আয়নাল হোসেন: পাবনা মানসিক হাসপাতাল আন্তর্জাতিক মানে রূপ নিচ্ছে। একই সঙ্গে দেশে আরও দুটি মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট হাসপাতাল স্থাপন করতে যাচ্ছে সরকার। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, এ কাজটি বাস্তবায়নের জন্য একটি বিশেষজ্ঞ কারিগরি কমিটিও ইতোমধ্যে গঠন করা হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানান, দেশের বয়স্কদের ১৬ শতাংশ এবং শিশুদের ১৮ শতাংশ লোক মানসিক সমস্যায় ভুগছে। মানসিক স্বাস্থ্য মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে সরকার কাজ করছে। এরই লক্ষ্য হিসেবে এমবিবিএস পর্যায়ে মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়ে কারিকুলামে ৫০ নম্বর করার পরিকল্পনা রয়েছে। যদিও বর্তমানে মাত্র ২০ নম্বর বিদ্যমান রয়েছে। মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে উন্নত ডিগ্রি, চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। দুটি বিভাগে ১০০ শয্যার দুটি মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট হাসপাতাল হবে। এখানে কেবিন ও অন্যান্য শয্যা থাকবে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১৯ অক্টোবর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সেবা বিভাগের সচিবের নেতৃত্বে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে পাবনা মানসিক হাসপাতালকে আন্তর্জাতিক মানে রূপান্তর এবং চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে আরও দুটি মানসিক হাসপাতাল তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য একটি বিশেষজ্ঞরা আলোচনায় অংশগ্রহণ করে চারটি সিদ্ধান্ত দেন।
প্রথম সিদ্ধান্ত হলো পাবনা মানসিক হাসপাতালকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীতকরণ এবং আরও দুটি হাসপাতাল নির্মাণে বিষয়ে ঊর্ধ্বতন ১০ জন কর্মকর্তার সমন্বয়ে একটি বিশেষজ্ঞ টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করা হয়। নিউরো ডেভেলপমেন্টাল ডিজঅ্যাবিলিটি প্রটেকশন ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. গোলাম রব্বানীকে আহ্বায়ক করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হচ্ছেনÑস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. ফারুক আলম, পাবনা মানসিক হাসপাতালের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. এনায়েতুল করিম, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সাইকিয়াট্রিস্টের সভাপতি অধ্যাপক ডা. ওয়াজিউল আলম, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মানসিক বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সালাউদ্দিন কাউসার, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. মোহিত কামাল, বাংলাদেশ সাইকিয়াট্রিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ডা. তারিকুল আলম, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের যুগ্ম সচিব (সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা) ও জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দারকে সদস্য সচিব করা হয়।
দ্বিতীয় সিদ্ধান্ত হলো কমিটি আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন প্রযুক্তিনির্ভর আরও দুটি মানসিক হাসপাতালের একটি চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের যে কোনো সুবিধাজনক স্থানে এবং অন্যটি খুলনা ও বরিশাল বিভাগের যে কোনো সুবিধানজনক স্থানে স্থাপনের জন্য পরিকল্পনা প্রণয়ন করবে।
তৃতীয় সিদ্ধান্ত হলো গঠিত কমিটি ইত্যবসে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিবের নেতৃত্বে পাবনা মানসিক হাসপাতালটি সরেজমিন পরিদর্শন করে জনবল পদায়ন, নতুন অবকাঠামো নির্মাণসহ আন্তর্জাতিক মানে উন্নীতকরণের সব মানদণ্ড উল্লেখপূর্বক প্রতিবেদন দাখিল করবে। দাখিলকৃত প্রতিবেদন নিয়ে পরবর্তী সময়ে সভা করে কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
চতুর্থ সিদ্ধান্ত হলো বিশেষজ্ঞ কমিটি প্রতিবেদনপ্রাপ্তির পর সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ এবং অংশীজনের সঙ্গে সভা করে বিস্তারিত পরিকল্পনা প্রণয়নপূর্বক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হবে।
মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট নির্মাণের বিষয়ে কারিগরি কমিটির আহ্বায়ক এবং নিউরো ডেভেলপমেন্টাল ডিজঅ্যাবিলিটি প্রটেকশন ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. গোলাম রব্বানীর কাছে জানতে চাওয়া হয়। তিনি শেয়ার বিজকে বলেন, চিকিৎসা বিদ্যা শিক্ষার সঙ্গে মানসিক স্বাস্থ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। দেশের বিভিন্ন হাসপাতাল সুপার স্পেশালাইজড হিসেবে রূপান্তর হয়েছে কিন্তু মানসিক স্বাস্থ্য পিছিয়ে রয়েছে। এজন্য এমবিবিএস পর্যায়ে মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর ৫০ নম্বর করার বিষয়ে কারিকুলাম পরিবর্তন করতে হবে। ইতোমধ্যে মানসিক স্বাস্থ্য আইন ও মেন্টাল হেলথ পলিসি তৈরি করা হয়েছে।
আহ্বায়ক আরও জানান, পাবনা মানসিক হাসপাতালটিতে জনবলের তীব্র সংকট চলছে। মাত্র ১২ জন চিকিৎসক দিয়ে হাসপাতালটি পরিচালিত হচ্ছে। যারা মানসিক চিকিৎসক হবেন তাদের যেন কোনো পর্যায়ে অবহেলা না করা হয় সেদিকে সবার নজর রাখতে হবে। নতুন দুটি হাসপাতালে রাজস্ব খাতে জনবল নেওয়া হবে। পাবনা মানসিক হাসপাতাল সরেজমিন ঘুরে সেখানকার জনবল ও অবকাঠামো কী পর্যায়ে রয়েছে, তা নিয়ে একটি প্রতিবেদন দেওয়া হবে। সার্বিক বিষয়ের ওপর আগামী সপ্তাহের মধ্যে তারা একটি প্রতিবেদন দাখিল করবেন। খুব শিগগিরই যাতে হাসপাতাল নির্মাণের কাজ শুরু করা যায় সে লক্ষ্যে কমিটি কাজ করছে বলে জানান তিনি।