বুলিমিয়া। এটি এক ধরনের মানসিক রোগ। একে ইটিং ডিসঅর্ডারও বলা হয়। বুলিমিয়া নার্ভোসও রয়েছে চিকিৎসাবিজ্ঞানে। এর অর্থ সাংঘাতিক ক্ষুধার্ত। এ রোগটি সাধারণত তরুণ-তরুণীদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। তবে এতে আক্রান্ত হতে পারে যে কোনো বয়সের পুরুষ ও নারী।
বুলিমিয়ায় আক্রান্তরা খাবার দেখলে নিজেকে সামলে রাখতে পারেন না। শুধু তা-ই নয়, তারা রাক্ষুসের মতো খেয়ে থাকেন। খাবারের পর হঠাৎ তাদের কাছে মনে হবে, তারা মোটা হয়ে যাচ্ছেন বা ওজন বেড়ে যাচ্ছে। এই ভেবে গ্রহণ করা খাবার বের করার জন্য অস্থির হয়ে যান। এমনকি খাবার বের করার জন্য গলা পর্যন্ত আঙুল ঢুকিয়ে দেন। বিভিন্ন ওষুধও খেয়ে থাকেন, যাতে বমি হয়ে খাবার বের হয়। অনেকে অতিরিক্ত ব্যায়াম করে যেন ওজন কমে যায়। কিন্তু এতে শরীরের অনেকটা ক্ষতি হয়ে যায়, যা তাদের চিন্তায় থাকে না।
কারণ
মনোচিকিৎসকরা বিভিন্ন গবেষণা করেছেন ঠিকই, কিন্তু বুলিমিয়া নার্ভোসে আক্রান্ত হওয়ার সঠিক কারণ এখনও খুঁজে পাননি। তবে এটি বংশগত কারণে হতে পারে বলে ধারণা করা হয়। বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞ মনে করেন, মস্তিষ্কের যে অংশ ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করে তা সঠিকভাবে কাজ না করলে এ সমস্যাটি দেখা দেয়। তবে বুলিমিয়া হওয়ার আরও কিছু কারণ রয়েছে।
# জীবনের কিছু বেদনাদায়ক ঘটনা। যেমন আপনজনের মৃত্যু, চাকরি হারানো, অথবা বিয়েবিচ্ছেদের কারণে বুলিমিয়া হতে পারে। এ ধরনের ঘটনায় অনেকে কিছুক্ষণ না খেয়ে থাকে। অনেকে দু-এক দিন না খেয়ে থাকে। এই না খেয়ে থাকার ফলে তাদের এক সময় ভীষণ ক্ষুধা পেয়ে যায়। এ সময় বেশি খেতে শুরু করে। খাওয়া শেষে বুঝতে পারে যে, অতিরিক্ত খাওয়া হয়ে গেছে। পরে সেই খাবারকে শরীর থেকে বের করার চেষ্টা করে
# মানসিক বা শারীরিক নির্যাতন
# সমবয়সিদের শারীরিক গঠনের সঙ্গে তুলনা করতে গিয়ে নিজের শারীরিক গঠনের প্রতি নেতিবাচক ধারণা
জন্মায় অনেকের। এ কারণেও বুলিমিয়া হতে পারে
# অভিনয়, মডেলিং কিংবা শারীরিক কসরতের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা পেশাগত কারণে বুলিমিয়ায় আক্রান্ত হতে পারে। কারণ তারা খাবারের সময় একটু বেশি খেয়ে ফেললে তাদের কাছে মনে হয় ওজন বেড়ে গেছে, এ সময় তা বের করার চেষ্টায় থাকে
# বিষন্নতা বা আবেগসংক্রান্ত কোনো সমস্যা থাকলে বুলিমিয়া হতে পারে। মানসিক বিপর্যয়ের কারণে মনে হতে পারে যে খাওয়া ঠিকমতো হচ্ছে না। এ অবস্থায় বেশি খেয়ে থাকে অনেকে। পরবর্তী সময়ে ভুল বুঝতে পেরে সেই গ্রহণ করা খাবার শরীর থেকে বের করে দিতে চায়
নেতিবাচক প্রভাব
বুলিমিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা মারাত্মক ঝুঁকির মুখে থাকে। কেননা যারা বুলিমিয়া রোগে আক্রান্ত হয়, তারা খাবার বের করার জন্য জোর করে বমি করার চেষ্টা করে। অনেকে রেচননাশক ওষুধ খেয়ে থাকে। এতে দেহের ইলেক্ট্রোলাইটিক ব্যালেন্স নষ্ট করে হয়ে যায়, ফলে দেহের পটাশিয়ামের মাত্রা অনেকটা কমে যায়। পটাশিয়াম কমে যাওয়ার ফলে শরীরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা যায়। এমনকি হƒৎপেশি দুর্বল হয়ে পড়তে পারে ও মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
চিকিৎসা
বুলিমিয়া একটি জটিল সমস্যা। এর চিকিৎসা যদি সময়মতো করা যায়, তাহলে সম্পূর্ণভাবে সেরে ওঠা সম্ভব। কিন্তু অনেকের ক্ষেত্রে সময়মতো চিকিৎসা করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। কারণ তারা লুকিয়ে রাখে তাদের আচরণগুলো, ফলে শনাক্ত করা সম্ভব হয় না। তাই এ বিষয়ে সতর্ক থাকা প্রয়োজন। এ রোগের চিকিৎসা পদ্ধতির মূলে রয়েছে কাউন্সেলিং ও থেরাপি। তাছাড়া চিকিৎসকরা অ্যান্টি-ডিপ্রেসেন্ট ধরনের ওষুধ খাওয়ার পরামর্শও দিয়ে থাকেন। তবে এই সমস্যার সঙ্গে যদি অন্য কোনো শারীরিক জটিলতা থাকে, তাহলে কিছুদিনের জন্য রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে। রোগীর শারীরিক ওজন খুব কম অথবা
বেশি হলে চিকিৎসকরা সঠিক ওজনে পৌঁছাতে খাওয়ার রুটিন তৈরি করে
দেবে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
বুলিমিয়ার প্রধান ও প্রাথমিক চিকিৎসা হচ্ছে, হঠাৎ করে অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণ করে সেটা আবার বের করে দেওয়ার চেষ্টা। এই মানসিকতা দূর করে স্বাভাবিকভাবে খাদ্য গ্রহণে অভ্যস্ত হতে হবে। প্রচণ্ড ক্ষুধা পেলে খেতে হবে, এমনটা না করে বরং কিছুটা ক্ষুধা অনুভব হলে খেতে হবে। সম্ভব হলে তিন ঘণ্টা পরপর খাওয়ার অভ্যাস করা উচিত।