Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 4:05 pm

আফগানিস্তানে আরও দুই এনজিওর কার্যক্রম স্থগিত

শেয়ার বিজ ডেস্ক: আফগানিস্তানে আরও দুটি বিদেশি বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) তাদের কার্যক্রম স্থগিত করেছে। এ নিয়ে দেশটিতে ছয়টি এনজিও কার্যক্রম স্থগিত করল। খবর: এএফপি।

সবশেষ গত সোমবার ক্রিশ্চিয়ান এইড ও অ্যাকশনএইড আফগানিস্তানে কার্যক্রম স্থগিত করে। আগের দিন রোববার কেয়ার ইন্টারন্যাশনাল, দ্য নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিল (এনআরসি) ও সেভ দ্য চিলড্রেন একই সিদ্ধান্তের কথা জানায়। এছাড়া ইন্টারন্যাশনাল রেসকিউ কমিটিও আফগানিস্তানে কার্যক্রম স্থগিতের কথা জানিয়েছে। সংস্থাগুলো এদিন এক যৌথ বিবৃতিতে জানায়, ‘নারী কর্মীদের’ ছাড়া তারা কাজ চালাতে অক্ষম। বেসরকারি সাহায্য সংস্থাগুলো নারীরা যেন তাদের জন্য কাজ শুরু করতে পারে, সেই ‘দাবি’ জানায়।

গত শনিবার আফগানিস্তানের সরকার দেশটিতে দেশি-বিদেশি সব এনজিওতে নারীদের কাজ বন্ধ করার নির্দেশ দেয়।

সম্প্রতি আফগানিস্তানে নারীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা নিষিদ্ধ ঘোষণা করে তালেবান। এ ঘোষণার এক সপ্তাহ না পেরোতেই দেশটিতে এনজিওতে নারীদের কাজ বন্ধের নির্দেশ জারি করে তালেবান। এ নির্দেশ নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক সমালোচনা চলছে। তালেবানের এই নির্দেশের নিন্দা জানিয়েছে জাতিসংঘ। তারা বলেছে, এই পদক্ষেপ দেশটিকে পিছিয়ে নিয়ে যাবে।

জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ের শীর্ষ সমন্বয়ক রমিজ অলকবারোভ বলেছেন, জাতিসংঘ এ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করাতে চেষ্টা করছে। এটি ‘পুরো মানবিক সহায়তাকারী সম্প্রদায়গুলোর জন্য একটি লাল রেখা।’ এই কর্মকর্তা বলেন, তালেবান এনজিওগুলোয় দেশটির নারীদের কাজ করার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার না করলে জাতিসংঘ মানবিক সহায়তা বন্ধ করে দিতে পারে।

তালেবানের অর্থনীতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আবদেল রহমান হাবিব দাবি করেন, আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলোয় কর্মরত নারীকর্মীরা পোশাকবিধি মানছেন না। অন্য মন্ত্রীরা জাতিসংঘের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেছেন। তারা জানিয়েছেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এলাকায় এবং জরুরি অবস্থার ক্ষেত্রে কাজ চালিয়ে যেতে হবে। তবে তালেবান তাদের আদেশে আসলে কী বোঝাতে চেয়েছে, তা পরিষ্কার নয় বলে জানান রমিজ। কারণ হিসেবে জাতিসংঘের এই কর্মকর্তা বলেন, তালেবানের স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাতিসংঘকে বলেছেন, সংস্থাটি তাদের স্বাস্থ্যসংক্রান্ত কাজ চালিয়ে যেতে পারবে এবং ‘নারীরাও এ-সংক্রান্ত কাজ চালিয়ে যেতে পারবে।’

ক্রিশ্চিয়ান এইডের বৈশ্বিক কার্যক্রমের প্রধান রয় হাসান এক বিবৃতিতে জানান, আফগান সরকারের আদেশটির বিষয়ে তারা দ্রুত ব্যাখ্যা চাইছিলেন। নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জন্য তারা তালেবান কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দুর্ভাগ্যবশত তাদের সংস্থার কার্যক্রম স্থগিত করতে হচ্ছে।

অ্যাকশনএইড বলেছে, যদি সংস্থাটিতে নারীদের কাজ নিষিদ্ধ করা হয়, তবে তারা অর্ধেক জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছাতে ব্যর্থ হবে। এ জনগোষ্ঠী ক্ষুধার্ত অবস্থায় রয়েছে।

জাতিসংঘের মতে, আফগানিস্তানে দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে রয়েছে ৬০ লাখ মানুষ। দেশটি মানবিক, অর্থনৈতিক, জলবায়ু ও খাদ্য সংকটে রয়েছে। আগামী শীতে দেশটির মানুষ যেন বেঁচে থাকতে পারে, সেজন্য দাতাদের অবিলম্বে ৭৭০ মিলিয়ন ডলারের তহবিল দেয়া উচিত বলে জানায় জাতিসংঘ।

অ্যাকশনএইড এক বিবৃতিতে বলেছে, সংস্থাটি আফগানিস্তানে তার বেশিরভাগ কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধের কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

আফগানিস্তানের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোয় কয়েক ডজন বেসরকারি সংস্থা কাজ করে। সংস্থাগুলোর কর্মীদের বেশিরভাগ নারী। এখন নারীকর্মীদের ওপর নিষেধাজ্ঞার কারণে সংস্থাগুলোর কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হবে।

গত বছরের আগস্টে আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল করে তালেবান। ক্ষমতা দখলের পর তারা নারী অধিকার রক্ষার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতির বেশিরভাগ পূরণ হচ্ছে না বলে বিশ্লেষকদের অভিযোগ। চলতি মাসে আফগানিস্তানের উচ্চশিক্ষাবিষয়ক মন্ত্রণালয় পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নারীশিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। সিদ্ধান্তটিকে কেন্দ্র করে আফগানিস্তানে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়। আন্তর্জাতিকভাবেও আফগান সরকার সমালোচনার মুখে পড়ে।  এসব কারণে সহায়তা বন্ধ করে দিয়েছে দাতা সংস্থা ও দেশগুলো। আফগানিস্তানে সংঘাত, দারিদ্র্য, জলবায়ু পরিবর্তনের ধাক্কা ও খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা দীর্ঘদিন ধরে চলছে। তবে যে বিষয়টি বর্তমান পরিস্থিতিকে এত সংকটময় করে তুলেছে, সেটি হলো বড় ধরনের উন্নয়ন সহায়তাগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়া।