দীর্ঘদিন ধরে অমীমাংসিত তিস্তা নদীর পানিবণ্টন চুক্তির বিষয়ে মতপার্থক্য দূর করার উপায় নিয়ে ভারতের সঙ্গে আলোচনা করবে অন্তর্বর্তী সরকার। বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে রয়েছে, এতে কোনো দেশেরই লাভ হচ্ছে না। ঢাকায় নিজ সরকারি বাসভবনে ভারতের বার্তা সংস্থা পিটিআইকে দেয়া সাক্ষাৎকারে প্রধান উপদেষ্টা এ কথা বলেন। দুই দেশের মধ্যে পানিবণ্টনের বিষয়টি অবশ্যই আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী হতে হবে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের মতো ভাটির দেশগুলোর অধিকার সমুন্নত রাখার সুনির্দিষ্ট অধিকার রয়েছে বলে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য অভিন্ন নদীগুলোর পানি বণ্টনে বিদ্যমান মতদ্বৈধ দূরীকরণে ভূমিকা রাখবে বলেই ধারণা। প্রধান উপদেষ্টার একটি বক্তব্য আশা জাগানিয়াÑআমি যদি জানি যে আমি কতটুকু পানি পাব, তাহলে এটি ভালো হতো। এমনকি পানির পরিমাণ নিয়ে যদি আমি খুশি নাও হই, তাতেও সমস্যা নেই। বিষয়টির সমাধান হতেই হবে।’
বাংলাদেশে নদীর প্রকৃত সংখ্যা নিয়ে বিভিন্ন তথ্য রয়েছে। আন্তঃসীমান্ত (একাধিক দেশের সীমান্ত অতিক্রমকারী) নদীর সংখ্যা নিয়েও রয়েছে ভিন্ন মতÑস্বীকৃত অভিন্ন নদী ৫৭টি হলেও গবেষকরা বলছেন বাস্তবে এ সংখ্যা শতাধিক। নদীর সংখ্যা নিয়ে এমন বিভ্রান্তি হয়তো বড় বিষয় নয়, কিন্তু নদীর বিষয়ে আমাদের উদাসীনতার দৃষ্টান্ত হতে পারে এটি। প্রতি বছরই নদীভাঙনে বিলীন হয় বিস্তীর্ণ এলাকা। আমাদের বন্যা ও ভাঙনে আন্তঃসীমান্ত নদীগুলোর বড় ভূমিকা রয়েছে। সেচ মৌসুমে এ নদীগুলোয় পানি থাকে না। আবার বর্ষাকালে উজানের পানির চাপে দুই তীর প্লাবিত হয়। এবার দেশের পূর্বদক্ষিণাঞ্চলের ১১টি জেলায় যে বন্যা হয়েছে, তার দায় এড়াতে পারে না ভারত।
আন্তঃসীমান্ত নদীর পানিবণ্টন নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ককে আশাব্যঞ্জক বলা যাবে না। ১৯৯৬ সালে সম্পাদিত ৩০ বছর মেয়াদি গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি-পরবর্তী সময়ে পানিবণ্টন নিয়ে মতানৈক্য এবং তিস্তা চুক্তি না হওয়া দুঃখজনক। এর আগে ফারাক্কা বাঁধ ও গজলডোবা বাঁধ নিয়ে দুই দেশের সম্পর্ককে ক্লেদাক্ত করা হয়েছে। এখন দ্রুত দর কষাকষি করে গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি নবায়ন করতে হবে দুই দেশকে।
বিশ্বে অন্তত ২৬০টি আন্তঃসীমান্ত নদী আছে। বোঝাপড়া ও চুক্তির মাধ্যমে আন্তঃসীমান্ত নদীর পানি ভাগাভাগি করে সংশ্লিষ্ট দেশগুলো। এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক আইনও রয়েছে। এগুলোর পানিবণ্টন ও নিরাপদ নৌ-চলাচল নিয়ে দূরত্ব সৃষ্টি হলেও স্থায়ী বিরোধে জড়িয়ে পড়েনি সংশ্লিষ্ট দেশগুলো। এ দৃষ্টান্ত সামনে রেখে আন্তঃসীমান্ত নদীর পানিবণ্টন যাতে দেশের জন্য সুফল বয়ে আনে, সে লক্ষ্যে সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে। বাড়াতে হবে কূটনৈতিক তৎপরতা। চুক্তি-পরবর্তী সময়ে নির্দিষ্ট সময়ে নির্ধারিত পানিবণ্টন নিশ্চিত হচ্ছে কি না, সেটি তদারকিও করতে হবে যৌথ নদী কমিশন বা উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের।