নিজস্ব প্রতিবেদক: কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও গণতন্ত্রের মুক্তির জন্য বিএনপি আন্দোলন করছে বলে জানিয়ে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আন্দোলন আরও বেগবান হবে। দলের ৪১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে গতকাল রোববার সকালে মরহুম রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।
সকাল সোয়া ১০টায় মহাসচিবের নেতৃত্বে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ কয়েক হাজার নেতাকর্মী নিয়ে শেরেবাংলা নগরে জিয়াউর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন ও মোনাজাত করেন মির্জা ফখরুল।
পরে এক প্রশ্নে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা অবিলম্বে দেশনেত্রীর মুক্তি এবং গণতন্ত্রকে মুক্ত করার জন্য একটি নির্বাচন চাই। এ নির্বাচন হবে সম্পূর্ণভাবে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ। আমরা বলেছি, এ নির্বাচনের (একাদশ) ফল বাতিল করে একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে, নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে হবে। এ দুটি দাবিতে আমরা আন্দোলন করছি এবং আন্দোলন আরও বেগবান হবে।
১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ছয়টি রাজনৈতিক দল ও মতের অনুসারীদের এক মঞ্চে নিয়ে ‘জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’ গঠন করেন। তিন যুগ ধরে দলের নেতৃত্ব দিয়ে আসা প্রতিষ্ঠাতার স্ত্রী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া গত বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে দুর্নীতির দুই মামলায় কারাভোগ করছেন।
জিয়াউর রহমানকে বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, এটি দুর্ভাগ্য যে, দীর্ঘ ৪০ বছর পর আমরা আবার দেখতে পারছি সেই শক্তি, যে শক্তি গণতন্ত্রকে হরণ করেছিল, ধ্বংস আর হত্যা করেছিল, একদলীয় বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছিল, তারাই আজ সম্পূর্ণ অবৈধভাবে ক্ষমতায় এসে বিরোধী রাজনীতিকে ধ্বংস এবং ভিন্নমতের লোকদের নিশ্চিহ্ন করার হীন চক্রান্ত শুরু করেছে।
তিনি বলেন, এ চক্রান্তের ফলেই দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতাÑযিনি দীর্ঘকাল গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার জন্য সংগ্রাম করেছেন, লড়াই করেছেন এবং গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছিলেন ১৯৯০ সালে ৯ বছর আপসহীন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে, দেশে যিনি সংসদীয় গণতন্ত্র প্রবর্তন করেছিলেন, সেই নেত্রীকে বেআইনিভাবে, অন্যায়ভাবে দীর্ঘ ১৮ মাস কারাগারে আটক রেখে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করা হচ্ছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, এখানে এখন গণতন্ত্র নেই। অত্যাচার-নির্যাতনের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রের কাঠামোকে ধ্বংস করে ফেলা হচ্ছে। সেজন্যই বিএনপিকে আগামী দিনগুলোয় আরও ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সব দল-মতকে পুনরুদ্ধার করতে হবে, দেশনেত্রীকে মুক্ত করতে হবেÑএটাই হচ্ছে আজকে বিএনপির শপথ।
এর আগে ভোরে নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে দলীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচি শুরু হয়। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের পক্ষ থেকে পোস্টার ছাপানো হয়েছে।
লন্ডনে থাকা দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আলাদা বিবৃতিতে নেতাকর্মীদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন।
বিকাল ৩টায় রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আজ সোমবার বিকাল ৩টায় নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে বের করা হবে শোভাযাত্রা।