ভারী বর্ষণের কারণে লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর ও কুড়িগ্রামের চরাঞ্চল ছাড়াও কিছু নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। শুক্রবার পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ বার্তায় এমন শঙ্কার কথা জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। আবহাওয়া সংস্থাগুলোর তথ্যানুযায়ী, আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত রংপুর বিভাগ ও তৎসংলগ্ন উজানে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের (২৮৯ মিমি/২৪ ঘণ্টা) প্রবণতা রয়েছে এবং পরবর্তী দুদিনে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা কমে আসতে পারে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীর পানি সমতলে দ্রুত বাড়তে পারে।
আমাদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে নদীর অবদান অনেক। প্রতি বছরই কখনও নদীর ভাঙনে, কখনও দুকূল চাপিয়ে বন্যায় বিপুল ক্ষতি হয়। বন্যা ও নদীভাঙনের পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ সত্ত্বেও নদী ভাঙছে, বন্যা হচ্ছে। অভিন্ন নদ-নদীর পানি নিয়ে প্রতিবেশী দুই দেশ সমাধানেও আসতে পারেনি। আমাদের বন্যা ও ভাঙনে আন্তঃসীমান্ত নদীগুলোর বড় ভূমিকা রয়েছে। সেচ মৌসুমে এ নদীগুলোয় পানি থাকে না। আবার বর্ষাকালে উজানের পানির চাপে দুই তীর প্লাবিত হয়। আন্তঃসীমান্ত নদীর পানিবণ্টনে ভারতের সঙ্গে ১৯৯৬ সালে সম্পাদিত ৩০ বছর মেয়াদি চুক্তির কী সুফল পেয়েছে বাংলাদেশ, সে প্রশ্নও উঠতে পারে। ২০২৬ সালে চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে। এখন দর কষাকষি করে গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি নবায়ন করতে হবে দুই দেশকে।
নদীশাসন ও বন্যা নিয়ন্ত্রণে তেমন সাফল্য নেই। প্রতি বছরই বিস্তীর্ণ অঞ্চলের ফসলহানি হয়, হাজার হাজার মানুষ গৃহহীন হয়। স্থাপনা, অবকাঠামো, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও গ্রামগঞ্জের কী পরিমাণ ক্ষতি হয়, তা নিরূপণ করা সম্ভব নয়। নদীভাঙন ও বন্যাকে সামষ্টিক নিয়তি বলে চালিয়ে দেয়ার সুযোগ নেই। দখলদারদের তৈরি স্থাপনায় নদী হয়ে যাচ্ছে সরু। নদী নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠানও অনেক। প্রতি বছর বন্যা হওয়ায় আমাদের অভিজ্ঞতা কম নয়। দুর্গতদের আশ্রয়ের ব্যবস্থাসহ তাদের সহায়সম্বল ও গবাদি পশুর রক্ষা করতে হবে। খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। ঘরবাড়ি, ফসল ও গবাদি পশু হারিয়ে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে দুর্গতরা এগিয়ে চলেছে। এক্ষেত্রে সামাজিক সংগঠন, এনজিও থেকে শুরু করে বিত্তবানদের এগিয়ে আসতে হবে।
বন্যার সময় আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থানকালে ত্রাণ মিললেও বন্যা-পরবর্তী সময়ে তাদের দুর্দশার অন্ত থাকে না। তাদের পর্যাপ্ত খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও ওষুধ সরবরাহ করে বাঁচিয়ে রাখা জরুরি। এ কাজটি সরকার তথা প্রশাসনের একার পক্ষে করা সম্ভব নয়। বন্যাকবলিত এলাকার জনপ্রতিনিধি ও সরকারদলীয় নেতাকর্মীদের দায়িত্ব বেশি। দলীয় লোক হিসেবে তারা সরকারি সুযোগ-সুবিধা পেয়েছে। কাজেই সবার আগে বন্যার্তদের পাশে তাদের দাঁড়ানোর মানসিকতা থাকতে হবে।
অন্যদিকে ক্ষতিগ্রস্ত সবাই যেন ত্রাণ-সহায়তা পায়, সেটি নিশ্চিত করতে হবে। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর ক্ষতিগ্রস্তদের নিজ আবাসস্থলে ফিরতে এবং ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের বিশেষ প্রণোদনা দিতে হবে। পরিকল্পিতভাবে ব্যবস্থা নিলে বন্যায় ক্ষতি, প্রাণহানি ও সাধারণ মানুষের ভোগান্তি কমবে।