নিজস্ব প্রতিবেদক: খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর অনুমতির দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে জেলায় জেলায় স্মারকলিপি দেয়ার নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে তার দল বিএনপি।
দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সরকারকে হুশিয়ার করে বলেছেন, খালেদা জিয়াকে দ্রুত ‘মুক্তি না দিলে কঠোর থেকে কঠোরতর’কর্মসূচি দেবেন তারা। গতকাল ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিএনপির হাজার খানেক নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি বলেন, আমাদের সামনে এখন আর কোনো পথ খোলা নেই। আমাদের সামনে একটাই পথÑআন্দোলন, আন্দোলন আর আন্দোলন। এ আন্দোলনকে তীব্র করে সামনের দিকে আরও বেগবান করতে হবে।
নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করে ফখরুল বলেন, আগামী ২৪ তারিখে (বুধবার) আমাদের সব জেলা পর্যায়ের নেতারা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য, গণতন্ত্রের মুক্তির জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করবে এই হচ্ছে আমাদের পরবর্তী কর্মসূচি।
৭৬ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া বহু বছর ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, ফুসফুস, চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় ভুগছেন। গত ১৩ নভেম্বর থেকে তিনি বসুন্ধরায় এভারকেয়ার হাসপাতালের সিসিইউতে ভর্তি।
তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে সরকারের কাছে আবেদন করেছে তার পরিবার। কিন্তু সরকারের তরফ থেকে বলা হচ্ছে, যেহেতু দণ্ড স্থগিত করে শর্তসাপেক্ষে খালেদা জিয়াকে সাময়িকভাবে মুক্তি দেয়া হয়েছে, সেহেতু তাকে এখন বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দেয়ার সুযোগ নেই। তবে তিনি যদি কারাগারে ফিরে গিয়ে আবেদন করেন, সরকার তখন তা বিবেচনা করতে পারে।
তাকে বিদেশে পাঠানোর অনুমতির দাবিতে গত ২০ নভেম্বর ঢাকাসহ সারাদেশে সাত ঘণ্টার গণ-অনশন কর্মসূচি পালন করে বিএনপি। কেন্দ্রীয়ভাবে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সেই অনশন হয়।
সমাবেশে যোগ দিতে নেতা-কর্মীরা সকাল থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনের রাস্তা ও ফুটপাতে জড়ো হতে থাকেন। ‘মুক্তি মুক্তি মুক্তি চাই, খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই’, ‘খালেদা জিয়ার কিছু হলে জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে’ প্রভৃতি স্লোগান দেন তারা।
ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে আয়োজিত এ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালাম। মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান, দক্ষিণের সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু, উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হকসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতারা
উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘আমাদের একটাই কথা, আমরা আমাদের প্রিয় নেত্রী, আপসহীন নেত্রী, বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্য যার অবদান অনস্বীকার্য, সেই নেত্রীর নিঃশর্ত মুক্তি চাই। আর তিনি মুক্তি পেলে তার চিকিৎসার ব্যাপারে আমরা সুযোগ নিতে পারব, বিদেশে চিকিৎসা করাতে পারব।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘এ বিষয় নিয়ে কোনো আন্দোলন হওয়ার কথা নয়। ৭৬ বছর বয়স্ক একজন নারী, যিনি তিনবার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, দুবার বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন, যিনি স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছেন, যিনি দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী, তিনি আজকে গুরুতর অসুস্থ। ডাক্তাররা বলেছেন, তার চিকিৎসা এখানে সম্ভব নয়।’
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান বলেন, ‘আমরা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, সরকার আমাদের দেশনেত্রীকে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ না দিলে পরিণতি ভয়াবহ হবে। যতক্ষণ দেশনেত্রীকে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ না দেবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের কর্মসূচি চলবে। ঢাকা বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে।’
সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত বিএনপির এ সমাবেশ হয়। রাস্তার ওপর ভিড়ের কারণে যানবাহন চলাচলে বিঘœ ঘটে। সেজন্য সমাবেশে দুঃখ প্রকাশ করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম।
সভাপতির বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘সরকারকে বলেছি এই জায়গায় (জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে) বিএনপির সমাবেশ করার মতো জায়গা নেই। আমরা পুলিশ কমিশনারকেও বলেছিলাম, হয় আমাদের পার্টি অফিসের (নয়াপল্টনে) সামনে সমাবেশ করতে দিন, আর তা না হলে জায়গা নির্ধারণ করে দিন। কিন্তু এখন পর্যন্ত তারা আমাদের কথায় সাড়া দেয়নি।’
মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু এবং উত্তরের আমিনুল হকের সঞ্চালনায় সমাবেশে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভুঁইয়া, কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, শামা ওবায়েদ, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, শিরিন সুলতানা, মীর সরফত আলী সপু, আজিজুল বারী হেলাল, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, আবদুস সালাম আজাদ, নাজিমউদ্দিন আলম, মহানগর বিএনপির ইশরাক হোসেন, যুবদলের সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, মহিলা দলের সুলতানা আহমেদ, ছাত্রদলের ফজলুর রহমান খোকন প্রমুখ বক্তব্য দেন।