এনামুল হক নাবিদ, আনোয়ারা (চট্টগ্রাম): একদিকে আনোয়ারা উপজেলা, অন্যদিকে পটিয়া উপজেলা। একটি সুইসগেটের মাধ্যমে চট্টগ্রামের এ দুই উপজেলাকে সংযুক্ত করেছে বাকখাইন ও কৈখাইন নামে দুটি গ্রাম। গত বছর ইছামতী খালের শাখা দক্ষিণ বাকখাইন নোয়ারাস্তা কানউরিয়া খালের ওপর নির্মিত সুইস গেটটিতে হয় ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি। ফলে বছর না পেরোতেই খালে তলিয়ে যায় সুইস গেটসহ ১০০ মিটারের বেড়িবাঁধ।
পটিয়া উপজেলার বাকখাইন গ্রামের বাসিন্দা মিনু বালা দাস বলেন, আমরা চার মাস ধরে পানিবন্দি, বলা যায়, গ্রামবন্দি হয়ে আছি। দুর্ভোগে চলছে এখানকার মানুষের জীবনসংসারে। বেশিরভাগ মানুষ গ্রাম ছেড়ে চলে যাচ্ছে। সুইস গেটসহ বেড়িবাঁধ ভাঙতে ভাঙতে এখন পুরোটাই বিলীন হয়ে গেছে। কয়েক মাস ধরে সম্পূর্ণ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। যাতায়াতে আমাদের প্রচুর সমস্যা হচ্ছে। ছোট ছেলেমেয়েরা স্কুলে যেতে পারছে না।
তিনি আরও বলেন, গর্ভবতী মহিলা এবং ডায়রিয়ায় আক্রান্ত ও গুরুতর অসুস্থ রোগীকে নিয়ে বেশ কষ্টে আছে গ্রামবাসী। বর্তমানে আমাদের যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম নৌকা।
দিনে কোনোভাবে খাল পার হলেও রাত ১০টার পর নৌকা চলাচল করে না। রাতে কেউ গুরুতর অসুস্থ হলে চেষ্টা করেও হাসপাতালে নেয়া যায় না। আবার দিনে খালের মধ্যে ভাটা হলে হাঁটু পরিমাণ কাদাতে নেমে কয়েকজন মিলে ধরাধরি করে অসুস্থ রোগীকে নৌকায় তুলে পারাপার করতে হয়।
একই গ্রামের স্থানীয় আরেক বাসিন্দা মানিক ঘোষ বলেন, এলাকাবাসীর উদ্যোগে ১৫ হাজার টাকা খরচ করে চলাচলের জন্য বাঁশের সাঁকো দিলেও প্রবল স্রোতের বেগে ১০ দিনও টেকেনি। স্রোতে ভেঙে গেছে সাঁকো। যাতায়াতের ভোগান্তির কারণে অর্ধেক মানুষ এলাকা ছেড়ে অন্য জায়গায় ভাড়া বাসায় চলে গেছে।
সংবাদকর্মীদের সঙ্গে স্থানীয় মানুষের আলাপচারিতার সময় তাদের অসহায়ত্ব চোখে পড়ে। এককথায় বাকখাইন গ্রামের মানুষের জীবন চলছে চরম দুর্ভোগে।
আনোয়ারা উপজেলার ইছামতী খালের শাখা দক্ষিণ বাকখাইন নোয়ারাস্তা কান্দুরিয়া খালের ওপর আড়াই কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সøুইস গেটটি বছর যেতে না যেতেই পানিতে তলিয়ে যায়। এছাড়া জোয়ারের পানির স্রোতে খালে বিলীন হয়ে গেছে প্রায় ১০০ মিটার বেড়িবাঁধ। এতে সড়ক যোগাযোগ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন বাকখাইন গ্রামের বাসিন্দারা। বাকখাইন গ্রাম ছাড়াও দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে আশেপাশের আরও বেশ কয়েক গ্রামের হাজার বাসিন্দাদের। সুইস গেটটি বিলীন হওয়ার ফলে উপজেলার চাতরী, পরৈকোড়া, বারখাইন ও আনোয়ারা সদরসহ চারটি ইউনিয়নের হাজার একর জমির ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে সুইস গেটটি বেড়িবাঁধসহ খালে বিলীন হয়ে গেছে। ঝুঁকিপূর্ণ এ পয়েন্টে টেকসই বাঁধ নির্মাণ না করা এবং সুইস গেটের উভয় পাশে ব্লকসহ যথাযথ ব্যবস্থা না নেয়ায় এটি বিলীন হয়ে গেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সøুইস গেটসহ প্রায় ১০০ মিটার বেড়িবাঁধ পুরোপুরি খালে বিলীন হয়ে গেছে। নৌকা নিয়ে পারাপার করছেন স্থানীয় লোকজন। বালিভর্তি জিওব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, ভাঙা অংশ দিয়ে জোয়ারের পানি প্রবেশ করায় এখানে হাজার একর জমিতে চাষাবাদ করা যাচ্ছে না। অন্যান্য সময় এ মৌসুমে ধান রোপণ এবং মরিচ ও শীতকালীন বিভিন্ন শাকসবজি চাষ করলেও এ মৌসুমে বেকার বসে আছেন তারা।
পার্শ্ববর্তী মহতর পাড়া এলাকার বাসিন্দারা জানান, কুমারখালি খালের ওপর নির্মিত সøুইস গেটটিতেও ফাটল দেখা দিলে সিমেন্ট দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়, যাতে ফাটল দেখা না যায়। ইছামতী থেকে মহতর পাড়ার পেশকার হাট পর্যন্ত বেড়িবাঁধে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে। বিশেষ করে মহতর পাড়া এলাকায় জমির আইলের মতো করে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে গেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। নির্মাণের চার-পাঁচ মাস না যেতে অনেক অংশে ভেঙে গেছে নির্মাণাধীন এ বেড়িবাঁধ। বেড়িবাঁধ নির্মাণে ঠিকাদারের ভূমিকায় রয়েছেন পাউবো কর্মকর্তারা। এমন ভূমিকার কারণে বেড়িবাঁধ নির্মাণে চরম দুর্নীতি হচ্ছে।
আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ জোবায়ের আহমেদ বলেন, ‘সøুইস গেটটি তলিয়ে যাওয়ায় চাষাবাদে ব্যাপক প্রভাব পড়বে। আমরা সøুইস গেটটি দ্রুত নির্মাণ করতে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানিয়েছি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী তয়ন কুমার ত্রিপুরা এ প্রতিবেদককে বলেন, এটি নিয়ে নিউজ করার দরকার নেই। এটি নতুন করে আবার নির্মাণ করা হবে।