নিজস্ব প্রতিবেদক: রমজান শুরুর প্রায় দেড় মাস আগে থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ছে। গতকাল প্রথম সাপ্তাহিক বাজারে আগের তুলনায় আরও বেশি ছিল চিনি, ছোলা ও রসুনের দাম। তবে কিছু পণ্যের সঙ্গে সবজির দাম বেশ স্থিতিশীল লক্ষ করা গেছে। এদিকে গত বৃহস্পতিবার ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট প্রকাশ করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তবে খুচরা বাজারে বাজেটের তেমন কোনো প্রভাব লক্ষ করা যায়নি।
পণ্য বাজারে এখন ক্রেতার সব থেকে অস্বস্তির পণ্য চিনি। বাজারে বাড়তে বাড়তে এখন খোলা চিনির দাম ৭৫ থেকে ৭৬ টাকায় ঠেকেছে, যা সম্প্রতি সর্বোচ্চ। এমন পরিস্থিতিতে আবার বাজারে সবখানে খোলা চিনিও মিলছে না। নির্ধারিত দামের তুলনায় চিনির দাম অনেক বেশি হওয়ায় বাজারের ভ্রাম্যমাণ আদালতের ভয়ে চিনি বিক্রিও বন্ধ রেখেছে অনেক ব্যবসায়ী। অনেকে সরবরাহ পাচ্ছে না। এ সুযোগে আবার কিছু ব্যবসায়ী গোপনে বেশি দামে চিনি বিক্রিতে ঝুঁকেছে।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে, গত এক মাসে চিনির দাম বেড়েছে ১৮ শতাংশ। টিসিবির তৈরি করা তালিকা অনুযায়ী, এক মাস আগে বাজারে চিনির দর ছিল ৬২-৬৫ টাকা। এখনকার দর ৭৪-৭৬ টাকা। ফলে এক মাসে গড়ে দাম বেড়েছে সাড়ে ১১ টাকা।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারের অনেক দোকানেই খোলা চিনি নেই। যেসব দোকানে মিলছে তারা দাম হাঁকছে প্রতি কেজি ৭৫-৭৬ টাকা। এ বাজারটিতে সরকারের নজরদারি বেশি বলে অনেকে চিনি বিক্রি বন্ধ রেখেছে। কারণ, চিনির নির্ধারিত দর ৬৬ থেকে ৭২ টাকা।
এদিকে বাজারে প্যাকেটজাত চিনি বিক্রি হচ্ছে ৭৩ টাকা কেজি দরে। আর সুগার করপোরেশনের চিনির প্যাকেটের দাম ৭০ টাকা। তবে চাহিদা বেশি থাকায় সবখানে এসব চিনি নেই।
কিচেন মার্কেটের বিক্রেতা অহিদুল হক বলেন, কোনো খোলা চিনি বিক্রি করছি না। এখন চিনি বিক্রি ভেজাল। দামে পোষায় না। আর বেশি দাম নিলে মোবাইল কোর্ট ধরবে। এ জন্য বিক্রিই বন্ধ। প্যাকেট চিনি বিক্রির জন্য রাখি। এখন তারও সরবরাহ নেই।
রমজানে চাহিদা বাড়ায় অস্থির আরেক পণ্য ছোলা। গত এক সপ্তাহে বাড়তি চাহিদাকে পুঁজি করে এর দামও বেড়েছে। রাজধানীর খুচরা বাজারে এক সপ্তাহে কেজিপ্রতি দাম বেড়েছে পাঁচ টাকা। আর এক মাসের ব্যবধানে ছোলার দাম কেজিতে ১০ থেকে ১২ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
হাতিরপুল বাজারে গতকাল প্রতি কেজি ছোলা মানভেদে ৮৫ থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যদিও গত সপ্তাহে তা বিক্রি হয়েছে ৮০ থেকে ৮৫ টকা। আর এক মাস আগে প্রতি কেজি ছোলা বিক্রি হয়েছে ৭৫ থেকে ৭৮ টাকায়।
ওই বাজারের বিক্রেতা সবুজ বলেন, পাইকারি বাজার থেকে বেশি দামে কেনায় বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে ছোলার ক্রমমূল্য বেড়েছে পাঁচ টাকা।
এদিকে সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে আমদানি করা রসুনের দাম মানভেদে দ্বিগুণ হয়েছে। তবে স্বস্তির বিষয় দেশি রসুনের দাম তেমন বাড়েনি। এতে বাজারে ক্রেতারা দেশি রসুন কিনছেন।
ব্যবসায়ীরা জানায়, গত সপ্তাহে কেজি প্রতি ২৮০ টাকা দরে বিক্রি হওয়া ভারতীয় রসুন ৬০ টাকা বেড়ে আজকের বাজারে ৩৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর গত সপ্তাহে প্রতি কেজি ২০০-২২০ টাকায় বিক্রি হওয়া চীনের রসুন আজকের বাজারে ৩৬০-৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে গত সপ্তাহের মতো ১৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে দেশি রসুন।
অন্যান্য বেশ কিছু পণ্য গত এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে বেড়ে যাওয়া দামেই এখন বিক্রি হচ্ছে। যার মধ্যে মুগডাল ১২৫ টাকা, দেশি মসুর ডাল ১২৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া লবণের দাম বেড়ে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজারে এখন পাঁচ লিটারের ভোজ্যতেলের দাম ৫০০ থেকে ৫১০ টাকা। আর প্রতি লিটার ভোজ্যতেল ১০০ টাকা থেকে ১০৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে সবজি ও মাছের বাজার ঘুরে দেখা গেছে আগের দরই। রমজানের শুরু থেকে বেগুন ৬০-৮০ টাকা, শসা ৩৫-৪০ টাকা, চাল কুমড়া ৪০-৫০ টাকা, কচুরলতি ৪০-৬০ টাকা, পটোল ৪০-৬০ টাকা, ঢেঁড়স ৫০-৬০ টাকা, ঝিঙা ৪০-৫০ টাকা, চিচিঙ্গা ৩৫-৫০ টাকা, করলা ৫০-৬০ টাকা, কাঁকরোল ৪৫-৫০ টাকা, আলু ১৮-২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
Add Comment