ক্রীড়া প্রতিবেদক: আগের দিন বিশ্বকাপের হাইভোল্টেজ ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দুই দেশ ভারত-পাকিস্তান। সেই তুলনায় একেবারেই লাইমলাইটের বাইরে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড বনাম আফগানিস্তান ম্যাচ। সেই ম্যাচে বোলিং তোপে ৬৯ রানে জয়ী হলো আফগানিস্তান।
গতকাল দিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুতেই হোঁচট খায় ইংল্যান্ড। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে ফজল হক ফারুকির বলে লাইন মিস করে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়েন জনি বেয়ারস্টো। এই ওপেনার অবশ্য রিভিউ নিয়েছিলেন, তবে বাঁচতে পারেননি।
দুর্দান্ত ফর্মে থাকা জো রুট উইকেটে থিতু হয়েও ইনিংস বড় করতে পারেননি। তিনে নেমে ফিরেছেন দ্রুতই। সপ্তম ওভারে মুজিবের গুগলিতে বোল্ড হয়েছেন তিনি। সাজঘরে ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে এসেছে ১৭ বলে ১১ রান।
আগের ম্যাচে সেঞ্চুরি করা ডেভিড মালান আজও শুরুটা দুর্দান্ত করেছিলেন। যতক্ষণ উইকেটে ছিলেন সাবলীল ছিলেন। ১৩তম ওভারে মোহাম্মদ নবির স্টাম্পের ওপরের নিচু হওয়া বলে বোকা বনেছেন। শর্ট মিড উইকেটে ক্যাচ দেয়ার আগে তার ব্যাট থেকে এসেছে ৩৯ বলে ৩২ রান।
টপ অর্ডার ব্যাটারদের ব্যর্থতার দিনে দলকে জয়ের পথে রাখার দায়িত্ব পড়েছিল জস বাটলারের ওপর। তবে অভিজ্ঞ এই ব্যাটার পারেননি, উল্টো দলের চাপ বাড়িয়েছেন। ১৮তম ওভারের দ্বিতীয় বলে নাভিন উল হককে সোজা ব্যাটে খেলতে গিয়ে বোল্ড হয়েছেন বাটলার। ৯ রান করে এই উইকেটকিপার ব্যাটার ফেরায় একশ’র আগেই ৪ উইকেট হারায় ইংল্যান্ড।
ছয়ে নেমে বাটলার-রুটদের পথেই হেঁটেছেন লিয়াম লিভিংস্টোনÑউইকেটে এসে থিতু হয়েছেন ঠিকই, কিন্তু ইনিংস বড় করতে পারেননি। ১০ রান করা এই ব্যাটার রশিদের গুগলিতে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়েছেন। দলীয় ১৩৮ রানের সময় নবীর বলে ক্যাচ আউট হন স্যাম কুরান। ১৬০ রানে সপ্তম উইকেট হিসাবে আউট হন ক্রিস ওকস। দলীয় ১৬৯ রানের সময় একপ্রান্ত আগলে রাখা হ্যারি ব্রুক ব্যক্তিগত ৬৬ রানে মুজিবের বলে আউট হলে ইংলিশদের কাছ থেকে ফসকে যায়। দলীয় ১৯৮ রানে আদিল ক্যাচ আউট হন রশিদ খানের বলে।
তার আগে ইংল্যান্ড টসে জিতে ফিল্ডিং নিয়ে বিপদে পড়েছিল। আফগানিস্তানের ওপেনার রহমানউল্লাহ গুরবাজের ব্যাট তাদের অস্বস্তিতে রেখেছিল। তবে প্রথম জুটি ভাঙতেই ছন্দ হারায়। শেষ দিকে ইকরাম আলখিলের ফিফটি এবং রশিদ খান ও মুজিব উর রহমানের ক্যামিওতে ২৮৪ রান করে আফগানরা। অথচ শুরুটা দেখে তিনশ রানের প্রত্যাশা উঁকি দিয়েছিল তাদের মনে।
টসে হেরে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ পেয়ে ইংল্যান্ডের ওপর চাপ তৈরি করতে চেয়েছিল। শুরুতে তারা সফল বলা চলে। রহমানউল্লাহ গুরবাজ ও ইব্রাহিম জাদরানের ব্যাটে ৬.৩ ওভারে ৫০ রান তুলে ফেলে তারা।
একই মানসিকতায় স্কোর একশতে নিয়েছেন দুই ওপেনার। ১৩তম ওভারের চতুর্থ বলে আফগানিস্তানের সেঞ্চুরি হয়। ৩৩ বলে ৭ চার ও ২ ছয়ে হাফ সেঞ্চুরি করেন গুরবাজ। ১৭তম ওভারে এই জুটি ভেঙে স্বস্তি ফেরায় ইংল্যান্ড। ইব্রাহিমকে ২৮ রানে জো রুটের ক্যাচ বানান আদিল রশিদ। ইংলিশ এই স্পিনারের পরের ওভারে আরও দুই ব্যাটার পরপর প্যাভিলিয়নে ফেরেন। রহমত শাহ ক্যাচ দেন জস বাটলারকে। ৫৭ বলে ৮ চার ও ৪ ছয়ে ৮০ রান করে রানআউট হন গুরবাজ। পরে ইকরাম আলখিল ছাড়া অন্য ব্যাটাররা বড় কোনো অবদান রাখতে পারেননি।
দুইশ’র আগে ছয় উইকেট হারানো আফগানিস্তানকে সম্মানজনক পুঁজি এনে দিতে ৬৬ বলে ৫৮ রান করেন আলখিল। সপ্তম উইকেটে ৪৩ রানের জুটিতে তার সঙ্গে দারুণ অবদান রাখেন রশিদ খান, তিন চারে করেন ২৩ রান।
শেষ দিকে মুজিব উর রহমানের সঙ্গে আল খিলের জুটিতে স্কোর আড়াইশ ছাড়ায়। মুজিবের ক্যামিও ইনিংসে তিনশর হাতছানি পাচ্ছিল আফগানরা। ১৬ বলে ৩ চার ও ১ ছয়ে ২৮ রান করে ৪৯তম ওভারে থামেন তিনি। ইনিংসের এক বল বাকি থাকতে নাভিন উল হককে রানআউট করে আফগানিস্তানকে গুটিয়ে দেন জস বাটলার। সর্বোচ্চ তিন উইকেট নিয়ে ইংল্যান্ডের সেরা বোলার রশিদ। মার্ক উড পান দুটি উইকেট।