Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 4:03 pm

আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে সুবিধা গ্রহণে নীতিমালা সংস্কার জরুরি

নিজস্ব প্রতিবেদক: কভিড-১৯ পরবর্তী আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সুবিধা গ্রহণ করতে দেশের বিদ্যমান বাণিজ্য নীতিমালা সংস্কার করা জরুরি বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। গতকাল রিসারজেন্ট বাংলাদেশ আয়োজিত ‘কভিড-১৯ সময়ে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য: বাংলাদেশে-এর প্রভাব এবং উত্তরণ’ শীর্ষক এক ওয়েবিনারে এসব কথা বলেন বাণিজ্য খাতসংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়বিষয়ক সংসদীয় স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান তোফায়েল আহমেদ ছিলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তোফায়েল আহমেদ বলেন, গত অর্থবছরে আমাদের রপ্তানি আয় ছিল ৪৫ বিলিয়ন ডলার এবং এ বছর সেবা খাতসহ রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ৬৩ বিলিয়ন ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশি পণ্যে ও রপ্তানি বাজার বহুমুখীকরণ করতে হবে, এক্ষেত্রে বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসতে হবে।
তিনি বলেন, করোনার ফলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে এবং তার প্রভাব আমাদের অর্থনীতিতেও এসেছে। তিনি চীনের বাজারে বাংলাদেশের ৮২৬৫টি পণ্যেও শুল্কমুক্ত রপ্তানি সুযোগ-সুবিধা কাজে লাগানোর আহ্বান জানান, যার মাধ্যমে দুই দশমিক পাঁচ বিলিয়ন ডলার অতিরিক্ত রপ্তানি আয় অর্জন করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, সরকার কয়েক দফায় প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে, যা আমাদের ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে সহায়তা করবে। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার ব্যবসাবান্ধব এবং সরকারের পক্ষ হতে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদান করা হবে।
স্বাগত বক্তব্যে বিজনেস ইনিশিয়েটিভ ফর লিডিং ডেভেলপমেন্টের (বিল্ড) চেয়ারপারসন আবুল কাসেম খান বলেন, কভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে আমরা সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। সম্প্রতি আঙ্কাটার্ড রিপোর্টে বিশ্ব বাণিজ্য দুই দশমিক ছয় থেকে ছয় ট্রিলিয়ন ডলার হ্রাস পাওয়ার প্রাক্কলন করেছে। এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ৯ থেকে ২১ বিলিয়ন ডলার বাণিজ্য হ্রাস পাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, কভিড-১৯ পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ’র সাধারণ মানুষের ব্যক্তিগত চাহিদা কমে যাবে, এর ফলে আমাদের রপ্তানি খাতে বড় ধরনের ধাক্কা আসতে পারে। তিনি আরও বলেন, সরকার পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রণোদনার প্যাকেজ দিয়েছে, যা সময়োপযোগী, তবে দ্রুত সময়ে এ প্রণোদনার টাকা উদ্যোক্তাদের হাতে পৌঁছাতে হবে। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই, যদি আমরা করতে ব্যর্থ হলে, কভিড-১৯ পরবর্তী সময়ের বাণিজ্য সুবিধা অর্জনে আমরা ব্যর্থ হবো।
ওয়েবিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা চেম্বারের সভাপতি শামস মাহমুদ। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এবং বিশ্বব্যাংক ২০২০ সালে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য যথাক্রমে তিন শতাংশ ও দুই দশমিক এক-তিন দশমিক ৯ কমে যাওয়ার প্রাক্কলন করেছে। অন্যদিকে এডিবি মনে করে বর্তমান পরিস্থিতিতে বৈশ্বিক জিডিপি পাঁচ দশমিক আট ট্রিলিয়ন থেকে আট দশমিক আট ট্রিলিয়ন ডলার কমে যেতে পারে। ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, বিশ্বের বেশকিছু বড় কোম্পানি চীন থেকে তাদের কারখানা এবং ক্রয়াদেশ সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করছে, যেটি আমাদের দেশের জন্য বড় সুযোগ এবং এ ধরনের সুযোগ গ্রহণে আমাদের কার্যকর উদ্যোগ এখনই গ্রহণ করতে হবে।
ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, বন্দর হতে পণ্য খালাসের ধীরগতির কারণে উদ্যোক্তাদের ব্যবসা পরিচালনায় ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে আমরা প্রতিনয়তই বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় সক্ষমতা হারাচ্ছি। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বাংলাদেশের অবস্থান আরও সুদৃঢ় করার লক্ষ্যে ইকোনমিক ডিপ্লোমেসির ওপর গুরুত্বারোপ করে এফটিএ, পিটিএ ও টিকফা প্রভৃতি চুক্তির দ্রুত বাস্তবায়নের আহ্বান জানান তিনি।
সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো প্রফেসর ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, স্বল্পন্নোত দেশ হতে বাংলাদেশের উত্তরণ হলে আমাদের পণ্যের ওপর ১২ শতাংশ শুল্কারোপ করা হবে, যেখানে ভিয়েতনাম শূন্য শুল্ক সুবিধা নিয়ে পণ্য রপ্তানি করবে, এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং একটি বিষয়। তিনি বলেন, শিল্পায়ন কৌশল এবং বাণিজ্য কৌশলের মধ্যে সমন্বয় বাড়াতে হবে, যা আমাদের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে সক্ষমতা বাড়াবে। তিনি বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের ‘কমপ্রিহেনসিভ ইকোনমিক ট্রিটি’ স্বাক্ষরের মাধ্যমে বাংলাদেশের রপ্তানি বৃদ্ধির প্রস্তাব করেন।
মুক্ত আলোচনায় এমসিসিসিআই সভাপতি ব্যারিস্টার নিহাদ কবীর, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহীম, পিআরআইয়ের চেয়ারম্যান ড. জায়েদী সাত্তার, ঢাকা চেম্বারের প্রাক্তন ঊর্ধ্বতন সহসভাপতি ওয়াকার আহমেদ চৌধুরী এবং প্রাক্তন পরিচালক ব্যারিস্টার সামির সাত্তার প্রমুখ অংশগ্রহণ করেন।
এনার্জিপ্যাক গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হুমায়ুন রশিদ বলেন, আমাদের বিশাল জনসংখ্যার জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা খুবই চ্যালেঞ্জিং এবং এক্ষেত্রে লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং খাত সম্ভাবনাময়, যার মাধ্যমে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রাও সঞ্চয় করা সম্ভব। তিনি বলেন, দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদান এবং বিতরণ একটি সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে, তবে এ খাতে দক্ষ জনবলের খুবই অভাব বলে মত প্রকাশ করেন। এ জন্য তিনি শিল্প খাতের চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষাব্যবস্থা আধুনিকায়ন করা জরুরি বলে মত প্রকাশ করেন।