শেয়ার বিজ ডেস্ক : পাকিস্তানের ভেতর দিয়ে ৫৭ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে অর্থনৈতিক করিডর তৈরি করছে চীন। এ করিডোরে আফগানিস্তানকেও অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা করছে দেশটি। বেইজিংয়ে তিন দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে এ আগ্রহের কথা জানিয়েছেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই। খবর এএফপি।
পাকিস্তানশাসিত কাশ্মীরের মধ্য দিয়ে চীন-পাকিস্তানের ওই অর্থনৈতিক করিডর চীনের ‘ওয়ান বেল্ট, ওয়ান রোড’ পরিকল্পনার অংশ। এর মধ্য দিয়ে এশিয়া, ইউরোপ ও এর বাইরের দেশগুলোর সঙ্গেও বাণিজ্যপথ খুলতে চায় চীন।
ওয়াং ই বলেছেন, ‘এ করিডরের ফলে পুরো অঞ্চল উপকৃত হবে। আফগানিস্তানের জনগণের জীবনমান উন্নয়নের তাগিদ আছে। তারা এমন উদ্যোগে সাড়া দেবে বলে আশা করছি।’
তাছাড়া পাকিস্তান ও আফগানিস্তান তাদের টানাপড়েনের সম্পর্কও মেরামত করতে রাজি আছে বলে জানান তিনি।
তালেবান জঙ্গিদের পাকিস্তানি মদদের অভিযোগ নিয়ে আফগান-পাকিস্তান সম্পর্ক বরাবরই ভালো যাচ্ছে না। আফগানিস্তানে ভারতের প্রভাব কমানোই পাকিস্তানের উদ্দেশ্য বলে অভিযোগ কাবুলের। তবে পাকিস্তান এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
চীন সম্প্রতি দু’দেশের মধ্যে সম্পর্কোন্নয়নে মধ্যস্থতার চেষ্টা করছে। আর পাকিস্তানও বলছে, তারা একটি শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল আফগানিস্তান দেখতে চায়।
চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং দু’দেশের সম্পর্ক মেরামতে রাজি থাকার কথা জানিয়ে বলেন, এর পরিপ্রেক্ষিতেই চীন ও পাকিস্তান পারস্পারিক সুযোগ-সুবিধার ভিত্তিতে আফগানিস্তান পর্যন্ত অর্থনৈতিক করিডোর সম্প্রসারণ করতে চাইছে।
তবে এজন্য তিন দেশের মধ্যে পর্যায়ক্রমে সমঝোতা হওয়া দরকার বলে ওয়াং উল্লেখ করেন।
‘ওয়ান রোড ওয়ান বেল্ট’ এ প্রকল্পের মাধ্যমে চীন এশিয়া, ইউরোপসহ সারা বিশ্বের সঙ্গে বাণ্যিজ্যের পথ সুগম করতে চায়। পাকিস্তানের সঙ্গে চীনের এ পরিকল্পনাটিতে ৫৭ বিলিয়ন কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। এ প্রকল্প চীনের সবচেয়ে উচ্চাভিলাষী প্রকল্পগুলোর একটি। এর মধ্যে সড়ক ও রেলপথ, ফাইবার অপটিক নেটওয়ার্ক, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলাসহ বহু প্রকল্প রয়েছে।
মনে করা হচ্ছে, এটি পাকিস্তানের অর্থনীতির নাটকীয় উন্নয়ন ঘটাবে। ইতোমধ্যে একটি রাস্তা চালু করার পর সে পথে পাকিস্তানের পণ্য পরিবহন শুরু হয়েছে।
এদিকে আফগানিস্তানকে নিয়ে চীনের এ পরিকল্পনায় সন্দিহান হয়ে উঠেছে ভারত। তালেবানের পতনের পর আফগানিস্তানে ভারতের প্রভাব ব্যাপক। তাই চীনের এ উদ্যোগকে ভারত ভালোভাবে নেবে না বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ভারতের ধারণা এর ফলে পুরো আফগানিস্তান ভারতের প্রভাবে চলে যেতে পারে।
তবে আফগানিস্তানকে এ প্রকল্পে যুক্ত করাকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে চীন। পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে যে উগ্রবাদী গোষ্ঠীগুলোর তৎপরতা রয়েছে, তা চীনের পশ্চিমাঞ্চলীয় জিন জিয়াং প্রদেশেও আঘাত হানতে পারে বলে মনে করে দেশটি। তাই চীন চায় পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে ভালো সম্পর্ক থাকলে এ সমস্যা সহজে মোকাবিলা করা যাবে।
এ প্রকল্পে পাকিস্তানশাসিত কাশ্মীরও অন্তর্ভুক্ত, যাকে ভারত তার নিজের অংশ বলে দাবি করে। যদিও চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, কোনো ধরনের সীমানা বিরোধের সঙ্গে তাদের এ প্রকল্পের কোনো সম্পর্ক নেই।