আচা লেকে ও ল্যান্ড্রি সিগনে: আফ্রিকা মহাদেশের উন্নয়ন ও যুগান্তকারী রূপান্তরে ভূমিকা রাখার ক্ষেত্রে স্থানীয় বাণিজ্যের বিপুল অবদান রাখার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু সে বিষয়ে মানুষের মধ্যে এক ধরনের অবমূল্যায়ন ও ভ্রান্ত ধারণা পরিলক্ষিত হয়।
একটি প্রশ্ন বিবেচনা করা যেতে পারে, তা হলো বার্ষিক আয় ১০০ কোটি ডলার বা এর বেশি, এমন কতগুলো কোম্পানি আফ্রিকায় আছে? অধিকাংশ বৈশ্বিক নির্বাহী ও বিশেষজ্ঞের ধারণা, মহাদেশটিতে এমন কোম্পানির সংখ্যা ১০০টিরও কম। অনেকে উত্তর দিয়েছেন ‘শূন্য’। কিন্তু বাস্তবতা হলো ৫৪টি দেশ নিয়ে গঠিত আফ্রিকায় বর্তমানে প্রায় ৪০০ কোম্পানি রয়েছে, যেগুলো গড়পড়তা দ্রুত বর্ধমান ও বৈশ্বিক সমজাতীয় ব্যবসার তুলনায় বেশ লাভজনক।
বিশ্বব্যাপী প্রবৃদ্ধি যখন ক্রমেই ধীরগতির দিকে যাচ্ছে, তখন দ্রুত বর্ধমান জনসংখ্যা ও বাজারের আফ্রিকা অঞ্চল ব্যবসার জন্য ভালো সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছে। তবে আফ্রিকার পণ্য ও সেবার চাহিদা পূরণে ব্যবসা ক্ষেত্রে বড় উদ্ভাবন ও বিনিয়োগ প্রয়োজন। একইসঙ্গে অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা, নতুন কর্মসংস্থান ও দারিদ্র্য কমাতেও এর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
এখানে আমরা আফ্রিকার প্রধান খাতগুলোয় ব্যবসার সুযোগের ব্যাপ্তি নিয়ে আলোচনা করব। এছাড়া বিনিয়োগকারীদের জন্য এ সুযোগ লাভজনক। টেকসই উদ্যোগের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার ধাপগুলো কী হতে পারে, তার পরামর্শ দেব।
ব্যবসায়ের সম্ভাবনাময় পাঁচ সুযোগ
২০০০ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত আফ্রিকায় বার্ষিক গড় জিডিপির প্রবৃদ্ধি হয়েছে পাঁচ দশমিক চার শতাংশ। মূলত প্রায় সমানতালে চলা শ্রম ও উৎপাদন প্রবৃদ্ধির দ্বারা এটি চালিত হয়েছে। ২০১১ সালের আরব বসন্ত এবং ২০১৪ সালে তেলের দামে ধস নামার কারণে কিছুটা নিম্নগামী হওয়ার পর আফ্রিকার প্রবৃদ্ধি আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছে। এছাড়া এর ভবিষ্যৎও বেশ সম্ভাবনাময় বলে মনে করা হচ্ছে।
বিশ্বব্যাংকের প্রকাশিত দুটি সূচক এ অঞ্চলের সম্ভাবনাকে স্পষ্ট করে। প্রথমত, বিশ্বের দ্রুত বর্ধমান ১০টি অর্থনীতির ছয়টিই আফ্রিকা অঞ্চলের দেশ। এর মধ্যে ঘানা শীর্ষে। দ্বিতীয়ত, বিশ্বব্যাংকের ২০১৯ সালের ডুয়িং বিজনেস সূচক অনুযায়ী বিশ্বের দ্রুত উন্নতি করা ১০টি দেশের মধ্যে পাঁচটিই আফ্রিকা অঞ্চলের। একইসঙ্গে বিশ্বের সংস্কারের মধ্যে দিয়ে যাওয়া অংশের এক-তৃতীয়াংশই আফ্রিকার
