আবারও পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করল ভারত

নিজস্ব প্রতিবেদক: আবারও পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে ভারত। গতকাল মৌখিক নির্দেশে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয় দেশটি। আর ভারতে রপ্তানি বন্ধের খবরে দেশের ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজ বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, চাহিদা পূরণে বিকল্প দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির সিদ্ধান্ত নেবে সরকার।

জানা গেছে, ভারতে অতিবৃষ্টি ও বন্যায় সরবরাহে ঘাটতি দেখা দেওয়ায় নিজ দেশের বাজারে মূল্য বৃদ্ধি ঠেকাতে ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে। তবে হিলির ব্যবসায়ীরা জানান, ভারত লিখিতভাবে এখনও রপ্তানি বন্ধ করেনি, তবে মৌখিকভাবে রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে। চিলি আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সভাপতি হারুন-উর-রশিদ শেয়ার বিজকে বলেন, গতকাল ভারতের দিল্লিতে কেন্দ্রীয় সরকারের বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে পেঁয়াজ রপ্তানির বিষয়টি উঠে আসে। তবে ভারত এখনও লিখিতভাবে সে তথ্য জানায়নি। গতকাল হিলি বন্দরে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৫৫ টাকা এবং ভারতীয় নাসিক ৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে বলে জানান তিনি।

এদিকে গতকাল ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ায় রাজধানীর পুরান ঢাকার শ্যামবাজারসহ অন্যান্য পাইকারি বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি বন্ধ রাখেন ব্যবসায়ীরা। দাম আরও বাড়লে মুনাফা বেশি করা যাবে, এ কারণে তারা পেঁয়াজ বিক্রি বন্ধ রেখেছেন বলে জানা গেছে। তবে এ বাজারের একজন পেঁয়াজ আমদানিকারক জানান, পেঁয়াজের বাজার নিয়ে সরকার কঠোর নজরদারি করছে। কেউ ইচ্ছা করলেই বেশি দামে বিক্রি করতে পারবে না। কারণ দাম বাড়িয়ে বিক্রি করা হলে তাতে কাগজপত্র অর্থাৎ ক্রয়-বিক্রয়ের পাকা রশিদ দেখতে চাওয়া হবে। এ ভয়ে কেউ পেঁয়াজ বিক্রি করছেন না।’

ওই ব্যবসায়ীরা আরও জানান, গত বছরের মতো পেঁয়াজের দাম এ বছর বাড়বে না। কারণ হিসেবে তিনি জানান, গত বছর বাজারে দেশীয় পেঁয়াজের মজুত ছিল খুবই কম। মাত্র পাঁচ শতাংশ পেঁয়াজ মজুত ছিল। কিন্তু এ বছর এখনও ৪০ শতাংশের বেশি পেঁয়াজ মজুত রয়েছে। মিয়ানমার থেকে স্বল্প সময়ের মধ্যে পেঁয়াজ আমদানি করা সম্ভব, কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে টেকনাফ সীমান্ত বন্ধ রয়েছে। সরকার যদি টেকনাফ বন্দর খুলে দেওয়ার জন্য মিয়ানমার সরকারের প্রতি অনুরোধ জানায়, তাহলে এক সপ্তাহের মধ্যে পেঁয়াজ দেশে আনা সম্ভব হবে। পেঁয়াজের সংকট কেউ তৈরি করতে পারবে না। এক মাসের মধ্যে দেশের বাজারে আমদানি করা পেঁয়াজ ঢুকে পড়বে। 

ভারত সরকার পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি শেয়ার বিজকে বলেন, ভারত আদৌ রপ্তানি বন্ধ করেছে কি না, সেটি এখনও নিশ্চিত জানা যায়নি। তবে ভারত সরকার যদি পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধই করে দেয়, তাহলে বিকল্প দেশ হিসেবে মিয়ানমার, তুরস্ক, চীন, পাকিস্তান ও ভিয়েতনাম থেকে আমদানি করা হবে। তবে এসব নির্ভর করছে ভারতের অফিশিয়াল সিদ্ধান্তের ওপর।   

