নিজস্ব প্রতিবেদক: আপন জুয়েলার্সের মালিকের ‘অবৈধ সম্পদের’ খোঁজে রাজধানীর বিভিন্ন শোরুমে অভিযান চালিয়ে একটি শোরুম সিলগালা করে দিয়েছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত কর্মকর্তারা। গতকাল রোববার রাজধানীর গুলশান, উত্তরা, উত্তর বাড্ডা, মৌচাক, সীমান্ত স্কয়ারসহ পাঁচটি শোরুমে অভিযান চালিয়ে সুবাস্ত টাওয়ারের শোরুম সিলগালা করা হয়েছে বলে জানান শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর মহাপরিচালক ড. মইনুল খান।
রাজধানীর বনানীতে ‘দ্য রেইনট্রি’ হোটেলে দুই ছাত্রীকে ধর্ষণ ঘটনার পর আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদ ও তার ছেলে সাফাত আহমেদের ‘অবৈধ সম্পদের’ তথ্য গণমাধ্যমে প্রকাশের পর শুল্ক গোয়েন্দার পক্ষ থেকে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর মধ্যে গোয়েন্দারা বাংলাদেশ ব্যাংকে তাদের আর্থিক লেনদেনের যাবতীয় তথ্য তলব করেছে। শুল্ক মহাপরিচালক ড. মইনুল খান জানান, আজকের (গতকাল) অভিযানে সোনা ও ডায়মন্ডের বৈধ উৎস ও পরিশোধযোগ্য শুল্ক-কারাদি সম্পর্কে খোঁজ নেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, গত পাঁচ বছরে দেশে স্বর্ণের কোনো বৈধ বাণিজ্যিক আমদানি না থাকায় প্রাথমিকভাবে শুল্ক গোয়েন্দার কাছে তাদের স্বর্ণ ও ডায়মন্ডের ব্যবসায় ‘অস্বচ্ছতা’ প্রতীয়মান হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ২৮ মার্চ বন্ধুর সঙ্গে জš§দিনের অনুষ্ঠানে গিয়ে বনানীর ‘দ্য রেইনট্রি’ হোটেলে ধর্ষণের শিকার হন দুই বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া তরুণী। ওই ঘটনায় গত ৬ মে রাজধানীর বনানী থানায় অভিযুক্ত সাফাত আহমেদ, নাঈম আশরাফ ও সাদমান সাকিফসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন তারা। এরপর সাফাত আহমেদ ও সাদমান সাকিফকে বৃহস্পতিবার সিলেট থেকে গ্রেফতার করা হয়।
মামলার প্রধান আসামি সাফাত আহমেদ আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলে। আর সাদমান পিকাসো রেস্তোরাঁর অন্যতম মালিক ও রেগনাম গ্রুপের কর্ণধার মোহাম্মদ হোসেন জনির ছেলে। মামলার অন্য আসামিরা হলেন নাঈম আশরাফ (৩০), সাফাতের গাড়িচালক বিল্লাল (২৬) ও অজ্ঞাতনামা দেহরক্ষী। গ্রেফতার সাফাত ও সাদমান রিমান্ডে রয়েছে। বাকি তিন আসামিকে এখনও গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
এদিকে বনানীর ‘দ্য রেইনট্রি’ হোটেলে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া দুই ছাত্রীকে ধর্ষণের মামলার পর গতকাল ওই হোটেলে অভিযান চালিয়েছে শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ। অভিযানে ১০ বোতল মদ জব্দ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন অভিযানের নেতৃত্ব দেওয়া শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের উপপরিচালক শফিউর রহমান। এছাড়া বিয়ার, ওয়াকিটকি কভার জব্দ করা হয়। এ সময় হোটেল কর্তৃপক্ষ বিদেশি মদ ও ওয়াকিটকির কভারের বৈধ কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেনি বলে জানান ওই কর্মকর্তা।
অভিযান শেষে এক বিফ্রিংয়ে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের উপপরিচালক শফিউর রহমান জানান, হোটেল ব্যবসা শুরু করার ১৫ দিন আগে থেকে ভ্যাট দেওয়ার নিয়ম থাকলেও এ হোটেল কর্তৃপক্ষ মানেনি, যা ভ্যাট আইনের লঙ্ঘন হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা হোটেলের বেশ কিছু অনিয়ম দেখতে পেয়েছি। যাচাই-বাছাই করে দেখব। বিদেশি মদের যেসব বোতল জব্দ করা হয়েছে সেগুলোর কোনো বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারেননি হোটেল কর্তৃপক্ষ। এসব স্মাগলিং বলেই প্রমাণিত।
প্রসঙ্গত, শনিবার মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর ওই হোটেলে অভিযান চালায়। কিন্তু তারা সেখান থেকে কিছুই উদ্ধার করতে পারেনি। এছাড়া ওই দিন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের একটি তদন্ত টিম ওই হোটেল পরিদর্শন করে।
Add Comment