সাব-সাহারা অঞ্চলের।
অর্থনীতির গতি বৃদ্ধি ও ব্যবসার পরিবেশ উন্নত করতে পাঁচটি দীর্ঘমেয়াদি প্রবণতা দ্বারা এর যথার্থতা প্রমাণিত হয়। এর সবই গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক খাতগুলোতে রূপান্তরমূলক প্রবৃদ্ধির পথ সুগম করে দেয়।
সুযোগ-১: এ অঞ্চলের দ্রুত বর্ধমান জনসংখ্যা ও নগরায়ণ: আফ্রিকা অঞ্চলে বর্তমানে প্রায় ১২০ কোটি জনসংখ্যা রয়েছে, ২০৩০ সালের মধ্যে যা ১৭০ কোটি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আগামী কয়েক দশকে আফ্রিকায় মানুষের এই বৃদ্ধির ৮০ শতাংশই হতে পারে শহরাঞ্চলে। এতে এ অঞ্চল বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত নগরায়ণ হওয়া অঞ্চলে পরিণত হবে। একই সময়ে এ অঞ্চলের বড় অংশেই মানুষের আয় বৃদ্ধি পাবে। ফলে সেখানকার ভোক্তা বাজার নতুন ব্যবসায়ের সুযোগ তৈরি করবে।
আমরা আশা করছি, আফ্রিকার ভোক্তা ও ব্যবসায়ের বার্ষিক ব্যয়ের পরিমাণ ২০৩০ সালে প্রায় ছয় লাখ ৬৬ হাজার কোটি ডলারে দাঁড়াবে। ২০১৫ সালে এর পরিমাণ ছিল চার লাখ কোটি ডলার। এ প্রবণতা এমন কিছু উদ্দীপনাময় খাত দেখাচ্ছে, যেখানে আফ্রিকানদের ব্যাপক প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এর মধ্যে খাবার, পানীয়, ওষুধ সামগ্রী, আর্থিক সেবা, স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষার মতো খাতগুলো রয়েছে।
সুযোগ-২: আফ্রিকায় শিল্পায়ন হচ্ছে: আফ্রিকা অঞ্চলে শিল্পবিপ্লব হওয়ার ব্যাপারটি এখন প্রক্রিয়াধীন। সেখানকার উৎপাদনকারীরা প্রক্রিয়াজাত খাবার থেকে শুরু করে মোটরগাড়ির মতো যান্ত্রিক সামগ্রী উৎপাদন ক্রমেই বাড়াচ্ছে। আমরা হিসাব করে দেখেছি, এক দশকের মধ্যে আফ্রিকার শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর উৎপাদন বাড়িয়ে প্রায় দ্বিগুণ বা এক লাখ কোটি ডলারের কাছাকাছি নিয়ে যাওয়া সম্ভব। সেখানে এসব উৎপাদন ব্যবস্থা আমদানির বিকল্প হিসেবে ভূমিকা রাখতে পারে এবং ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণ করতে পারে। এছাড়া সেখানে আরও একটি সুযোগ রয়েছে। তা হলো, উৎপাদিত পণ্য রফতানি। এর ফলে আফ্রিকা অঞ্চল পরবর্তী প্রজন্মের উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠতে পারে, কারণ শিল্পগুলো এখন চীন থেকে কম খরচের অঞ্চলগুলোতে স্থানান্তরিত হচ্ছে।
