নিজস্ব প্রতিবেদক: আন্দোলন জমাতে না পেরে নির্বাচন ভণ্ডুল করতে বিএনপি এখন ড. ইউনূসকে নিয়ে ‘নতুন খেলা’ শুরু করেছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এ ‘অশুভ খেলা’ খেলতে দেয়া হবে না বলেও জানিয়ে দিয়েছেন তিনি।
সচিবালয়ে গতকাল বুধবার জাতির পিতার ৪৮তম শাহাদতবার্ষিকীর আলোচনায় ক্ষমতাসীন দলের নেতা বলেন, ‘মির্জা ফখরুল সাহেবরা আন্দোলন করে গোলাপবাগের গরুর হাটে হোঁচট খেয়েছেন। আন্দোলন এখন আর জমে না, বাজারে ভাটা পড়ে গেছে। এ অবস্থায় আবার নতুন খেলা ড. ইউনূসকে দিয়ে শুরু করেছেন, ওয়ান-ইলেভেনের দুঃস্বপ্ন দেখছেন। আন্দোলনে পারলেন না, হাসিনাকে কীভাবে হটাতে হবে? ওয়ান-ইলেভেনের মতো ইউনূসের নেতৃত্বে একটা নতুন সরকারÑএমন
কথবার্তা বাজারে আছে। সেই দুঃস্বপ্ন দেখছেন কি না? ওয়ান-ইলেভেনে ইউনূস সাহেব কম চেষ্টা করেননি, সেই নাগরিক ঐক্য, তখনও উনার খায়েশ ছিল, সে খায়েশ পূর্ণ হয়নি।’
বাংলাদেশকে নিয়ে বিশ্বের অনেক মোড়লের অনেক স্বপ্ন আছে জানিয়ে কাদের বলেন, ‘যারা একদিকে ইউনূস সাহেবের মামলা স্থগিত করতে বলে। মামলার কাগজপত্র, দলিল দস্তাবেজ ঠিক আছে কি না, যাচাই করতে এক্সপার্ট পাঠান- যেটা প্রধানমন্ত্রী বলেছেন। আপনারা হাওয়ায় একটা বিবৃতি ছেড়ে দিলেন! এর সঙ্গে একটু দ্বিধা লাগে যখন দেখি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন ওই বিবৃতির সঙ্গে পার্ট আছে। এটাকে সামনে রেখে বাংলাদেশের নির্বাচনকে বানচাল করা, বাংলাদেশ নির্বাচনে শান্তিপূর্ণ পরিবেশকে ভণ্ডুল করা, নতুন খেলা। পরিষ্কার বলতে চাই বাংলার মাটিতে এই খেলা, এই অশুভ খেলা আমরা খেলতে দেব না।’
শ্রম আদালতে ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলার কার্যক্রম এগিয়ে চলার প্রেক্ষাপটে ১০০ জন নোবেল বিজয়ী এবং বিভিন্ন দেশের ৬০ জন বিশিষ্ট নাগরিক একটি বিবৃতি দিয়েছেন, যেখানে ইউনূস ‘কারারুদ্ধ হতে পারেন’ বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে তাকে ‘হয়রানি’ বন্ধের আহ্বান জানানো হয়েছে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পর যে মানুষটি একটি শোকও প্রকাশ করেনি, চার জাতীয় নেতাকে জেলের মধ্যে মারল একটি কথাও তিনি বলেননি।
‘ড. ইউনূস আমাদের শহিদ মিনারে যান? কোনো দিন গেছেন? ড. ইউনূস আমাদের জাতীয় স্মৃতিসৌধে যান? কোনো দিন গেছেন? বন্যায়, জলোচ্ছ্বাসে তিনি কি কখনও সহানুভূতি প্রকাশ করেছেন? দেশে ভয়াবহ কভিডের যে আক্রমণ; তখনও ওই ইউনূস কোনো কথা বলেননি। আমাদের দেশে রক্তের বন্যা বয়ে যায় ড. ইউনূস কথা বলেন না। ’
‘আমি তাই আজ আপনাদের সামনে একটা কথা বলতে এসেছিÑযেই মানুষ আমার সুখ-দুঃখে নেই, বাংলাদেশের সুখে-দুঃখে নেই সে মানুষের জন্য আমাদের এত মায়াকান্না কেন? আমাদের সুখে-দুঃখে নেই, আমাদের কষ্টের সময়ে নেই, আমাদের দুখের সময়ে নেই, আমাদের শোকের সময়ে নেই, সেই মানুষের জন্য আমাদের এত দরদ কেন?’
