Print Date & Time : 17 June 2025 Tuesday 11:15 am

আফতাব অটোমোবাইলস

‘বেটার প্রোডাক্ট বেটার সার্ভিস’ স্লোগান নিয়ে এগিয়ে চলেছে আফতাব অটোমোবাইলস। বাংলাদেশের পরিবহন খাতে এক নম্বর প্রতিষ্ঠান হওয়ার লক্ষ্যে নিরন্তর সেবা দিয়ে চলেছে প্রতিষ্ঠানটি।
অতীতে ইস্ট পাকিস্তান অটোমোবাইলস লিমিটেড নামে ব্যবসা পরিচালনা করত আফতাব অটোমোবাইলস। ১৯৬৭ সালের ঘটনা এটি। তখন প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি হিসেবে টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজার (জিপ) অ্যাসেমব্লিং করত প্রতিষ্ঠানটি। তখনকার দিনে ব্যবসা পরিচালনা মসৃণ ছিল না বর্তমানের মতো। বর্তমানে অ্যাসেমব্লিং প্লান্টটি চট্টগ্রামের ফৌজদারহাট হেভি ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেটে অবস্থিত। প্রায় ১২ দশমিক ৩৩ একর জমির ওপর দাঁড়িয়ে আছে প্লান্টটি।
প্রতিষ্ঠানটির তথ্যমতে, বেসরকারি খাতে দেশের শীর্ষস্থানীয় বড় বাস বডি বিল্ডিং প্রতিষ্ঠান এটি। নাভানা গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান। আফতাব অটোমোবাইলসের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে রয়েছে নাভানা ব্যাটারি লিমিটেড (এনবিএল)। এনবিএলের ৯৯ দশমিক ৯৫ শতাংশ শেয়ার আফতাব অটোমোবাইলসের অধীনে রয়েছে।
১৯৮১ সালে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে রূপান্তর করা হয় আফতাব অটোমোবাইলসকে। বৃহৎ পরিসরে ব্যবসা পরিচালনার জন্য এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরের বছরে তাই চমক নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। ১৯৮২ সালে অ্যাসেমব্লিংয়ের পাশাপাশি টয়োটা ও হিনো যানবাহনের যন্ত্রাংশও প্রস্তুত শুরু করে। ১৯৮৬ সালে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের তালিকাভুক্ত হয়। ১৯৯৬ সালে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে নিবন্ধিত হয় প্রতিষ্ঠানটি।
প্রতিষ্ঠার পর থেকে টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজার, ল্যান্ড ক্রুজার প্রাডো, হিনো বাস, হিনো মিনি বাস ও ট্রাক প্রভৃতি অ্যাসেম্বল করছে। ফৌজদারহাটের প্লান্টে বছরে প্রায় দুই হাজার ৪০০ ইউনিট ভেহিকেলস প্রস্তুত করছে। ভারী যানবাহনের বডি তৈরি করছে। একই সঙ্গে হিনো লাক্সারি বাস আরএম২-এর বডি ফেব্রিকেশনও করে। একে১জেএমকেএ মডেলের পরিবেশবান্ধব হিনো বাসও বাজারে এনেছে তারা। বাংলাদেশের বাজারে এ ধরনের বাসকে জনপ্রিয় করার পেছনে এই প্রতিষ্ঠানটির ভূমিকা রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির তথ্য অনুযায়ী, তারাই বাংলাদেশে প্রথম পরিবেশবান্ধব সিএনজি ইঞ্জিনচালিত বাস অ্যাসেম্বল শুরু করে। বলা হয়, একে১জেএমকেএ’ই দেশের প্রথম সিএনজিচালিত বাস।