চলমান এই শিল্পবিপ্লবের প্রক্রিয়ায় ধোঁয়া বের হওয়ার উঁচু চিমনি ছাড়া শিল্প যেমন পর্যটন, শস্য উৎপাদন এবং কিছু তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক সেবা রয়েছে। এগুলোও উন্নয়নের চালিকাশক্তি হিসেবে ভূমিকা রাখতে পারে। এ খাতগুলোর মধ্যে প্রচলিত উৎপাদন ব্যবস্থার তিন বৈশিষ্ট্য রফতানি সম্ভাবনা, উচ্চ উৎপাদনশীলতা ও শক্তিশালী শ্রমবাজার রয়েছে।
সুযোগ-৩: আফ্রিকা ক্রমেই অবকাঠামোগত দুর্বলতা কাটিয়ে উঠছে: আফ্রিকা অঞ্চলের দুর্বল অবকাঠামো ব্যবস্থাকে বিনিয়োগ ও প্রবৃদ্ধির জন্য অন্যতম অন্তরায় হিসেবে মনে করা হয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, প্রায় ৬০ কোটি আফ্রিকান বিদ্যুৎ ব্যবহার করার সুবিধা পান না। কিন্তু আফ্রিকার অবকাঠামো অন্যান্য উন্নয়নশীল অঞ্চলের তুলনায় এখনও পিছিয়ে থাকলেও এ খাতে উল্লেখযোগ্যহারে অগ্রগতি হচ্ছে। আফ্রিকা অঞ্চলে এখন অবকাঠামো খাতের বার্ষিক বিনিয়োগ চলতি শতাব্দীর শুরুর দিকের তুলনায় দ্বিগুণ বা প্রায় আট হাজার কোটি ডলারে পৌঁছেছে। এটা বিনিয়োগকারী ও উদ্যোক্তাদের জন্য বড় সুযোগ তৈরি করেছে। আফ্রিকা অঞ্চলে অবকাঠামোগত সমস্যা সমাধানের পথে থাকায় এ সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
সুযোগ-৪: কৃষি ও সম্পদ খাতে উদ্ভাবন: কৃষি ও খনিজ সম্পদের প্রাচুর্যের কারণে অনেক আগে থেকেই আফ্রিকা অঞ্চলের পরিচিতি রয়েছে। এখন পর্যন্ত এ সম্পদ যথাযথভাবে কাজে লাগানো ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন করতে আফ্রিকাকে রীতিমতো সংগ্রাম করতে হচ্ছে। নতুন উদ্ভাবন ও বিনিয়োগ এ চিত্রকে বদলে দিতে পারে। এছাড়া ব্যবসায়ের জন্য দারুণ প্রবৃদ্ধির সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ এ অঞ্চলের তেল ও গ্যাস খাতের কথা বলা যায়। আফ্রিকা অঞ্চলের বিশাল এলাকা এখনও অনাবিষ্কৃত এবং এটি উচ্চ সম্ভাবনাময় অঞ্চল। এছাড়া সেখানে জ্বালানি খাতের বিশাল চাহিদা রয়েছে। আমরা হিসাব করে দেখেছি, ২০২৫ সাল পর্যন্ত আফ্রিকা অঞ্চলের গ্যাসের বাজার বছরে ৯ শতাংশ হারে সম্প্রসারিত হবে। এ সময়ের মধ্যে তাদের চাহিদার অন্তত ৭০ শতাংশই নিজস্ব গ্যাসের মাধ্যমে পূরণ করা সম্ভব হতে পারে।
সুযোগ-৫: ডিজিটাল ও মোবাইল সুবিধা বৃদ্ধিতে সম্ভাবনা: ২০০৮ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত সময়ে নতুন ব্রডব্যান্ড সংযোগ সেবার ক্ষেত্রে আফ্রিকা অঞ্চলে সবচেয়ে দ্রুত বিস্তৃতি দেখা গেছে। এছাড়া মোবাইল ডেটা ট্রাফিক ব্যবস্থা ২০১৭ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে সাতগুণ বৃদ্ধি পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আফ্রিকায় অন্তত ১২ কোটি মানুষের মোবাইল ব্যাংকিংয়ের হিসাব (অ্যাকাউন্ট) রয়েছে। এটি সমগ্র বিশ্বের মধ্যে প্রায় ৫০ শতাংশ। এটি অনেক মানুষকে প্রচলিত ব্যাংকিং সেবায় আগ্রহী করে তুলেছে। এই প্রবণতা কোম্পানিগুলোকে উৎপাদনশীলতায় উন্নতি করা, লেনদেনে গতি আনয়ন ও আরও বড় বাজারে প্রবেশের সুযোগ করে দিয়েছে। এছাড়া এটি আফ্রিকা অঞ্চলের জিডিপিতে ২০২৫ সালের মধ্যে ৩০ হাজার কোটি ডলার যোগ করতে পারে বলে ধারণা করা হয়।
আফ্রিকার বিচিত্র দেশ ও শহরগুলোর সুযোগ-সুবিধার চিত্র: জনসংখ্যা, উন্নয়নের মাত্রা, প্রবৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতার দিক থেকে আফ্রিকার ৫৪টি দেশের মধ্যে ভিন্নতা রয়েছে। যেখানে নাইজেরিয়ায় ১৯ কোটি এবং ইথিওপিয়া ও মিসরে ৯ কোটি করে মানুষ রয়েছে, সেখানে আফ্রিকার অন্যান্য অধিকাংশ দেশের মানুষ দুই কোটির নিচে। একইভাবে আফ্রিকার মাত্র তিনটি দেশ ওই অঞ্চলের তিন-চতুর্থাংশ জিডিপির মালিক। ২০৩০ সালের মধ্যে আফ্রিকা অঞ্চলের প্রায় অর্ধেক গৃহস্থালির খরচ করবে এ তিনটি দেশ। এর মধ্যে নাইজেরিয়া ২০ শতাংশ, মিসর ১৭ শতাংশ ও দক্ষিণ আফ্রিকার থাকবে ১১ শতাংশ, যদিও অনেক ছোট দেশও আফ্রিকা অঞ্চলের জিডিপি ও ব্যয়ের ক্ষেত্রে অংশীদারিত্ব ক্রমেই বাড়াচ্ছে। আমরা আশা করছি, পূর্ব আফ্রিকা, ফ্রেঞ্চভাষী মধ্যাঞ্চল ও পশ্চিম আফ্রিকা ব্যয়ের ক্ষেত্রে আফ্রিকা অঞ্চলের গড় শেয়ারে নিজের অংশ ক্রমেই বৃদ্ধির দিকে রয়েছে।
একটি বড়সড় বাজারে ব্যবসা করতে গেলে কোম্পানিগুলোকে এর সেবার আওতায় থাকা দেশ ও শহরের একটি ভৌগোলিক পোর্টফোলিও ঠিক করে নিতে হবে। আমরা একটি কার্যপ্রক্রিয়া ঠিক করেছি ম্যাককিনসে আফ্রিকান স্থিতিশীলতা সূচক নামে। এটি ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীদের পোর্টফোলিওতে সমতা আনয়নের জন্য করা হয়েছে।
এই বিশ্লেষণ থেকে আফ্রিকা অঞ্চলের দেশগুলোকে তিনটি স্বতন্ত্র গ্রুপে ভাগ করা যায়। এ গ্রুপগুলো অন্তত আফ্রিকার এক-তৃতীয়াংশ জিডিপি নিয়ন্ত্রণ করে। গ্রুপগুলো হলো স্থিতিশীলভাবে এগিয়ে যাওয়া দেশ, দুর্বলভাবে এগিয়ে যাওয়া দেশ ও ধীরগতিতে এগিয়ে যাওয়া দেশ।
স্থিতিশীলভাবে এগিয়ে যাওয়া দেশ: এ অর্থনীতির দেশগুলো প্রবৃদ্ধির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সম্পদের ওপর তুলনামূলকভাবে কম নির্ভরশীল। এগুলো অগ্রগতি লাভ করছে মূলত অর্থনৈতিক সংস্কারের মাধ্যমে। এছাড়া তারা প্রতিযোগী সক্ষমতাও বাড়াচ্ছে।