নোবেল বিজয়ী ড. ইউনূসকে ‘শ্রেষ্ঠ মানুষ’ উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘নোবেল পেলেই কোনো অপরাধ করেও অব্যাহতি পেয়ে যাবেনÑএটা কোনো দেশের আইনে আছে? শ্রমিকের অর্থ আত্মসাৎ করেন যিনি, তার মতো নোবেলবিজয়ী শ্রেষ্ঠ সন্তানের আমাদের প্রয়োজন কী? শ্রমিকের অর্থ আত্মসাৎ করেছেন, মামলা করেছেন শ্রমিকরা।’
গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে ইউনূসকে অব্যাহতি দেয়ার বিষয়ে কাদের বলেন, ‘ব্যাংকের গঠনতন্ত্র আছে এমডি ৬০ বছর পর্যন্ত থাকবেন, তিনি ৭০ বছর বয়সেও সেখানে বসে আছেন। তখন আদালত সাব্যস্ত করেছেন তিনি বেআইনিভাবে আছেন, এটি কি আমরা বলতে পারব না? শ্রমিকের টাকা মেরে খেয়েছেন, ট্যাক্স ফাঁকি দিয়েছেন, আজকে এসব নিয়ে মামলা হয়েছে, আজকে যারা বিবৃতি দিয়েছেন নোবেল লরিয়েট, আরও ইন্টারন্যাশনাল ফিগার, ১৬০ জনের বেশি।’
এ বিবৃতি যেখানে বিজ্ঞাপন আকারে ছাপা হয়েছে, তাতে দুই মিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে দাবি করে আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ‘আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেবেন সেটার স্পেসের একটা হিসাব আছে। যে পত্রিকায় দিয়েছে দুই মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে, এ টাকা কোথায় পেল? এ অর্থ কোথা থেকে এল, সেটাও আজকে আমাদের দেখতে হবে।’
দীর্ঘ বক্তব্যে জাতির পিতা ও জাতীয় চার নেতাদের হত্যাকারী এবং ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলাকারীদের সঙ্গে ‘সহাবস্থানে থেকে’ রাজনীতি করতে হচ্ছে বলে খেদও প্রকাশ করেন ওবায়দুল কাদের।
বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ এবং বাংলাদেশ সচিবালয় বহুমুখী সমবায় সমিতি আয়োজিত শোক দিবসের আলোচনায় তিনি বলেন, ‘অত্যন্ত দুঃখ ভারাক্রান্ত হƒদয়ে আজ বলছি, আমরা এমন দুর্ভাগা দেশের বাসিন্দা, যে দেশে আমাদের রাজনীতি করতে হয় এই দেশের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, দেশের জন্মকালের চেতনার সঙ্গে যাদের বিরোধ। যারা ১৫ অগাস্টে জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা করে, অবলা নারী ও অবুঝ শিশুকে হত্যা করে, মেহেদি রাঙা হাত রক্তাক্ত করে, অন্তঃসত্ত্বা নারীকে হত্যা করে আমরা এমন দেশে আছি যেই দেশে আমরা রাজনীতিতে সহাবস্থান করছি পঁচাত্তরের খুনিদের সঙ্গে।’
‘জাতীয় চার নেতার যারা হত্যাকারী, তাদের সঙ্গে আমাদের রাজনীতি করতে হচ্ছে, আমরা সহাবস্থান করছি। ২১ অগাস্টে গ্রেনেড হামলাকারীদের সঙ্গে, তাদের সঙ্গে আমাদের রাজনীতি করতে হচ্ছে, এটা দুর্ভাগ্য।’
বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ‘স্বাধীনতার চেতনাবিরোধী, মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধবিরোধী শক্তিগুলোকেও সহাবস্থানে নিয়ে এসেছে। আজকে তারাই বড় বড় কথা বলে। গণতন্ত্রকে যারা হত্যা করে, ১৫ ফেব্রুয়ারি প্রহসনমূল নির্বাচন করে, এক কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার তৈরি করে, বিচারপতি আজিজের মতো দলীয় লোককে নির্বাচন কমিশনে প্রধান করে, হ্যাঁ-না ভোট করে, যেখানে ১১৪ শতাংশ ভোটও হ্যাঁ-তে পড়েছিল; এ শক্তির সঙ্গে আজকে গণতন্ত্রের কথা বলতে হয়। এ শক্তি গণতন্ত্র চায়! এদের সঙ্গে আমাদের রাজনীতি করতে হয়।’