আন্তঃব্যাংক রেপোয় রেকর্ড ৯লাখ কোটি টাকার বেশি ধার

রোহান রাজিব: তারল্য সংকটে থাকা ব্যাংকগুলো ২০২২-২৩ অর্থবছরে আন্তঃব্যাংক রেপোর মাধ্যমে রেকর্ড ৯ লাখ ২৯ হাজার ১২ কোটি টাকা ধার করেছে। তার আগের অর্থবছরের চেয়ে যা ৪৬ দশমিক ৬১ শতাংশের বেশি। ২০২১-২২ অর্থবছরে এই ধারের পরিমাণ ছিল ৬ লাখ ৩৩ হাজার ৬৩৫ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।

এক ব্যাংক থেকে আরেক ব্যাংক এক দিন থেকে ১৪ দিনের জন্য যে ধার নেয়, তাকে ইন্টার ব্যাংক রেপো বা আন্তঃব্যাংক রেপো বলা হয়। যে ব্যাংক এ ধরনের ধার নেবে, সে ব্যাংককে জামানত রেখে ধার নিতে হবে। এছাড়া কলমানিতেও এক ব্যাংক আরেক ব্যাংক থেকে ধার নিয়ে থাকে। তবে সেটা জামানত ছাড়া নিতে পারে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা শেয়ার বিজকে বলেন, গেল অর্থবছর থেকে ব্যাংক খাত তারল্য সংকটে ভুগছে। কারণ গত দেড় বছর ধরে দেশে ডলার সংকট চলছে। ব্যাংক খাতের ডলার সংকট মেটাতে বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করছে। যে কারণে সংকটে থাকা ব্যাংকগুলো থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে টাকা উঠে এসেছে। অর্থাৎ এসব ব্যাংক তাদের দৈনন্দিন কার্যক্রম মেটাতে ভালো ব্যাংক থেকে ধার নিয়েছে। এসব কারণেই আগের তুলনায় বেশি ধার হয়েছে।

এদিকে গেল অর্থবছর কলমানিতে ধারের পরিমাণ ছিল ১৩ লাখ ৯ হাজার ৬৫১ কোটি টাকা, যা তার আগের অর্থবছরের চেয়ে ২১ দশমিক ০৩ শতাংশ কম। ২০২১-২২ অর্থবছরে কলমানিতে লেনদেন হয় ১৬ লাখ ৫৮ হাজার ৫৯৩ কোটি টাকা।

২০২২-২৩ অর্থবছরে এক ব্যাংক আরেক ব্যাংক থেকে আন্তঃব্যাংক রেপো ও কলমানির মাধ্যমে চড়া সুদে ধার করেছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, গেল অর্থবছরে আন্তঃব্যাংক রেপোর গড় সুদহার ছিল ৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ, যা ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ৬১ শতাংশ। অন্যদিকে ২০২২-২৩ অর্থবছরে কলমানিতে গড় সুদহার ছিল ৫ দশমিক ৮৯ শতাংশ, যা তার আগের অর্থবছরে ছিল ৩ দশমিক ০৬ শতাংশ।

আন্তঃব্যাংক রেপোর মাধ্যমে অস্বাভাবিক ধার বৃদ্ধির বিষয়ে জানতে চাইলে মিচুউয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহাবুবুর রহমান শেয়ার বিজকে বলেন, ব্যাংক খাতে তারল্য সংকট অনেকদিন ধরেই চলছে। যেসব ব্যাংক তারল্য সংকটের সম্মুখীন হয়েছে, তারাই জামানত রেখে আরেক ব্যাংক থেকে ধার করেছিল। কারণ এসব ব্যাংকের নগদ টাকায় ডলার কেনার অনেক চাপ ছিল। নগদ টাকায় ডলার কেনার কারণেই তারল্য সংকটে পড়ে। এজন্য আন্তঃব্যাংক রেপোয় আগের তুলনায় ধারের পরিমাণ অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।

এই দুই মাধ্যম ছাড়াও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে রেপো ও অ্যাসিউরড লিক্যুইডিটি সাপোর্ট বা এএলএস ধার করে থাকে। তথ্য মতে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে এই দুই মাধ্যমে রেকর্ড ১৩ লাখ ৮ হাজার ৭৭৯ কোটি টাকা ধার নেয়া হয়েছিল। ২০২১-২২ অর্থবছরে এই ধারের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৭৫ হাজার ৯৮৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরে ধারের পরিমাণ বেড়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক হতে ৬৪৩ দশমিক ৬৭ শতাংশ। গত অর্থবছরে রেপোর মাধ্যমে ৬ লাখ ১১ হাজার ৬৫৬ কোটি ও এএলএসের মাধ্যমে ৬ লাখ ৯৭ হাজার ১২৩ কোটি টাকা ধার দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

রেপোর মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সব ব্যাংক ধার নিতে পারে। আর এএলএসের মাধ্যমে শুধু প্রাইমারি ডিলার ব্যাংক (পিডি) ধার নিতে পারে। এই ধার সর্বোচ্চ ৯০ দিনের জন্য দেয়া হয়।

জানা যায়, সরকারের বিভিন্ন সময়ের ট্রেজারি বিল-বন্ডের অকশন হয়। এই অকশন থেকে কারও ট্রেজারি বিল বন্ড কেনার আগ্রহ না থাকলে, পিডি ব্যাংকগুলোকে তা কেনার জন্য বাধ্য করা হয়। এজন্যই এসব ব্যাংকে এএলএস সুবিধা দেয়া হয়।

গত ১৭ জানুয়ারি মুদ্রানীতি অনুষ্ঠানে ব্যাংক খাতের তারল্য সংকট নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, ‘তারল্য সংকটের মূল কারণ হলো, ডলার আসা কমে গেছে। সে কারণে বাজারে টাকা ছাড়ার পরিমাণ কমেছে। অথচ আমরা চলমান অর্থবছরসহ গত তিন অর্থবছরে বাজারে ২৮ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার বা ২ হাজার ৮৭০ কোটি ডলার বিক্রি করেছি। অর্থাৎ সেই পরিমাণ টাকা বাজার থেকে তুলে নেয়া হয়েছে। এর সমপরিমাণ টাকা কিন্তু বাজারে সঞ্চারিত করা সম্ভব হয়নি। ব্যাংকগুলো ডলার কেনায় তাদের কাছে টাকা নেই। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংক গত আগস্ট থেকে সরকারকে ঋণ দেয়া বন্ধ করেছে। সরকার এখন বাংলাদেশ ব্যাংকের বদলে আর্থিক খাত থেকে ঋণ করছে। স্বাভাবিকভাবেই ব্যাংকগুলোর হাতে টাকা কমে যাচ্ছে। এটা কাঠামোগত সমস্যা, আমরা তা মোকাবিলার চেষ্টা করছি। ব্যাংকগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।’

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০