দুর্বলভাবে এগিয়ে যাওয়া দেশ: এ শ্রেণির দেশগুলো দুর্বলতার তিনটি ধরনের মধ্যে অন্তত একটির ওপর অনেক বেশি নির্ভরশীল। এর মধ্যে অ্যাঙ্গোলা ও নাইজেরিয়ার মতো দেশ রয়েছে। এ দেশগুলো রফতানিযোগ্য সম্পদের ওপর অনেক বেশি নির্ভরশীল। এছাড়া ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোর মতো কিছু দেশ নিরাপত্তা কিংবা শাসনকার্য-সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে। এর বাইরে মোজাম্বিকের মতো কিছু দেশ সামষ্টিক অর্থনৈতিক জটিলতার মুখে রয়েছে। বিনিয়োগকারীদের জন্য এ শ্রেণির দেশগুলো আশাজাগানিয়া সম্ভাবনার কারণ হতে পারে। তবে তাদের ক্ষেত্রে ঝুঁকিও রয়েছে, যেগুলো সঠিকভাবে চিহ্নিত করা ও বোঝা প্রয়োজন।
ধীরগতিতে এগিয়ে যাওয়া দেশ: এই শ্রেণির দেশগুলোর মধ্যে তিউনিশিয়া ও লিবিয়ার মতো দেশ রয়েছে, যারা আরব বসন্ত দ্বারা প্রভাবিত। এছাড়া আফ্রিকার দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ দক্ষিণ আফ্রিকাও এ তালিকায় আছে। বিনিয়োগকারীদের এ শ্রেণির দেশগুলোতে প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা পরিমাপ করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। অথবা সেখানে এমনভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে, যাতে অন্যান্য অঞ্চলেও তা সম্প্রসারণ করা সম্ভব হয়।
আমরা বিনিয়োগকারীদের আফ্রিকার বিশেষ কিছু শহরেও বিনিয়োগ করার ব্যাপারে উৎসাহিত করছি। আগামী দশকের শেষ পর্যায়ে আফ্রিকায় অন্তত ৯০টি শহর থাকবে, যেখানকার অধিবাসী হবে অন্তত ১০ লাখ করে। আফ্রিকা অঞ্চলের প্রবৃদ্ধি নীতি-কৌশলে শহরগুলো মূল কেন্দ্রে রাখার ক্ষেত্রে দ্রুত নগরায়ণের ব্যাপারটি একটি ভালো কারণ হতে পারে।
আফ্রিকায় সফল হওয়া: আফ্রিকার সফল প্রতিষ্ঠানগুলো ভৌগোলিক ও খাত অনুযায়ী ব্যাপকভাবে ভিন্ন। তার পরও এ অঞ্চলের অপূরণীয় চাহিদাকে উদ্যোক্তা হওয়ার পথে সুযোগ হিসেবে নিতে তাদের চিন্তাভাবনা প্রায় সমান। সেখানে একটি ফলপ্রসূ পর্যায়ের ব্যবসা দাঁড় করানোর জন্য দীর্ঘমেয়াদে অঙ্গীকারবদ্ধ হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। এখন পর্যন্ত আফ্রিকার সবচেয়ে সফল ও বেশি মুনাফা করা ব্যবসাগুলো সাধারণত তাদের চ্যালেঞ্জগুলোকে উদ্ভাবনের একটি উদ্দীপনা হিসেবে দেখে থাকে।