জানা গেছে, সম্প্রতি ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে অতিবৃষ্টি ও বন্যা হয়। ফলে যেসব অঞ্চলে পেঁয়াজ উৎপাদন হতো সেখানে উৎপাদন ব্যহত হয়েছে। ফলে পেঁয়াজের সরবরাহ কমায় ভারতের বাজারেই পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। এ অবস্থায় পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধি রুখতে গতকাল সোমবার (১৪ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে ভারত সরকার হিলি কাস্টমসকে এ তথ্য জানিয়েছে। সে মোতাবেক কাস্টমস কর্তৃপক্ষ তাদের জানিয়েছে, সোমবার থেকে সব ধরনের পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ থাকবে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত। এ-সংক্রান্ত সরকারি প্রজ্ঞাপন এখনও জারি হয়নি। তবে অচিরেই জারি হবে বলে তিনি জানিয়েছেন। একই সঙ্গে পেঁয়াজ আমদানির জন্য যেসব এলসি খোলা রয়েছে এবং টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে, সেগুলোর বিপরীতেও কোনো পেঁয়াজ রপ্তানি হবে না।

সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে হঠাৎ পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে ভারত। গতকাল সকাল থেকে ভারতীয় কোনো পেঁয়াজের ট্রাক ভোমরা স্থলবন্দরে ঢোকেনি। তবে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের ব্যাপারে লিখিতভাবে কোনো কিছু জানানো হয়নি।

ভোমরা স্থলবন্দরের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান নাসিম জানান, হঠাৎ পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে ভারত। সকাল থেকেই কোনো পেঁয়াজের ট্রাক বন্দরে ঢোকেনি। তিনি বলেন, ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করতে গেলে দাম নির্ধারণ করে দেয় ন্যাপেট নামে একটি সংস্থা। বর্তমানে এক টন পেঁয়াজের রেট চলছে ৩০০ ডলার। সেটি সম্ভবত বাড়িতে ৫০০ বা ৭০০ ডলার নির্ধারণ করবে। সে কারণে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে ভারত।

সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের কোষাধ্যক্ষ মাকসুদ খান বলেন, বর্তমানে যে রেটে ভারতীয় রপ্তানিকারকরা পেঁয়াজ রপ্তানি করছেন, সেটিতে তাদের লোকসান হচ্ছে, যে কারণে ন্যাপেট পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করেছে। এছাড়া ভারতে পেঁয়াজের উৎপাদন কম। মূলত উৎপাদন কম ও কম মূল্যে রপ্তানি করতে না পারায় ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে।

ভোমরা স্থলবন্দর কাস্টমস সহকারী কমিশনারের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে গত ৬ সেপ্টেম্বর পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে ৮৫টি ট্রাকে এক হাজার ৮৭০ টন, ৭ সেপ্টেম্বর ৭৮টি ট্রাকে এক ৮৯৭ টন, ৮ সেপ্টেম্বর ৭৪টি ট্রাকে এক হাজার ৭৩০ মেট্রিক টন, ৯ সেপ্টেম্বর ৮৮টি ট্রাকে দুই হাজার ১৪৩ মেট্রিক টন, ১০ সেপ্টেম্বর ৫৪টি ট্রাকে এক হাজার ২৬২ মেট্রিক টন, ১২ সেপ্টেম্বর ৮২টি ট্রাকে এক হাজার ৭৯৮ মেট্রিক টন এবং ১৩ সেপ্টেম্বর ৭৪টি ট্রাকে এক হাজার ৭৩৬ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে।

গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর ভারত সরকার পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয়, আর সঙ্গে সঙ্গে দেশের ব্যবসায়ীরা পণ্যটির মূল্য হু-হু করে বাড়িয়ে দেন। এক দিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি ১০০ টাকা বেড়েছিল। গত বছর সর্বশেষ প্রতিকেজি পেঁয়াজের দাম ২৬০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছিল। পরে সরকার উড়োজাহাজের মাধ্যমে পেঁয়াজ আমদানি করে চাহিদা পূরণ করে। এ বছর দাম বেড়ে যাওয়ায় গত রোববার থেকে খোলা বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি করছে সরকার।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০