Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 12:50 am

আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় চাল রফতানি করা যাচ্ছে না: কৃষিমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক: চাল রফতানির সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার কারণে বিদেশের বাজারে রফতানি করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক। গতকাল সচিবালয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের নিজ দফতরে অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্টার্নের সিনিয়র প্রফেসার ও অস্ট্রেলিয়ার ইন্টারন্যাশনাল রিসার্চ সেন্টারের পরিচালক প্রফেসর উইলিয়াম আর্মস্টাইনের নেতৃত্বে এক প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে আমাদের চাল প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে আছে। ফলে আফ্রিকান দেশগুলোতে চাল রফতানি করতে হবে। সেখানেও একটু সমস্যা রয়েছে। সে দেশগুলোতে যেতে হয় ডোনারদের মাধ্যমে। আশা করছি এক লাখ টনের মতো চাল ফিলিপাইনে যাবে। তারা পাঁচ হাজার টন এলসি করেছে। এ পাঁচ হাজার টন চাল যদি ভালো হয়, বাকি ৯৫ হাজার টন দ্রুত নেবে।’
তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে যারা পুরোনো থাইল্যান্ড, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম, তাদেরই সমস্যা হচ্ছে চাল রফতানিতে। আমরা আন্তর্জাতিক বাজারে না থাকায় ভালো সাড়া পাচ্ছি না। তবে চেষ্টা করছি আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশ করতে।’
কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘কৃষিতে আমাদের সাফল্য স্বপ্নের মতো। ইতোমধ্যে আমরা কৃষির বহুমুখীকরণের সাফল্য পেতে শুরু করেছি। ডালের উৎপাদন কীভাবে বাড়ানো যায়, সে চেষ্টা করা হচ্ছে। এজন্য পটুয়াখালী, খুলনা, ভোলা, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, বরগুনাসহ কোস্টাল এলাকাতে ডালের উৎপাদন বাড়ানোর চিন্তা করা হচ্ছে। আগে আমাদের ডাল হতো দুই থেকে তিন লাখ টন, এখন উৎপাদন বেড়ে হয়েছে আট লাখ টন। আগে পটুয়াখালীতে কোনো ডাল হতো না, এখন সেখানে দুই লাখ টন মুগ ডাল হচ্ছে। ফলে মুগ ডালের দাম কমেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া প্রধান লক্ষ্য ছিল। ধান আমাদের মূল খাদ্যশস্য। কৃষকরা ধানের দাম পাচ্ছে না। এটা নিয়ে সরকার উদ্বিগ্ন। চাষিরাও বিক্ষুব্ধ। এ পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের দিক থেকে কৃষিকে বহুমুখী করার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছি অনেক দিন থেকে, কিন্তু আমাদের জমি বাড়ছে না।
নতুন নতুন শিল্পকারখানা ও রাস্তাঘাট তৈরির কারণে জমি কমে যাচ্ছে। তাই কম জমি ব্যবহার করে যাতে বেশি উৎপাদন করা যায়, সে প্রযুক্তি নিয়ে ভাবতে হবে।’
কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘ফেলন ডাল দেশের মানুষ গ্রহণ করেছে। এখন এ ডালের উন্নত জাত দিতে চাই। এজন্য অস্ট্রেলিয়ার প্রতিনিধিরা এসেছেন। তারা একটি প্রকল্পের মাধ্যমে আমাদের ৩০ কোটি টাকা দিচ্ছেন ডালের জাত উন্নয়নের জন্য। এ জাতগুলো উন্নত করতে ও প্রকল্প পরিচালনায় তারা এটা ব্যয় করছেন। এ খাতে সরকার ২০ শতাংশ ব্যয় করে। আমরা কানাডা থেকে ডাল আমদানি করি। তারা আমাদের উন্নত জাত উৎপাদনে সহায়তার করছে। আমরা যদি রফতানি বাড়াতে পারি, তাহলে অনেক কিছুই রফতানি করা যাবে।’
কৃষিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়ার প্রতিনিধিদের বলেছিলাম, বায়োটেকনোলজির রিসার্সে আরও নতুন নতুন দামি দামি প্রযুক্তি আসছে। তারা আমাদের বলেছে, সেগুলো তোমাদের কেনার দরকার নেই। তোমরা আগে সক্ষমতা বাড়িয়ে পুরোনো বায়োটেকনোলজির ব্যবহার করো। এজন্য আমাদের দরকার ভালো বিজ্ঞানীর, যাতে যে সব যন্ত্রপাতি আছে সেগুলো ব্যবহার করতে পারি। এত দামি যন্ত্রপাতি কেনার প্রয়োজন নেই। সরকার কৃষকদের সহযোগিতার জন্য পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি নেপালে আমরা ভুট্টা রফতানি করেছি। ফলে ভুট্টার দাম একটু বেড়ে গেছে। আমাদের দক্ষিণ এলাকায়ও ভুট্টা উৎপাদনের উপযোগী স্থান। যেমন আগে ভুট্টা হতো ১৩ লাখ টন বর্তমানে ৪৬ লাখ টন হচ্ছে। এগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে বিভিন্ন পোলট্রি ফার্মে ও পশ খাদ্য হিসেবে। আমরা উৎপাদন বাড়িয়েছি। এখন অনেকটা ভুট্টায় স্বংয়সম্পূর্ণ। বর্তমানে আমাদের চাহিদা রয়েছে ৬০ লাখ টন। আমাদের মাত্র ১২ লাখ টন আমদানি করতে হয়।’