শেয়ার বিজ ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের পুঁজিবাজারে ধসের পর আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দরপতন হয়েছে। গত শুক্রবার পণ্যটির দর সাড়ে তিন শতাংশের বেশি কমেছে। গত দুই সপ্তাহে ৬০ ডলারের নিচে চলে এলো। সরবরাহ বৃদ্ধি নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টিও পণ্যটির দরে প্রভাব পড়েছে। খবর রয়টার্স।
আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দর তিন বছর পর সম্প্রতি ব্যারেলপ্রতি ৭১ ডলার ছাড়িয়েছিল। পণ্যটির দর বাড়ানোর দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর এটিকে ইতিবাচকই মনে করেছিলেন বিশ্লেষকরা। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যাশার চেয়ে বেশি উৎপাদন ও নর্থ সি ফোর্টিস পাইপলাইন উৎপাদন শুরু হওয়ায় গত ডিসেম্বরের পর তেলের দর সর্বনি¤েœ চলে আসে। দরপতন থেকে ডলারের ঘুরে দাঁড়ানোয় প্রভাবও পড়েছে পণ্যটির বাজারে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিটে (ডব্লিউটিআই) ভবিষ্যৎ সরবারের চুক্তিতে প্রতি ব্যারেল জ্বালানি তেলের দর ছিল ৫৮ ডলার ৮৯ সেন্টে। আগের কর্মদিবসের তুলনায় দুই ডলার ২৮ সেন্ট বা তিন দশমিক ৩৭ শতাংশ কম। গত ২৬ ডিসেম্বরের পর এটিই পণ্যটির সর্বনি¤œ দর। এছাড়া আন্তর্জাতিক বেঞ্চমার্কে লন্ডনের ব্রেন্ট তেল বিক্রি হয় প্রতি ব্যারেল ৬২ ডলার ৫৩ সেন্টে। আগের দিনের তুলনায় দুই ডলার ২৮ সেন্ট বা তিন দশমিক পাঁচ শতাংশ কম। গত ১৪ ডিসেম্বরের পর এটিই সর্বনি¤œ।
সম্প্রতি মার্কিন পুঁজিবাজারে বড় ধরনের ধস হয়েছে। পাশাপাশি ডলারের বিনিময়মূল্য বাড়ছে। এতে প্রভাব পড়েছে তেলের বাজারে। যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রেন্ট উভয় বাজারেই চলতি বছরের জানুয়ারির শেষদিকের পর দাম কমেছে ১১ শতাংশ। এর মধ্যে ব্রেন্ট তেলের সাপ্তাহিক দরপতন হয়েছে ৯ শতাংশ ও যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে সাপ্তাহিক দরপতন হয়েছে ১০ শতাংশ। জানুয়ারি ২০১৬ সালের পর উভয় বাজারের এটিই সবচেয়ে বড় সাপ্তাহিক দরপতন।
কিছুদিন আগে ত্রুটি থাকায় উত্তর সাগরের ফোর্টিস পাইপলাইনের কার্যক্রম বন্ধ ছিল। এখন পুনরায় কাজ শুরু হওয়ায় প্রত্যাশার চেয়ে বেশি উত্তোলন হচ্ছে।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমবিভাগ জানুয়ারির রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, দেশটিতে শ্রমিকদের মজুরি সাড়ে আট বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। এতে মূল্যস্ফীতি বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে শঙ্কা তৈরি করেছে। এছাড়া দুর্বল অবস্থানে থাকা ডলারও সম্প্রতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এতে বাজারে প্রভাব পড়েছে। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি তেলের উত্তোলন বৃদ্ধিও ভূমিকা রেখেছে।
জ্বালানি তেল রফতানিকারক দেশগুলোর সংগঠন ওপেক ২০১৮ সালের শেষ পর্যন্ত উত্তোলন কমাতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। এ কারণে এমনিতেই বাজারে দাম ঊর্ধ্বমুখী ধারায় ছিল। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে উত্তোলন হ্রাস ও ডলারের দুর্বল অবস্থান। সর্বশেষ ব্রেন্ট তেলের দর ৭১ ডলারে পৌঁছেছিল। কিন্তু সম্প্রতি ১২টি রিগে তেল উত্তোলন বাড়ায় যুক্তরাষ্ট্র। এতে সব মিলিয়ে ৭৬৫টি রিগে উৎপাদন চলে। প্রতিবেদনে দেখা যায়, নভেম্বরে গড়ে উৎপাদন দিনে ১০ মিলিয়ন ব্যারেল ছাড়িয়েছে, যা বিনিয়োগকারীদের ধারণার বাইরে।
২০১৪ সালের শেষ সময় থেকে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দরপতন শুরু হয়। ক্রমাগত দরপতন ঠেকাতে ওপেকভুক্ত দেশগুলো পণ্যটির সম্মিলিত উত্তোলন কমিয়ে আনতে চুক্তি স্বাক্ষর করে। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, স্বাক্ষরকারী দেশগুলো চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ছয় মাসের জন্য অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের সম্মিলিত দৈনিক উৎপাদন ১৮ লাখ ব্যারেল কমিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দেয়। এর মাধ্যমে বৈশ্বিক জ্বালানি তেলের মজুত পাঁচ বছরের গড়ের সমপর্যায়ে আসবে বলেও আশা করা হয়। রাশিয়াসহ ওপেকবহির্ভূত ১০ দেশ এ চুক্তি মেনে পণ্যটির উত্তোলন কমাতে রাজি হয়।
তবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে চুক্তির শর্ত বাস্তবায়নে ব্যর্থ হলে এর মেয়াদ আগামী বছরের প্রথম প্রান্তিক (জানুয়ারি-মার্চ) পর্যন্ত বাড়ানো হয়। কিন্তু লক্ষ্য পূরণ না হওয়ায় গত ৩০ নভেম্বর ওপেক সভায় আবারও ৯ মাসের জন্য অর্থাৎ ২০১৮ সালের শেষ সময় পর্যন্ত উত্তোলন হ্রাস চুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হয়।