নিজস্ব প্রতিবেদক: হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশনের (এইচবিএফসি) পক্ষ থেকে আবাসন খাতের ব্যবসায়ীদের অর্থায়ন করার সুযোগ নেই। প্রতিষ্ঠানটি এখন কী করবে তা-ও বুঝতে পারছে না। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত গতকাল এ কথা বলেছেন। অবশ্য আবাসন খাতের কোম্পানিগুলোর বিক্রি না হওয়া কয়েক হাজার ফ্ল্যাট কিনে নিতে পারে সরকার। সরকারকে ওইসব ফ্ল্যাট কিনে নেওয়ার প্রস্তাব দিতে রিহ্যাব নেতাদের আহ্বান জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
গতকাল বুধবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে রিহ্যাব ফেয়ারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মন্ত্রিদ্বয় এসব কথা বলেন। শতাধিক প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণে পাঁচ দিনব্যাপী রিহ্যাবের শীতকালীন আবাসন মেলা শুরু হয় গতকাল। রিহ্যাব সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে এ মেলার উদ্বোধন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আবাসন একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্প। আবাসন খাতে অর্থায়নের জন্য পাকিস্তান আমল থেকেই হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশন কাজ প্রতিষ্ঠিত আছে। কিন্তু, এখন এখান থেকে অর্থায়ন বন্ধ আছে। প্রতিষ্ঠানটি এখন কী করবে তা বুঝতে পারছে না। সরকার এটা নিয়ে আলোচনা করছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আবাসনের ক্ষেত্রে তিনটি পক্ষ আছে। জমির মালিক, ভবন নির্মাণের সঙ্গে জড়িত পক্ষ আর যিনি ভবনে বাস করতে চান। এ তিন পক্ষের সমন্বিত চিন্তাভাবনা মিলিয়ে আমরা একটা সিদ্ধান্তে আসতে চাই।’
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, ‘যে ছয়জন লোক রিহ্যাব শুরু করেছিলেন আমি তাদের একজন। কিন্তু আমি সরকারের অংশ হিসেবে সব শিল্পের প্রতিনিধিত্ব করি।’
রিহ্যাব নেতাদের তিনি বলেন, ‘বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে সরকারকে নীতিগত সহায়তা দিতে রিহ্যাব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। খালি দাবি করার জন্য নয়। পত্রিকায় দেখলাম আপনারা ১৫ হাজার কোটি টাকা অর্থায়ন চাচ্ছেন। আবার এখন একজন বক্তব্যে বললেন পাঁচ হাজার কোটি টাকা অর্থায়ন লাগবে। এ টাকা দিয়ে কী হবে? এ-সংক্রান্ত প্যাকেজ প্রস্তাব করুন। আমাদের অনেক টাকা আছে। ৩৫ বিলিয়ন রিজার্ভ আমাদের। আপনারা ঠিকমতো প্রস্তাব দিতে পারলে সরকার অর্থায়ন করবে। বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী হিসেবে আমারও লাভ আছে। বাড়ি না তৈরি করলে আমার বিদ্যুৎ বিক্রি হবে না।’
প্রতিমন্ত্রী এ সময় বলেন, ‘সরকার এখন অ্যাপার্টমেন্ট বানাচ্ছে। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারির (পিপিপি) ভিত্তিতে রিহ্যাবের কাছ থেকেই সরকার এ অ্যাপার্টমেন্টগুলো কিনে নিতে পারে। রিহ্যাবের নির্মিত কয়েক হাজার ফ্ল্যাট বিক্রি হয়নি। রিহ্যাব এখন সরকারকে দুই হাজার অবিক্রীত ফ্ল্যাট কিনে নেওয়ার প্রস্তাব করতে পারে।’
অর্থমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে নসরুল হামিদ বলেন, ‘এক লাখ টাকা পুঁজি নিয়ে আবাসন ব্যবসা করা যায় না। যারা কম পুঁজি নিয়ে এসেছে, তারা এ খাতের দুর্নাম করছে। এ খাতে যুক্তদের পেইড-আপ ক্যাপিটাল বাড়ানোর বিষয়ে উদ্যোগ নিন।’
নতুন ফ্ল্যাটে বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগের অনুরোধের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমি দায়িত্বে থাকতে কোনো গ্যাসের লাইন দেওয়া হবে না। আমরা ক্রমেই এলপিজি সিলিন্ডারের দিকে এগোচ্ছি। আপনারা যারা গ্যাসের লাইনের জন্য টাকা জমা দিয়েছেন তারা এখন টাকা ফেরত নিতে পারেন। তবে বিদ্যুৎ বিক্রি বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া হবে।’ ফ্ল্যাটের বিদ্যুৎ বিলের পরিমাণ শিল্পপ্রতিষ্ঠানের জন্য নির্ধারিত হারে নির্ধারণ করা হবে বলেও তিনি জানান।
রিহ্যাব সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন রিহ্যাবের পক্ষ থেকে নানা দাবি তুলে ধরেন। বলেন, ‘জমির নিবন্ধন খরচ অনেক বেশি হওয়ায় দেশে জমির নিবন্ধনে মানুষ অনাগ্রহী। বাংলাদেশে এ বাবদ ফি হচ্ছে ১৫ শতাংশ, যা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বোচ্চ।’
এ সময় অন্যদের মধ্যে রিহ্যাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি নূরুন্নবী চৌধুরী শাওন, সহ-সভাপতি লিয়াকত আলী ভূঁইয়া, প্রকৌশলী মো. সোহেল রানা, মো. আবদুল করিম চৌধুরী ও মেলা আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক মো. শাকিল কামাল চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
সম্মেলন কেন্দ্রের চত্বরে প্রায় ১৭৫টি স্টলে শতাধিক রিহ্যাব সদস্য, ৩০টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ১০টি লিংকেজ কোম্পানি অংশ নেয়। পাঁচ দিনব্যাপী এ মেলায় কোম্পানিগুলো তাদের বিভিন্ন প্রকল্প ও সেবার প্রদর্শনী করবে।
Add Comment