Print Date & Time : 18 June 2025 Wednesday 6:43 pm

আফগানিস্তানে মেয়েদের স্কুল বন্ধ করায় বিশ্বব্যাংকের প্রকল্প স্থগিত

শেয়ার বিজ ডেস্ক: মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে মেয়েদের পড়ালেখার সুযোগ বন্ধ করায় আফগানিস্তানে ৬০ কোটি ডলারের প্রকল্প স্থগিত করেছে বিশ্বব্যাংক। খবর: বিবিসি।

প্রকল্পের আওতায় এই অর্থ দিয়ে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষি খাতের উন্নয়নে ব্যয় করার কথা ছিল। এই প্রকল্প থেকে মেয়ে ও নারীরা যেন উপকৃত হতে পারেন এবং অংশগ্রহণ যেন বাড়ে, সে বিষয়গুলোয় দৃষ্টি দেয়া হয়েছিল বলে জানায় বিশ্বব্যাংক।

আফগানিস্তানে পুরুষদের মতো নারী ও মেয়েদের অধিকার নিশ্চিত করতে বেশ কয়েকটি প্রকল্প হাতে নিয়েছিল বিশ্বব্যাংক। আফগানিস্তান রিকনস্ট্রাকশন ট্রাস্ট ফান্ডের (এআরটিএফ) অর্থায়নে এসব প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। গত বছর তালেবান দেশটির নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর এই ফান্ড ফ্রিজ করা হয়।

দীর্ঘদিন পর ২৩ মার্চ আফগানিস্তানে খুলে দেয়া হয় মেয়েদের মাধ্যমিক স্কুল। ক্লাসে ফিরেছিল মেয়ে শিক্ষার্থীরা। তবে স্কুল খোলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ফের বন্ধ করে দেয়া হয়। সে সময় আফগানিস্তানের ক্ষমতাসীন তালেবান সরকারের মুখপাত্র ইনামুল্লাহ সামানগনি জানান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে ফের বন্ধ ঘোষণা করায় এই গোষ্ঠীর নীতি পরিবর্তনের বিষয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। স্কুলে আসার পর মেয়ে শিক্ষার্থীদের বাড়ি ফিরে যেতে বলার খবরের বিষয়টি নিশ্চিত করেন তিনি। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, হ্যাঁ, বিষয়টি সত্য। একটি নতুন পরিকল্পনা তৈরি না হওয়া পর্যন্ত স্কুল বন্ধ থাকবে। নতুন পরিকল্পনায় ‘শরিয়া আইন ও আফগান ঐতিহ্য’ অনুসারে মেয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য ইউনিফর্মের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার পর স্কুল চালু হতে পারে। অবশ্য এর আগে কর্তৃপক্ষ জানায়, চলতি বছর থেকে আর কোনো স্কুল বন্ধ থাকবে না। এখন সেই ঘোষণা থেকে সরে এলো তালেবান সরকার। ফলে আবার আশাভঙ্গ হয় আফগান মেয়ে শিক্ষার্থীদের।

খোলার পর আবার স্কুল বন্ধ ঘোষণা দেয়ার কারণে আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে পড়েছে তালেবান সরকার। গত শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যসহ ১০ দেশের কর্মকর্তাদের এক যৌথ বিবৃতিতে মেয়েদের স্কুল বন্ধের বিষয়ে তালেবানের পদক্ষেপকে ‘গভীরভাবে বিরক্তিকর’ বলে উল্লেখ করা হয়। এছাড়া তালেবানের সঙ্গে কাতারে অনুষ্ঠিতব্য একটি বৈঠক বাতিলের কথাও জানায় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর।

চলতি মাসের শুরুতে আফগানিস্তানে শিক্ষা, কৃষি ও স্বাস্থ্যসহ জরুরি প্রয়োজন মেটাতে ব্যয় করার জন্য ১০০ কোটি মার্কিন ডলার ব্যবহার করার একটি পরিকল্পনা অনুমোদন করে বিশ্বব্যাংকের নির্বাহী বোর্ড। তবে এই পরিকল্পনার অধীন বিপুল এই অর্থ তালেবান কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর না করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এর পরিবর্তে জাতিসংঘের সংস্থা ও এর সহায়ক গ্রুপের মাধ্যমে বিতরণ করার কথা বলা হয়।

১ মার্চ এক বিবৃতিতে বিশ্বব্যাংক জানায়, প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষি খাতে জরুরি প্রয়োজনের পাশাপাশি আফগান নাগরিকদের জীবিকা নির্বাহের জন্য প্রায় ৬০ কোটি ডলারের চারটি প্রকল্পের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন এআরটিএফ দাতারা। একই সঙ্গে শর্তসাপেক্ষে আরও বরাদ্দ দেয়া হবে। নির্ধারিত লক্ষ্য পূরণ হলে এই প্রকল্পগুলো আবার চালু করা হবে।

গত বছর ১৫ আগস্ট তালেবান আফগানিস্তানের মসনদে বসে। এরপর সেপ্টেম্বরের শুরুতে তারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রথম মন্ত্রিসভা ঘোষণা দেয়। অবশ্য সরকার গঠন করলেও বিশ্বের কোনো দেশ এখন পর্যন্ত তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দেয়নি। এর জেরে বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন দাতা সংস্থাও আফগানিস্তানে মানবিক সহায়তাসহ অর্থ সহায়তা বন্ধ করে দেয়। আফগানিস্তানকে স্বীকৃতি না দিলেও বারবার মানবাধিকার ও নারী অধিকারের বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়েছে তারা। তাদের অন্যতম দাবি ছিল, মেয়েদের শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। তালেবান সরকারের স্বীকৃতি ও আফগানিস্তানকে ত্রাণসাহায্য দেয়ার ক্ষেত্রেও নারী অধিকার ও শিক্ষার বিষয়টি তারা উল্লেখ করেছে।