‘ছাত্র-আন্দোলনে আহত: কাউকে চিনতে পারছে না কলেজছাত্র ইয়াশ’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে গতকালের শেয়ার বিজে। প্রতিবেদনের তথ্য, খেলতে যাওয়ার কথা বলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে কোটা সংস্কার আন্দোলনের কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছিল চট্টগ্রামের কিশোর ইয়াশ শরীফ খান। নগরের বহদ্দারহাটে শিক্ষার্থীদের অবরোধ চলাকালে সেখানে সশস্ত্র হামলা চালায় ছাত্রলীগ-যুবলীগসহ আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। হামলার শুরুতেই গুলিবিদ্ধ হয় ইয়াশের এক সঙ্গী। তাকে উদ্ধার করতে এগিয়ে গেলে গুলিবিদ্ধ হয় ইয়াশও। গুলিবিদ্ধ সঙ্গীকে কাঁধে তুলে নিয়ে ফেরার পথে ঘাতকের বুলেটে এফোঁড়-ওফোঁড় হয়ে যায় ইয়াশের বাঁ পায়ের উরু। সদা হাস্যোজ্জ্বল ইয়াশ এখন আর কাউকে চিনতে পারছে না।
চট্টগ্রাম বন্দর স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে সদ্য এসএসসি পাস করা ইয়াশ ভর্তি হয়েছিল নগরের ইসলামিয়া ডিগ্রি কলেজে। ইয়াশের মায়ের মৃত্যু হয় কিছুদিন আগে। বিবেকের তাড়নায় ১৮ জুলাই যোগ দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘোষিত ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচিতে। আন্দোলনের প্রাথমিক সাফল্য অর্থাৎ বিজয়ের পরও আহতদের কেউ হাসপাতালে মারা যাচ্ছেন, এমন খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে।
আগে সরকার ঘোষণা দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসার সমুদয় ব্যয় বহন করবে। এজন্য সরকারি-বেসরকারি হাসলপাতাল বা ক্লিনিকে চিকিৎসাধীনদের কাছ থেকে বিল না নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আহতদের সুচিকিৎসার প্রয়োজনে এবং আহত-নিহতদের তথ্য পাঠাতে হটলাইন নম্বর চালু করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। জাতীয় স্বাস্থ্য বাতায়ন হটলাইন এবং হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের হটলাইন নম্বরের মাধ্যমে আন্দোলনে আহতদের সুচিকিৎসার প্রয়োজনে এবং আহত-নিহতদের তথ্য জানানো যাবে।
এছাড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হতাহতের ব্যাপারে অনুসন্ধান করতে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করেছে। অন্যদিকে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরও (আইএসপিআর) জানিয়েছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা দেবে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ)। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আইএসপিআর বলেছে, আন্দোলনে আহত শিক্ষার্থীদের জরুরি ও উন্নত চিকিৎসা দিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। চিকিৎসাসেবা নিতে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের ঢাকা সিএমএইচের নির্দিষ্ট ফোন নম্বরে যোগাযোগ করতে অনুরোধ করা হয়েছে।
জুলাই থেকে শুরু হওয়া শিক্ষার্থী এবং চাকরি প্রত্যাশীদের কোটা আন্দোলন পরবর্তী সময় রূপ নেয় সরকার পতনের আন্দোলনে। ১৫ জুলাই দেশের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীদের দমাতে লাঠি, টিয়ারগ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে পুলিশ। পাশাপাশি সরকারি দল সমর্থিত ছাত্র সংগঠনের নেতৃত্বে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালানো হয়। ১৬ জুলাই গুলিতে রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদের মৃত্যু হলে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে। সেই থেকে গত ৫ আগস্টে সরকার পতন এবং পরবর্তী সহিংসতায় কত মানুষ আহত হয়েছেন তার সঠিক হিসাব সরকারের কাছে নেই। সরকারের উচিত বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় নিহত ও আহত ছাত্রজনতার তালিকা করে সমন্বিত পদক্ষেপ নেয়া এবং আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা।