Print Date & Time : 22 June 2025 Sunday 4:33 pm

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তা চায় বাংলাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক: অর্থ পাচার একক কোনো ব্যক্তি বা একক কোনো রাষ্ট্রের সমস্যা নয়, এটি একটি বৈশ্বিক সমস্যা। সব দেশ থেকেই অর্থ পাচারের ঘটনা ঘটে, যা সংশ্লিষ্ট দেশের অর্থনীতির বড় ধরনের ক্ষতি ডেকে আনে। আর পাচার হওয়া অর্থের একটি অংশই ব্যবহƒত হয় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে। ফলে অর্থ পাচার রোধ করা সব দেশের সামষ্টিক দায়িত্ব বলে মনে করে বাংলাদেশ। এর ধারাবাহিকতায় অর্থ পাচার রোধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তা চেয়েছে বাংলাদেশ।

রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে গতকাল এক সেমিনারে এমন বক্তব্য করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী এম শাহরিয়ার আলম। অর্থ পাচার রোধে ‘ন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজি অব প্রিভেনশন অব মানি লন্ডারিং অ্যান্ড কমব্যাটিং ফাইন্যান্সিং অব টেরোরিজম, ২০১৯-২১’ সেমিনারের আয়োজন করে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইনটেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) ও অর্থ মন্ত্রণালয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের সঞ্চালনায় অর্থ পাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন রোধে জাতীয় কৌশলপত্র ২০১৯-২১ নিয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের প্রধান আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, অর্থ পাচার কোনো একক ব্যক্তি বা একক দেশের সমস্যা নয়। এটি মানবতার শত্রু। আমরা একটি শান্তিপূর্ণ বিশ্বে বসবাস করতে চাই। অর্থ পাচার এক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকের ভূমিকা পালন করে। কারণ, পাচার হওয়া অর্থ পায় সন্ত্রাসীরা। যারা বিশ্বশান্তি নষ্টের প্রধান কারণ। তাই আমাদের অবশ্যই অর্থ পাচার প্রতিরোধ করতে হবে। তিনি বলেন, অর্থ পাচার রোধে বাংলাদেশ সরকার সব ধরনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। এ ব্যাপারে বিশ্বকে একত্রিত হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি। সব রাষ্ট্রের পারস্পরিক সহায়তা ছাড়া অর্থ পাচার রোধ করা সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেন অর্থমন্ত্রী। জলবায়ু পরিবর্তন যেমন একটি বৈশ্বিক সমস্যা, অর্থ পাচারও তেমনই এক সমস্যা বলে উল্লেখ করেন তিনি। অনুষ্ঠানে তিনি অর্থ পাচার রোধে উপস্থিত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনার, জাতিসংঘের প্রতিনিধিসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তা কামনা করেন।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শাহরিয়ার আলম বলেন, অর্থ পাচার একটি বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় যথোপযুক্ত পদ্ধতির প্রয়োগ বাঞ্ছনীয়। কারণ, যারা অর্থ পাচারের সঙ্গে যুক্ত, তারা সব সময় নতুন নতুন কৌশল অবলম্বন করেÑযা বিভিন্ন দেশের নিয়ন্ত্রক সংস্থার পক্ষে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে ওঠে। তাই অর্থ পাচার রোধে সংশ্লিষ্ট সবার দক্ষতা অর্জন খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

তিনি বলেন, অর্থ পাচার ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অর্থায়ন বন্ধে অসাধারণ উন্নতি করেছে বাংলাদেশÑযা সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় পদক্ষেপের কারণে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে অর্থ পাচার প্রতিরোধ আইন বিদ্যমান রয়েছে। এ আইনের অধীনে যে বিধিমালা ছিল, তা প্রয়োজনের তাগিদে যুগোপযোগী করা হয়েছে। গতকাল সেমিনারে যে কৌশলপত্র উপস্থাপন করা হয়, তা বাস্তবায়ন হলে অর্থ পাচার রোধে বাংলাদেশের সক্ষমতা আরও অনেক বাড়বে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

শাহরিয়ার আলম বলেন, পশ্চিমা বিশ্বের একটি দেশে ধর্মীয় মূল্যবোধ ব্যবহার করে প্রবাসীদের থেকে অর্থ সংগ্রহ করা হয়েছিল। সেই অর্থ বাংলাদেশে জঙ্গি, সন্ত্রাসবাদ ও মৌলবাদ উসকে দেওয়ার জন্য পাঠানো হয়। আমরা শত চেষ্টার পরও দেশটিকে বিষয়টি বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছি। সম্প্রতি দেশটি নিজেই এ সমস্যায় পড়ে বিষয়টি উপলব্ধি করেছে। পশ্চিমা দেশটির এ উপলব্ধি আগে হলে আমরা অনেক ক্ষতি সামাল দিতে পারতাম।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, এসব অভিজ্ঞতার পাশাপাশি কিছু সফলতার গল্পও আছে। একইভাবে সিঙ্গাপুরেও অর্থ সংগ্রহ করে বাংলাদেশে জঙ্গি অর্থায়নের চেষ্টা করা হয়েছিল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় সে সমস্যার সমাধানও করা গেছে। ফলে সিঙ্গাপুরে থাকা এক লাখ বাঙালি এসব থেকে সরে এসেছেন।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, অর্থ পাচার রোধে দুদক অনেক আগে থেকেই কার্যক্রম শুরু করেছে। তবে আজ (গতকাল) যে কৌশলপত্র প্রকাশ করা হলো, তা এক্ষেত্রে একটি জীবন্ত নথি হিসেবে কাজ করবে। তিনি বলেন, ২০০৮ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত সময়ে অর্থ পাচারের দায়ে দুদক ২২২ আসামিকে বিচারের মুখোমুখি করেছে। এ কার্যক্রম আরও জোরদার করতে দুদকের বিধিমালা সংশোধন করা হয়েছে বলে জানান তিনি। একই সঙ্গে বিএফআইউকে অর্থ পাচার রোধ কার্যক্রমে সমন্বয়কের ভূমিকা পালনের প্রস্তাব দেন ইকবাল মাহমুদ। তিনি জানান, অর্থ পাচারের ক্ষেত্রে ৮০ শতাংশ ঘটনাই সংঘটিত হয় আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের আড়ালে। তাই এ বিষয়ে গুরুত্ব দিতে বিএফআইউ’র দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।

এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, আন্ডার ইনভয়েসিং ও ওভার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে যে অর্থ পাচার সংঘটিত হয়, তা রোধে এনবিআর নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। এক্ষেত্রে জোরালো ভূমিকা রাখছে শুল্ক গোয়েন্দা ও এনবিআরের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল। পাশাপাশি শুল্ক স্টেশন ও কাস্টম হাউসগুলোকে আধুনিকায়ন করা হয়েছে।

সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব আসাদুল ইসলাম ও পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন।