নিজস্ব প্রতিবেদক: বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাচ্চুকে আবারও তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বাচ্চুর অবৈধ সম্পদ খুঁজতে অনুসন্ধান এবং সন্দেহজনক আর্থিক লেনদেন ও অর্থপাচারের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করছে দুদক। এরই অংশ হিসেবে আগামী ৭ মে তাকে নিজেদের কার্যালয়ে তলব করেছে সংস্থাটি।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, ৭ মে রাজধানীর সেগুনবাগিচাস্থ দুদকের প্রধান কার্যালয়ে হাজির হতে বাচ্চুকে তলবি নোটিস পাঠিয়েছেন দুদকের উপ-পরিচালক সামছুল আলম। গতকাল দুপুরে ওই চিঠিটি পাঠানো হয়েছে। দুদক পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেনের তত্ত্বাবধানে বাচ্চুর বিরুদ্ধে অভিযোগগুলোর অনুসন্ধান চলছে।
এর আগে গত বছরের ডিসেম্বর থেকে বাচ্চুকে চারবার তলব করে দুদক। গত বছরের ৬ ও ৮ ডিসেম্বর এবং চলতি বছরের ৮ জানুয়ারি ও ৮ মার্চ দুদক পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেনের নেতৃত্বে দুদকের একটি দল বাচ্চুকে জিজ্ঞাসাবাদ করে।
বেসিক ব্যাংকের সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা জালিয়াতির কেলেঙ্কারির ঘটনায় অভিযোগের আঙুল সবচেয়ে বেশি উঠেছে ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হাই বাচ্চুর দিকেই। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনেও বেসিক ব্যাংকের অর্থ কেলেঙ্কারির ঘটনায় আবদুল হাই বাচ্চুর সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি উঠে আসে। অর্থমন্ত্রী নিজেও বেসিক ব্যাংকের লুটের পেছনে আবদুল হাই জড়িত বলে উল্লেখ করেন। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে জাতীয় সংসদেও। এমনকি সংসদীয় কমিটির বৈঠকেও এজন্য ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন কমিটির সদস্যরা।
বেসিক ব্যাংকের ঋণসংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে বেসিক ব্যাংকের মোট বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ছিল দুই হাজার সাতশ কোটি টাকা। মাত্র চার বছর তিন মাস সময়ের ব্যবধানে এই ঋণ ছয় হাজার ৬৭৩ কোটি টাকা বেড়ে ২০১৩ সালে দাঁড়ায় ৯ হাজার ৩৭৩ কোটি টাকা। এই ছয় হাজার ৬৭৩ কোটি টাকার মধ্যে প্রায় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকাই দেওয়া হয় অনিয়মের মাধ্যমে।
বেসিক ব্যাংকের আর্থিক কেলেঙ্কারির বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে তা নিয়ে নানা মহলে আলোচনা শুরু হয়। প্রথম দিকে সরকার বিষয়টিতে নজর না দিলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে ব্যাংকটির বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাতের ঘটনা উঠে এলে নড়েচড়ে বসে সরকার। সরকার তখন ব্যাংকটি পুনর্গঠন করার সিদ্ধান্ত নেয়। ২০১৪ সালের ২৯ মে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিতে অর্থ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরপর ৪ জুলাই অর্থমন্ত্রীর বাসায় গিয়ে পদত্যাগপত্র জমা দেন ব্যাংকটির তৎকালীন চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাচ্চু।
বেসিক ব্যাংকের অর্থ কেলেঙ্কারির ঘটনায় এখন পর্যন্ত মামলা করা হয়েছে ৬১টি। এর মধ্যে ২০১৫ সালে রাজধানীর পল্টন, মতিঝিল ও গুলশান থানায় ৫৬টি মামলা করে দুদক, যেখানে বেসিক ব্যাংকের ২৭ কর্মকর্তা, ১১ জরিপকারী ও ৮২ ঋণ গ্রহণকারীকে আসামি করে দুদক। গত বছর আরও পাঁচটি মামলা করে সংস্থাটি।