আবুল মাল আবদুল মুহিতের ১২তম বাজেট কাল

নিজস্ব প্রতিবেদক: অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে নিজের ১২তম ও জাতীয় সংসদের ৪৮তম জাতীয় বাজেট উপস্থাপন করতে যাচ্ছেন। আগামীকাল বাংলাদেশের দশম জাতীয় সংসদের ২১তম (বাজেট) অধিবেশনে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট পেশ করবেন তিনি। এটি হবে দেশের ৪৭তম বাজেট এবং অর্থমন্ত্রীর ১২তম জাতীয় বাজেট উপস্থাপন। এর মধ্য দিয়ে প্রবীণ এ রাজনীতিবিদ বাজেট উপস্থাপনে রেকর্ড করতে যাচ্ছেন। এ বাজেট হয়তো অর্থমন্ত্রীর শেষ বাজেট উপস্থাপন হতে পারে। এরপর অবসরে যেতে পারেন তিনি। জাতীয় সংসদে এর আগে ১২টি বাজেট উপস্থাপনের রেকর্ড করেছেন প্রয়াত অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান। অর্থমন্ত্রী টানা ১০তম বাজেট উপস্থাপন করতে যাচ্ছেন। প্রয়াত এম সাইফুর রহমানের পক্ষেও তা সম্ভব হয়নি। সাইফুর রহমান টানা পাঁচটি বাজেট দিতে পেরেছেন।
সূত্র জানায়, স্বাধীন বাংলাদেশে টানা ১০ বার বাজেট পেশ এর আগে কোনো অর্থমন্ত্রীর করার সুযোগ হয়নি। মুহিত অর্থমন্ত্রী হিসেবে এর আগে এরশাদ সরকারের সময় ১৯৮২-৮৩ ও ১৯৮৩-৮৪ দুই অর্থবছরে বাজেট পেশ করেন। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত মোট ৪৭টি বাজেট উপস্থাপন করা হয়েছে। ১২ জন এসব বাজেট উপস্থাপন করেন। তাদের মধ্যে একজন রাষ্ট্রপতির দায়িত্বে থেকে, ৯ জন অর্থমন্ত্রী হিসেবে এবং অপর দুজন অর্থ উপদেষ্টা হিসেবে বাজেট দিয়েছেন। এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় মোট ১২টি বাজেট দিয়ে শীর্ষে রয়েছেন বিএনপি সরকারের প্রয়াত অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান। ১১টি বাজেট দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি এরশাদ সরকারের আমলে দুটি এবং আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এ পর্যন্ত ৯টি বাজেট দিয়েছেন।
এছাড়া আওয়ামী লীগ সরকারের অপর অর্থমন্ত্রী প্রয়াত এএমএস কিবরিয়া ছয়টি বাজেট দিয়েছেন। জাতীয় পার্টির অর্থমন্ত্রী এম সাইদুজ্জামান চারটি বাজেট দেন। তিনি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শাসনামলে প্রথমে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এবং পরে বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকারে বাংলাদেশের প্রথম অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ তিনটি বাজেট পেশ করেন।
এছাড়া বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান সামরিক শাসক হিসেবে তিনটি বাজেট উপস্থাপন করেন। স্বৈরশাসনের অবসানের পর দেশে প্রতিটি সরকারের মেয়াদের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান এলে তাতে অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম দুটি এবং ড. ওয়াহিদুদ্দিন মাহমুদ একটি বাজেট পেশ করেন। এরশাদ সরকারের অপর দুই অর্থমন্ত্রী এমএ মুনিম দুটি এবং ড. ওয়াহিদুল হক একটি বাজেট উপস্থাপন করেন। এছাড়া জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বাধীন বিএনপি সরকারের অর্থমন্ত্রী হিসাবে ড. মীর্জা নুরুল হুদা একটি বাজেট দেন। খন্দকার মোশতাক সরকারের সময় দেশের প্রথম টেকনোক্র্যাট অর্থমন্ত্রী হিসেবে ১৯৭৫-৭৬ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করেন ড. এ আর মল্লিক।
সূত্র আরও জানায়, ১৯৭২ সালের ৩০ জুন বাংলাদেশের প্রথম বাজেট উপস্থাপন করেন প্রয়াত অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ। ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরের বাজেটের আকার ছিল ৭৮৬ কোটি টাকা। ১৯৮১ ও ১৯৯১ সালের অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান দেশের দশম ও বিশতম বাজেট পেশ করেন। ওই বাজেট দুটির আকার ছিল চার হাজার ৬৭৭ কোটি টাকা ও ১৫ হাজার ৫৮৪ কোটি টাকা। ২০০০ সালের ৮ জুন দেশের ৩০তম বাজেট দেন এএমএস কিবরিয়া। এই বাজেটের আকার ৩৮ হাজার ৫২৪ কোটি টাকা। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ৩৯তম বাজেট পেশ করেন আবুল মাল আবদুল মুহিত। বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বাজেটের আকার এক লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। ওই বাজেটের আকার এক লাখ ১৩ হাজার ১৭০ কোটি টাকা। এরপর ২০১৩-১৪, ২০১৬-১৭ ও ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটের আকার যথাক্রমে দুই লাখ, তিন লাখ ও চার লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। ২০১৩-১৪ অর্থবছরের আকার ছিল দুই লাখ ২২ হাজার ৪৯১ কোটি টাকা, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে তিন লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা এবং ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বাজেট চার লাখ ২৬৬ কোটি টাকা।
সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ইতোমধ্যে বাজেট উপস্থাপনের ক্ষেত্রে রেকর্ড করে ফেলেছি। টানা ৯টি বাজেট দিয়েছি। কোনো অর্থমন্ত্রী এর আগে টানা ছয়টির বেশি বাজেট দেননি। বাকি আছে আর একটি বাজেট। এটি দিলে টানা ১০টি। আর মোট বাজেট উপস্থাপন হবে ১২টি। তাতে অতীতের রেকর্ড ছুঁয়ে ফেলব। বাজেটের উপস্থাপনায় এই রেকর্ডগুলো গড়তে পেরে নিজেকে সৌভাগ্যবান বলেই মনে করছেন তিনি।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০