আফ্রিকার কৃষি উৎপাদন কি বাড়বে?

শেয়ার বিজ ডেস্ক: আফ্রিকা মহাদেশের বেশিরভাগ দেশ কৃষিনির্ভর। দেশগুলোর ৬০ শতাংশ মানুষ এ খাতে জড়িত এবং জিডিপির ২৩ শতাংশ আসে এ খাত থেকে। পৃথিবীর দুই-তৃতীয়াংশ অব্যবহƒত চাষযোগ্য জমি রয়েছে আফ্রিকায়। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) ধারণা, মহাদেশে চলতি বছর দুই থেকে তিনগুণ বেশি শস্য, সিরিয়াল, হর্টিকালচার (বেষ্টনীর মধ্যে চাষাবাদ) ও পশু উৎপাদন হবে। তবে এ অঞ্চল কি জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব কাটিয়ে উঠতে পারবে? এতে কি কৃষি উৎপাদন বাড়বে আফ্রিকার? খবর: আফ্রিকা নিউজ।

ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোর (ডিআরকঙ্গো) অর্থমন্ত্রী নিকোলাস কাজাদি কাদিমা ব্যাখ্যা করেন, দারিদ্র্য এবং জ্বালানি ও পানির মতো মূল্যবান সম্পদের অভাব মহাদেশটির কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জনে

বড় বাধা। কঙ্গোর গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বন হারিয়ে যাচ্ছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বনজসম্পদ। তার মতে, উন্নয়নের প্রশ্নে সবার আগে দরকার পরিবেশের সুরক্ষা।

গ্লোবাল সেন্টার অন অ্যাডাপটেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) প্যাট্রিক ভেরকোইজেন বিশ্বাস করেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পিছিয়ে পড়ছে আফ্রিকার কৃষি খাত। এ মহাদেশে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় ভুট্টার আবাদ ৩০ শতাংশ কমে হবে বলে জানান তিনি। জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়া খরাসহিষ্ণু বীজ বপনের ওপর জোর দিয়েছেন প্যাট্রিক। তিনি বলেন, আমাদের বৃক্ষরোপণ করতে হবে। আমাদের ‘অ্যাগ্রোফরেস্ট্রি’-এর ব্যবহার বাড়াতে হবে। বিশ্ববাজারে প্রবেশের জন্য আমাদের গুণগতমানসম্পন্ন শস্য উৎপন্ন করতে হবে।

গ্লোবাল সেন্টার ফর অ্যাডাপটেশন ও আফ্রিকা উন্নয়ন ব্যাংক ২০২৫ সালের মধ্যে আফ্রিকার জন্য দুই হাজার ৫০০ কোটি ডলার তহবিল সংগ্রহের অঙ্গীকার করেছে। আফ্রিকা অ্যাডাপটেশন অ্যাকসিলারেশন প্রোগ্রামের আওতায় এই বরাদ্দের অর্ধেক তিন কোটি ক্ষুদ্র কৃষকের মধ্যে বিতরণ করা হবে।

আফ্রিকা উন্নয়ন ব্যাংকের ফিলিপ বোয়াহেন বলেন, প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় নেয়া নানা পদক্ষেপ মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি ও ভ‚পৃষ্ঠের জৈবসুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ এবং এতে উৎপাদনশীলতা বাড়বে। প্রকৃতি রক্ষায় প্রচুর বৃক্ষরোপণ করতে হবে। আমরা কৃষকদের বৃক্ষরোপণের সহায়তা করছি যাতে তারা অধিক উপার্জন করতে পারেন।

আফ্রিকা উন্নয়ন ব্যাংকের সঙ্গে অংশীদারিত্ব রয়েছে ঘানা সরকারের। তারা সাভান্না বিনিয়োগ কর্মসূচি বাস্তবায়নে যৌথভাবে কাজ করছে। এ কর্মসূচির আওতায় ভুট্টা, সয়াবিন, চাল ও অন্যান্য শস্যের উৎপাদন বাড়ানো হচ্ছে। ঘানার খাদ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের উপপরিচালক ও জাতীয় প্রকল্পের সমন্বয়ক ফেলিক্স দারিমানি বলেন, সাভান্না কর্মসূচি চালু করার আগে কৃষকরা সাধারণত হেক্টরপ্রতি দুই মেট্রিকটন ভুট্টা উৎপন্ন করতেন, যা বর্তমানে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ২৫ মেট্রিকটনে। সয়ার উৎপাদন বেড়ে হয়েছে হেক্টরপ্রতি ২ দশমিক ৫ মেট্রিকটন। বর্তমানে আমরা ৩ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিকটনের বেশি বিভিন্ন খাদ্যপণ্য উৎপন্ন করছি, যা ঘানার কৃষি খাতকে চাঙা করেছে।

সাভান্না বিনিয়োগ প্রকল্পের উদ্দেশ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে, প্রাণিজ আমিষের আমদানি কমানো, ঘানার খাদ্যনিরাপত্তা উন্নত করা এবং পোলট্রিশিল্পের প্রসার ঘটানো। এ প্রসঙ্গে ফিলিপ বোয়াহেন বলেন, ১ লাখ ২০ হাজার হেক্টর জমিতে ভুট্টা উৎপাদনে কৃষকদের সহায়তা করছেন ঘানার প্রেসিডেন্ট। চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তিন লাখ মেট্রিকটনের বেশি।

উত্তর ঘানার সাফল্যের ধারাবাহিকতায় আফ্রিকা উন্নয়ন ব্যাংক এই মডেলটির প্রয়োগ করতে চাইছে আফ্রিকার অন্য দেশগুলোয়। এর মধ্যে রয়েছে নাইজেরিয়া, জাম্বিয়া, আইভরি কোস্ট, উগান্ডা ও কেনিয়া। অর্থনৈতিকভাবে মহাদেশটির সবচেয়ে সমৃদ্ধ দেশ দক্ষিণ আফ্রিকার ৯টি প্রদেশের মধ্যে কৃষিপ্রধান ৬টি প্রদেশে বর্তমানে ড্রোন ব্যবহার করে কৃষি উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। খামারিরা মোবাইল ফোনে অ্যাপ দিয়ে নিজেরাও যাতে এসব ড্রোন পরিচালনা করতে পারেন সে ব্যবস্থাও চালু করার চেষ্টা চলছে। ড্রোনের ব্যবহার আফ্রিকার কৃষির চেহারা বদলে দিতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০