আফ্রিকার সফল উদ্ভাবকরা তাদের ব্যবসায় সফল হতে এর সামনের বাধাগুলোর ব্যাপারে অত্যন্ত সচেতন। এছাড়া তাদের ব্যবসার দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিস্থাপকতার ব্যপারেও তারা খুবই সতর্ক। এক্ষেত্রে নাইজেরিয়াভিত্তিক ডানগোট ইন্ডাস্ট্রিজের কথা উদাহরণ হিসেবে বলা যায়। তারা বিপুল পরিমাণে পণ্য উৎপাদন করে আসছে, যা প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা অ্যালিকো ড্যানগোটকে আফ্রিকা অঞ্চলের অন্যতম শীর্ষ ধনী ব্যক্তিতে পরিণত করেছে। ড্যানগোট একটি ক্ষতিনিরোধী উৎপাদন ব্যবস্থা গড়ে তুলেছেন। মূলত সরবরাহ ব্যবস্থায় অনুভূমিক সংযুক্তিকরণ, নিজস্ব শক্তি সরবরাহ ব্যবস্থা, সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা বৃদ্ধি এবং আভ্যন্তরীণ উৎপাদন একাডেমি গড়ে তোলার মাধ্যমে তারা এক্ষেত্রে সফল হতে পেরেছেন।
আফ্রিকার উদ্ভাবকরা অত্যন্ত গভীর উদ্দেশ্যের আলোকে পরিচালিত হন। তারা আফ্রিকার উচ্চ দারিদ্র্যের হার নিবিড়ভাবে দেখেন। এছাড়া অবকাঠামো, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতার বিষয়েও তারা অবগত। তবে ব্যবসায় তারা কোনো বাধা দেখেন না, বরং মানবিক সমস্যাগুলো সমাধান করা তাদের দায়িত্ব বলে মনে করেন। প্যান-আফ্রিকান কোম্পানি ইকোনেট গ্রুপের চেয়ারম্যান স্ট্রাইভ মাসিয়িওয়া বলেছেন, ‘আফ্রিকা অঞ্চল অদ্ভুত ধরনের কিছু চ্যালেঞ্জযুক্ত এলাকা। যদি আপনি কোনো সমস্যা দেখেন, তখন চিন্তা করুন কীভাবে আপনি এর একটি অংশের সমাধান করবেন।’
আফ্রিকা অঞ্চলের সমস্যা সমাধান এবং উদ্ভাবনের মাধ্যমে বিশাল চাহিদা পূরণ করার জন্য যেসব উদ্যোক্তা প্রস্তুত, তাদের জন্য বিশাল প্রবৃদ্ধির সুযোগ অপেক্ষা করছে। এক্ষেত্রে অন্যতম নজির হিসেবে পেজার কথা উল্লেখ করা যায়। নাইজেরিয়াভিত্তিক মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সেবাদানের এই স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠানটি এক দশকেরও কম সময়ের মধ্যে আশি লাখ গ্রাহক তৈরি করতে পেরেছে। এ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বর্তমানে বছরে প্রায় ২০০ কোটি ডলার লেনদেন হচ্ছে। এ ধরনের উদ্ভাবনী ও সমস্যা সমাধানকারী আরও প্রতিষ্ঠান হিসেবে ভিয়োলা লেউইলিন, জো হাক্সলি ও অ্যাডাম গ্রুনেওয়ার্ল্ডের কথা বলা যায়। আফ্রিকা অঞ্চলে আরও অসংখ্য উদ্যোক্তা ও বিনিয়োগকারীর জন্য জায়গা রয়েছে। আমরা আশা করি, আপনিও তাদের মধ্যে একজন হতে পারেন।
আচা লেকে: জ্যেষ্ঠ অংশীদার ও আফ্রিকা অঞ্চলের চেয়ারম্যান, ম্যাককিনসে অ্যান্ড কোম্পানি
ল্যান্ড্রি সিগনে: ডেভিড এম রুবেনস্টাইন ফেলো গ্লোবাল ইকোনমি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট আফ্রিকা গ্রোথ ইনিশিয়েটিভ
ব্রুকিংস ডট এডু থেকে ভাবানুবাদ তৌহিদুর রহমান