, ৫ ও ৬ বছর। জমাকৃত টাকার ওপর  ১০%, ১৫%, ২০%, ২৫% ও ৩০% পর্যন্ত লভ্যাংশ দেয়ার কথা। এ লভ্যাংশের সঙ্গে আবার বোনাস দেয়ার কথা বলেছে সমিতিটির নথি, যা সদস্যদের খুব সহজেই কাছে টেনেছে।

সমিতির একাধিক সদস্য জানান, তাদের টাকা জমা করার মেয়াদ শেষে লাভ পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু গত নভেম্বরে তাদের কাছে জমা বই রেখে দেয়া হয়েছে। তারপর তাদের টোকেন দিয়ে দেয়। এরপর রাতারাতি বাড়ি বিক্রি করে পালিয়ে যায় সমিতির সেক্রেটারি শফিকুল ইসলাম।

সমিতির সদস্য মধুসূধন রায় বলেন, আমার মেয়ের বিয়ের জন্য টাকা জমা রেখেছি। মেয়াদও প্রায় শেষের পথে ছিল। কিন্তু প্রায় তিন বছর থেকে শাপলা সমিতির আর কোনো হদিস পাচ্ছি না।

সমিতির সভাপতি সামসুল আলম দুলুর সঙ্গে বারবার যোগাযোগ, মোবাইল ফোন এবং খুদে বার্তা পাঠিয়েও পাওয়া যায়নি। তবে সমিতির সেক্রেটারি সফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা আমাদের বাড়ি, গাড়ি জমি বেচে টাকা দেয়া শুরু করেছিলাম। সমিতির সদস্যরা যখনই বই জমা দেয়, তখনই টাকা চায়। এসব কারণে টাকা ফেরত দেয়া হয়নি। আমি এখন নিঃস্ব। আমাদের সমবায় অফিসার সহোযোগিতা করতে চেয়েছেন। ইউএনওর মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ে সহোযোগিতা করার কথাও বলেছে। তারপর তিনি কোনো সহযোগিতা করেননি। এসব কারণে সব কিছু থেকে দূরে থাকতে হচ্ছে। আমাদের টাকাও মাঠে পড়ে আছে। এখন পর্যন্ত ৮০ জনকে উকিল নোটিস পাঠিয়েছি। আমরা ৫০০ জনের কাছে টাকা পাব।

সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক লেবু বলেন, আমি অনেকদিন থেকে সমিতির কাছ থেকে দূরে আছি। সমবায় অফিসারকে অভিযোগ দিয়েছি। তদন্ত করলে বোঝা যাবে আমি নির্দোষ।

উপজেলা সমবায় অফিসার ফজলে এলাহী বলেন, আমরা কিছু অভিযোগ পেয়েছি। আমাদের করার কিছু নেই। সদস্যরা যদি মামলা করে তাহলে টাকা তুলে দেবো। অথবা তারা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করলে আমরা প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে টাকা আদায় করে দেবো।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০