নিজস্ব প্রতিবেদক: পুঁজিবাজারে আধিপত্য বাড়ছে ‘বি’ ক্যাটাগরির কোম্পানির শেয়ারের। এ কারণেই আলোচিত ক্যাটাগরির বেশকিছু কোম্পানির শেয়ারদর বাড়ার শীর্ষ ১০-এ উঠে এসেছে। গত এক সপ্তাহের ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন চিত্রে এমনটিই লক্ষ্য করা গেছে।
তালিকাভুক্ত যেসব কোম্পানি নিয়মিত বার্ষিক সাধারণ সভা করে। কিন্তু সমাপ্ত হিসাববছরে ওই কোম্পানির পর্ষদ শেয়ার হোল্ডারদের জন্য ১০ শতাংশের নিচে লভ্যাংশ দেয় সেসব প্রতিষ্ঠানকে ‘বি’ ক্যাটাগরিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
গত এক সপ্তাহে ‘বি’ ক্যাটাগরির যেসব কোম্পানির শেয়ারদর বাড়ার শীর্ষ দশে উঠে এসেছে সেগুলো হলো: প্রিমিয়ার লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স লিমিটেড, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস লিমিটেড, নদার্ন জুট ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি লিমিটেড, মোজাফফর হোসেন স্পিনিং মিলস লিমিটেড।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কিছু কোম্পানি তালিকাভুক্তির পর দুয়েক বছর ভালো লভ্যাংশ দেয়। পরে হঠাৎ করে তা পরিবর্তন করে ‘বি’ ক্যাটাগরিতে। এক সময় সেগুলো ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে নেমে আসে। আবার সুযোগ বুঝে ‘জেড’ ক্যাটাগরি থেকে সেগুলো ‘বি’ ক্যাটাগরিতে ফিরতে থাকে। কোম্পানি কর্তৃপক্ষ তাদের স্বার্থ হাসিল করার পরপরই আবার তারা ক্যাটাগরি পরিবর্তন করে নেয়। তাই এসব কোম্পানিগুলোকে নিয়ন্ত্রক সংস্থার নজরদারিতে এবং দর হঠাৎ বাড়ার কারণ খতিয়ে দেখা উচিত বলে মনে করছেন তারা।
তথ্যমতে, প্রিমিয়ার লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স লিমিটেড ২০১১ সালে ৫ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়ে ‘বি’ ক্যাটাগরিতে স্থানান্তরিত হয়। পরবর্তীতে টানা তিন বছর বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ না দিয়ে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে অবস্থান করেছিল প্রতিষ্ঠানটি। গত বছর বিনিয়োগকারীদের জন্য আবারও ৫ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়ে ক্যাটাগরি পরিবর্তন করেছে। গত এক সপ্তাহে কোম্পানির শেয়ারদর ২০ দশমিক ৭৮ শতাংশ পরিবর্তন হয়ে দর বাড়ার শীর্ষ তালিকায় উঠে এসেছে। এ সময় কোম্পানিটির টার্নওভারের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬৮ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। যার দৈনিক গড় লেনদেনের পরিমাণ ছিল ১৩ কোটি ৭১ লাখ টাকা। অথচ গত দুই বছরের বেশিরভাগ সময় ফেস ভ্যালুর নিচে অবস্থান করে কোম্পানির শেয়ারদর। গত সপ্তাহের শেষদিন কোম্পানির শেয়ার সর্বশেষ ১৮ টাকা ৭০ পয়সায় বেচাকেনা হয়েছে।
ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস লিমিটেড ২০০৭ সালে তালিকাভুক্ত হয়ে পরপর তিন বছর বেশ আকর্ষণীয় লভ্যাংশ দিয়েছে। ২০১১ সালে ৫ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়ে ‘বি’ ক্যাটাগরিতে অবস্থান নেয়। কোম্পানির শেয়ারদর গত এক সপ্তাহে ১৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ পরিবর্তন হয়েছে। এ সময় টার্নওভারের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৬ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। দৈনিক গড় লেনদেন হয়েছে ৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা।
নদার্ন জুট ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি লিমিটেড গত বছর ৫ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়ে ‘বি’ ক্যাটাগরিতে অবস্থান করছে। আগের বছর কোম্পানিটি ২০ শতাংশ লভ্যাংশ দেয়। ২০১৪ সালে ১০ শতাংশ লভ্যাংশ দেয় প্রতিষ্ঠানটি। এর আগের দীর্ঘ সময় লভ্যাংশ না দিয়ে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে অবস্থা করেছিল প্রতিষ্ঠানটি। গত এক সপ্তাহে কোম্পানির শেয়ার ১২ দশমিক ৪৯ শতাংশ পরিবর্তন হয়েছে। এতে কোম্পানিটি দর বাড়ার শীর্ষ দশে স্থান করে নিয়েছে। এ সময় কোম্পানিটির টার্নওভারের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক কোটি ৯৬ লাখ টাকা। দৈনিক গড় লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৩৯ লাখ টাকা। গত বৃহস্পতিবার কোম্পানির শেয়ার সর্বশেষ ৩০০ টাকায় বেচাকেনা হয়েছে।
মোজাফফর হোসেন স্পিনিং মিলস লিমিটেড ২০১৪ সালে ঢাক ঢোল পিটিয়ে বাজারে তালিকাভুক্ত হয়। তালিকাভুক্তির বছর ২৫ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। পরের বছরই ১৫ শতাংশে নেমে আসে। তাও আবার বোনাস লভ্যাংশ। গত সমাপ্ত হিসবাবছরে কোম্পানি ৫ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়ে বি ক্যাটাগরিতে নেমে আসে। কোম্পানির শেয়ারদর গত এক সপ্তাহে ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ পরিবর্তন হয়ে দর বাড়ার শীর্ষ তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। এ সময় টার্নওভারের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৮ কোটি ১৯ লাখ টাকা। দৈনিক গড় লেনদেনর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। কোম্পানির শেয়ার সর্বশেষ ২৯ টাকা ৭০ পয়সায় বেচাকেনা হয়েছে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালক রকিবুর রহমান বলেন, আমরা বারবার বিনিয়োগকারীদের বলছি, আপনারা কোম্পানির ফান্ডামেন্টাল অবস্থা দেখে বিনিয়োগ করুন। ক্যাটাগরি দিয়ে বোঝানো হয় প্রতিষ্ঠানটি কী পজিশনে আছে। তাই শুধু ক্যাটাগরিই নয় বিনিয়োগ করার পূর্বে কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদে কারা আছে ভালোভাবে তাদের ইতিহাস জেনে বুঝে বিনিয়োগ করার পরামর্শ দেন তিনি।
Add Comment