আফতাব অটোমোবাইলসের প্রতিষ্ঠাতা দেশবরেণ্য শিল্পোদ্যোক্তা জহুরুল ইসলাম। ইসলাম গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা তিনি। এ মাসের ১৯ অক্টোবর তার ২৩তম মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা হয়। বাংলাদেশের ব্যবসায়িক জগতের একজন অগ্রদূত বলা হয় তাকে। দেশের অন্যতম সফল উদ্যোক্তা ছিলেন তিনি। বাংলাদেশের আবাসন ও নির্মাণশিল্পের সঙ্গে তার নাম জড়িয়ে রয়েছে। ১৯২৮ সালের ১ আগস্ট কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলার ভাগলপুরে তার জš§। ব্যবসার পাশাপাশি সমাজের উন্নয়নে তার ভূমিকা সুবিদিত। ছোটবেলা থেকেই স্বাধীনভাবে ব্যবসা করার আকাক্সক্ষা ছিল তার মধ্যে। পূর্ত ও নির্মাণশিল্পে তার আগ্রহ ছিল। কাজের মাধ্যমেই তিনি অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতেন। তিনি সবসময়ে নতুন পথে তার উদ্যোগ ও প্রতিভা বিস্তারের চেষ্টা করতেন। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নতিতে তার দৃঢ়বিশ্বাস ছিল। দেশের মানুষের আয় ও জীবনমান নিয়ে আশাবাদী ছিলেন। এই আশার ফলন দেখা গেছে তার আফতাব অটোমোবাইলস প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে। তার শ্রম, সততা, মেধা ও আত্মবিশ্বাস দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে পরিবর্তন এনেছে। তিনি রেখে গেছেন অনেক যোগ্য অনুসারী। আফতাব অটোমোবাইলস-সংশ্লিষ্ট সবার আদর্শ তিনি। তাদের পথপ্রদর্শক ও সব কর্মপ্রেরণার উৎস হয়ে আছেন।
বর্তমানে আফতাব অটোমোবাইলসে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন সফিউল ইসলাম (কামাল)। বিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক সম্পন্ন করে ১৯৬৮ সালে ইসলাম গ্রুপে কর্মজীবন শুরু করেন তিনি। অটোমোবাইলস বিজনেস, কনস্ট্রাকশন, রিয়েল স্টেট প্রভৃতিতে ক্যারিয়ার শুরু করেন। ক্যারিয়ারের শুরুতে ব্যবসার বিভিন্ন দিক নিয়ে কাজ করতেন। বিশেষ করে অটোমোবাইল খাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। এভাবে চলতে চলতে আফতাব অটোমোবাইলসের হাল ধরেন। পরে বেঙ্গল ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন ও ইস্টার্ন হাউজিং লিমিটেড নামে দুটি রিয়েল স্টেট কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন।
ব্যবস্থাপনা টিমের নেতৃত্বে রয়েছেন সাইফুল ইসলাম। এমবিএ ডিগ্রি রয়েছে তার। ১৯৯৭ সালে নাভানা গ্রুপে যোগ দেন। ২০০৬ সালে আফতাব অটোমোবাইলসে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব বুঝে নেন। একই সঙ্গে নাভানা সিএনজি লিমিটেডের প্রধান নির্বাহীর দায়িত্ব পালন করছেন। পরিচালনা পর্ষদে আরও রয়েছেন খালেদা ইসলাম, সাজেদুল ইসলাম ও ফারহানা ইসলাম।
অটোমোবাইল-সংশ্লিষ্ট মাত্রই জানেন যে, বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় বাস হচ্ছে হিনো একে১জে। এই অত্যাধুনিক নন-এসি বাসের পথচলা শুরু হয় আফতাব অটোমোবাইলসের মাধ্যমে। ব্র্যান্ডটিকে জনপ্রিয় করে তোলে প্রতিষ্ঠানটির মান ও সেবা। অবস্থা এমনই দাঁড়ায় যে, তখনকার দিনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিষ্ঠানগুলো অধিক যাত্রী ও জনপ্রিয় হওয়ার আশায় তাদের গাড়ির পাশে ও পেছনে হিনো একে১জে ট্যাগ ব্যবহার শুরু করে। সংগত কারণে একটি ব্র্যান্ডে পরিণত হয় এটি।

রতন কুমার দাস