প্রতি রবি থেকে বৃহস্পতিবার পুঁজিবাজারের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে এনটিভি ‘মার্কেট ওয়াচ’ অনুষ্ঠানটি সম্প্রচার করে। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ বিবেচনায় তার গুরুত্বপূর্ণ অংশ নিয়ে শেয়ার বিজের নিয়মিত আয়োজন ‘এনটিভি মার্কেট ওয়াচ’ পাঠকের সামনে তুলে ধরা হলো:
অর্থনীতির দিক থেকে বিশ্ববাজারে চীন দ্বিতীয় অবস্থানে আছে। আর কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে চীনের দুই কনসোর্টিয়াম সাংহাই ও শেনঝেন দেশের বাজারে আসছে। এটি পুঁজিবাজারের জন্য অবশ্যই বড় একটি বিষয়। তারা মূলত দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন জায়গায় কৌশলগত বিনিয়োগ করে থাকে। প্রাথমিক পর্যায়ে তাদের প্রধান কাজ হবে বিশ্ববাজারে বা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তারা আমাদের বাজারকে ব্র্যান্ডিং করার চেষ্টা করবে। এছাড়াও বিভিন্ন প্রোডাক্টের বৈচিত্র্য বাড়ানোর চেষ্টা করবে। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়। খুজিস্তা নূর-ই-নাহারীনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আলোচক ছিলেন আইনজীবী ও পুঁজিবাজার বিশ্লেষক হাসান মাহমুদ বিপ্লব এবং আমারস্টক ডট কমের সিইও আলী জাহাঙ্গীর। অনুষ্ঠানটি গ্রন্থনা ও সম্পাদনা করেন হাসিব হাসান।
হাসান মাহমুদ বিপ্লব বলেন, অর্থনীতির দিক থেকে বিশ্ববাজারে চীন দ্বিতীয় অবস্থানে আছে। আর কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে চীনের দুই কনসোর্টিয়াম সাংহাই ও শেনঝেনকে আমাদের বাজারে পেয়েছি। এটি পুঁজিবাজারের জন্য অবশ্যই বড় একটি বিষয়। তারা মূলত দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন জায়গায় কৌশলগত বিনিয়োগ করে থাকে। প্রাথমিক পর্যায়ে তাদের সম্পৃক্ততায় একটি বিষয় ঘটবে। তা হচ্ছে, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তারা আমাদের বাজারকে ব্র্যান্ডিং করার চেষ্টা করবে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের আরও কিছু প্রোডাক্টের বৈচিত্র্য বাড়ানোর চেষ্টা করবে। আমরা জানি ডিএসইর ইনকাম হয় লাগা এবং হাওলা চার্জ থেকে। যে কারণে তাদের প্রথমেই এসে ডিএসইর সঙ্গে পরিকল্পনা করতে হবে যাতে পুঁজিবাজারের টার্নওভার বাড়ে। ডিএসই খুব বেশি লাভজনক অবস্থায় নেই। ফলে প্রথমেই তাদের লক্ষ্য থাকবে, কয়েক বছরের মধ্যেই এক-দুই হাজার কোটি টাকার লেনদেন করার। তাছাড়া আমাদের বাজার মূলধন যেখানে তিন লাখ কোটি টাকার সেখানে স্বাভাবিকভাবেই এক হাজার কোটি টাকার টার্নওভার হওয়া উচিত। আর বাজার ভালো থাকলে দেড় থেকে দুই হাজার কোটি টাকাও হতে পারে। পাশাপাশি চীন বাজারে আসায় তাদের যারা প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী আছে তারা একটি স্বচ্ছ ধারণা পাবে এদের মাধ্যমে। তখন এফডিআই হিসেবে চীনের কিছু বিনিয়োগ দেশের বাজারে হবে বলে মনে করি। এখন দেশে বিদেশি বিনিয়োগ যা আছে তার অধিকাংশই মূলত ইউরোপভিত্তিক এবং আমেরিকার কিছু ফান্ডের সরাসরি বিনিয়োগ আছে স্টক মার্কেটে। কিন্তু চীনের সেভাবে পোর্টফলিওতে বিনিয়োগ নেই। যেখানে অনেক আগে থেকেই চীন আমাদের দেশের অন্যান্য জায়গায় যেমন বড় বড় সেতু, অবকাঠামো এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ আছে। সব মিলিয়ে দেশের উন্নয়ন সহযোগীদের মধ্যে চীন একটি বড় অংশীদার। কাজেই তারা আসলে বেশ বিছু ভালো কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করা যাবে বলে মনে করি। তবে কৌশলগত অংশীদারের সুফল রাতারাতি পাওয়া যাবে না। এটির সুফল পেতে হলে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। আশা করি এক বছর পরেই আমরা এর সুফল পেতে শুরু করব। এছাড়া চীন ৩৭ মিলিয়ন ডলার প্রযুক্তিগত সহায়তা দিতে চেয়েছে। এতে হয়তো ডিএসইর সক্ষমতাও অনেক বাড়বে।
আলী জাহাঙ্গীর বলেন, আমরা কৌশলগত বিনিয়োগ হিসেবে যা পেতে যাচ্ছি তাতে পুঁজিবাজারে দীর্ঘ সময়ের জন্য খুব ভালো একটি প্রভাব পড়বে বলে মনে করি। যা হয়তো পরবর্তী এক-দুই বছরের মধ্যেই আমরা দেখতে পাব। তিনি বলেন, বর্তমানে ব্যাংক খাতের অধিকাংশ শেয়ারেই নিম্মমুখী প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। অনেক শেয়ারই কিন্তু আগের নি¤œদরের কাছাকাছি প্রায় চলে এসেছে। ব্যাংক খাতে বিভিন্ন কেলেঙ্কারির কারণেই আমার মনে হয় এ খাতের এমন অবস্থা হয়েছে। এছাড়া পুঁজিবাজারে টেকনিক্যাল অনুসন্ধানে বলা হয়, সূচক পাঁচ হাজার ৪০০-৫০০ পয়েন্ট বাজারের জন্য একটি শক্তিশালী পর্যায়। সাধারণত বিনিয়োগকারীদের মানসিকতার ওপর ভিত্তি করে এমন মন্তব্য। কাজেই এখন থেকে পুঁজিবাজার যদি ওপরের দিকে না ওঠে তাহলে ধারণা করা হয় বাজার আরও নিচের দিকে ধাবিত হবে। অন্যদিকে পূর্ব অভিজ্ঞতায় বলা যায়, রমজান মাসে বাজার সাধারণত নি¤œমুখী প্রবণতায় থাকে।
শ্রুতিলিখন: রাহাতুল ইসলাম