Print Date & Time : 17 June 2025 Tuesday 12:01 pm

আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর কাছে নির্বাচনকে অবাধ-সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ দেখাতে হবে: সিইসি

নিজস্ব প্রতিবেদক : প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, ‘নির্বাচন কখনও হালকাভাবে নেয়ার বিষয় নয়। যতদূর সম্ভব নির্বাচনকে দৃশ্যমানভাবে স্বচ্ছ করতে হবে। স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় ভোট হচ্ছে। তা দৃশ্যমানতার মাধ্যমে জনগণের কাছে বিশ্বাসযোগ্য করে গড়ে তুলতে হবে।’

গতকাল সোমবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচির উদ্বোধনকালে তিনি এসব কথা বলেন।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু নিরপেক্ষতার প্রশ্নে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে হবে বলেও মনে করেন সিইসি।

তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে কারচুপি, কেন্দ্র দখল, পেশিশক্তির ব্যবহার, কালো টাকা বিতরণসহ নানা ধরনের অনিয়ম হয়। এগুলো প্রতিরোধ করে নির্বাচনকে দেশের জনগণ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে হবে।’

সিইসি বলেন, ‘নির্বাচনটা যেমন ডমেস্টিক ডাইমেনশন আছে। একইভাবে আন্তর্জাতিক ডাইমেনশনও আছে। ইন্টারন্যাশনাল ডায়মেনশনটাকে কোনোভাবেই খাটো করে দেখা যাবে না। আন্তর্জাতিক কমিউনিটির কাছে আমাদের দেখাতে হবে নির্বাচনটা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘অনেক সময় কূটনীতিকরা এসে আমাদের বলেন নির্বাচনটা ভালো হতে হবে, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হতে হবে। এ কথা বলার অধিকার ওনাদের রয়েছে। আন্তর্জাতিক কমিউনিটির অংশ হিসেবে এ দাবি তারা করতেই পারেন।’

বিচারকদের উদ্দেশে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘নির্বাচন শুধু সুষ্ঠু হলে হবে না। নির্বাচন যে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হয়েছে, ভোটররা যে নির্বিঘ্নে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পেরেছে, তা বিশ্বাসযোগ্য করতে হবে।’

তিনি জানান, ‘গণমাধ্যমকর্মীরা ভোট কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবেন। তারা ছবি তুলতে পারবেন। পর্যবেক্ষকদেরও সেই সুযোগ দেয়া হয়েছে।’

সিইসি বলেন, ‘নির্বাচন আয়োজন কমিশনকে করতে হয়। তবে ইসির একক শক্তিকে নির্বাচন আয়োজন সম্ভব নয়। নির্বাচন পরিচালনার জন্য আমরা যত জনশক্তি চাইব সরকার তা দিতে বাধ্য। নির্বাচনের সময় নির্বাচন কমিশনেরঅধীনে তাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে। বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থা এখনও একটি স্থিতিশীল অবস্থানে এসে থিতু হতে পারেনি। আমরা স্বাধীনতার পর থেকে দেখেছি, নির্বাচন পুরোপুরি শান্তিপূর্ণ হয় না। কিন্তু মোটামুটি যদি গ্রহণযোগ্য হয় তাহলেই সেটা নির্বাচন।’

নির্বাচনে সহিংসতা বন্ধে কঠোর হওয়ার নির্দেশনা দিয়ে তিনি বলেন, “নির্বাচনে কিছুটা উত্তাপ হবে, কিছুটা গণ্ডগোল হতে পারে, কিছুটা সহিংসতা হতে পারে। এগুলো খুব বেশি ধর্তব্যের মধ্যে পড়ে না। কিন্তু যেটা অসামান্য সহিংসতা সেটা অবশ্যই প্রতিরোধ করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে বিভিন্ন ধরনের অপরাধ হয়ে থাকে। আচরণবিধি লঙ্ঘনের অপরাধ হচ্ছে। ছোট বড় অপরাধ। ছোট ছোট অপরাধ হচ্ছে। কিছু কিছু সহিংসতা হচ্ছে। সহিংসতাকে কোনোভাবেই বরদাশত করা উচিত নয়। কারণ এটা জনমনে ভীতির সৃষ্টি করে। আমরা কখনও রক্ত দেখতে চাই না। মানুষকে আহত ও নিহত দেখতে চাই না। এ জন্য এটা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে নির্দেশনা দিয়েছি।’

ভোটারদের মধ্যে নির্বাচনের বিষয়ে একটি আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন জায়গায় গেলে ভোটাররা প্রশ্ন করেন আমরা ভোট দিতে পারব তো! যে কোনো কারণেই হোক একটা অনাস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে সেটা প্রতিরোধ করার ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। যে কারণে সেটা ভোটদানে সর্বজনীন হয়ে ওঠেনি। সেখানে সহিংসতা হয়েছিল। ২০১৮ সালের নির্বাচনটা অংশগ্রহণমূলক হয়েছে এবং শান্তিপূর্ণ হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীকালে সেই নির্বাচন নিয়েও বিতর্ক উত্থাপিত হয়েছিল। বিতর্কের অবস্থাটা জানি না, কিন্তু বিতর্ক হয়েছে। পাবলিক পারসেপশনটা ইতিবাচক হয়নি, এটাই সত্য।’

বিচারিক হাকিমদের উদ্দেশ করে সিইসি বলেন, ‘নির্বাচনে আপনাদের মাঠে অবস্থান ও বিচরণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে ভোটগ্রহণের দিনে আপনাদের দৃশ্যমান থাকতে হবে। আপনাদের বিচরণ সাধারণ জনগণের মধ্যে একটি আস্থার সৃষ্টি করবে। তারা নির্ভয়ে ভোট দিতে পারবেন বলে তাদের মধ্যে আস্থার তৈরি হবে।’

একটি অংশের নির্বাচন বর্জনের প্রসঙ্গ টেনে হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘নির্বাচনে সর্বজনীনতা কাম্য ছিল। দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বের একটি অংশ নির্বাচন বর্জন করেছে এবং তারা শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচনের বিরোধিতা… নির্বাচনের বিপক্ষে বক্তব্য রাখছে। সেটা সর্বজনীন প্যারামিটারের বিপক্ষে…। কেউ বিপক্ষে জনমত সৃষ্টি করতে পারেন। কিন্তু সহিংস পন্থায় যদি বিরুদ্ধাচরণ করা হয়। ভোটারদের যদি ভোটদানে বাধা দেয়া হয় তাহলে অবশ্যই সংকট দেখা দেবে। সেই সংকট মোকাবিলা আমাদের করতে হবে।