আবেগজনিত রোগ বাইপোলার মুড ডিসঅর্ডার

বাইপোলার মুড ডিসঅর্ডার। এটি এক ধরনের মানসিক রোগ। এ রোগটি বেশিরভাগ আবেগের প্রভাবে হয়। নারী-পুরুষ উভয়ের মধ্যে এ রোগ হতে পারে। এর মূল উপসর্গ হচ্ছে খানিক আনন্দ, খানিক বিষন্ন।
একজন ব্যক্তির মন ও শরীর দুটিই প্রয়োজনীয়। মন ও শরীর একে অপরের সঙ্গে সম্পৃক্ত। অর্থাৎ মন ভালো না থাকলে শরীরও ভালো থাকে না। আবেগজনিত এ রোগ সাধারণ সর্দি-কাশি বা মারাত্মক ক্যানসারের মতো নয়। জন্মগতভাবে কোনো সমস্যা যদি থাকে, তবে একটি নির্দিষ্ট বয়সের পর কিংবা মানসিক চাপ অথবা বিভিন্ন ওষুধের অপব্যবহারের কারণে এ রোগ হয়ে থাকে।

বাইপোলার মুড ডিসঅর্ডার কী
বাইপোলার ডিসঅর্ডার এমন একটি মারাত্মক মানসিক ও আবেগজনিত ব্যাধি, যার ফলে ব্যক্তির মন-মেজাজে অস্বাভাবিক ও অত্যধিক পরিবর্তন দেখা দেয়। সেক্ষেত্রে টানা কয়েকদিন কিংবা সপ্তাহব্যাপী ব্যক্তির মানসিকতায় বিষন্নতা দেখা দিতে পারে। আবার কয়েক দিন ফুরফুরে মেজাজ কিংবা অত্যন্ত চঞ্চলতাও দেখা দেয়। এ পরিবর্তনগুলো সুস্পষ্ট এবং ঘন ঘন দেখা যেতে পারে। এমনকি এ ধরনের ব্যক্তি আবেগজনিত কারণে আত্মহত্যার পথও বেছে নিতে পারে। এসব সমস্যার কারণে দৈনন্দিন জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়। ব্যক্তিগত সম্পর্কে অশান্তি হতে পারে। কর্মক্ষেত্রে দুর্নাম হতে পারে। এ রোগটি দীর্ঘস্থায়ী একটি রোগ, যা নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য আজীবন চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে। অবশ্য কিছু নিয়ম মেনে চলতে পারলে রোগটি নিয়ন্ত্রণে থাকে।

উপসর্গ
অতিরিক্ত খুশির ক্ষেত্রে
এ রোগে আক্রান্ত রোগীরা সব সময় অস্থির আচরণ করে। যে কোনো কাজে ভবিষ্যতের কথা চিন্তা না করে তাড়াহুড়ো করে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে। অস্বাভাবিক আনন্দ করে, যা কোনো দুর্ঘটনা বা দুঃসংবাদ শুনলেও কমে না। নিজের সম্পর্কে অবাস্তব কল্পনা:
যেমন ভগবান, তারকা প্রভৃতি মনে করে। বেহিসাবি চলাফেরা যেমন, অপ্রয়োজনীয় খরচ, বিপজ্জনকভাবে গাড়ি চালানো প্রভৃতি। মাথায় সব সময় আজেবাজে চিন্তা ঘুরপাক খায়। অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসও এ রোগের লক্ষণ।

অতিরিক্ত দুঃখের ক্ষেত্রে
হঠাৎই কারণ ছাড়া অতিরিক্ত মেজাজ দেখানো। মানসিকভাবে চূড়ান্ত বিপর্যস্ত হওয়া। হতাশায় ডুবে থাকা। একবার কোনো কাজ করে ফেললে তাতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলা। ঘুমাতে না পারা। সব সময় ক্লান্তি ভাব অনুভব করা।

চিকিৎসা
হৃদরোগ বা ডায়াবেটিসের মতো এর দীর্ঘস্থায়ী চিকিৎসা প্রয়োজন। সঠিক চিকিৎসায় স্বাভাবিক জীবন কাটানো সম্ভব। থেরাপি (কগনিটিভ বিহেভিওরাল), কাউন্সেলিং ও ওষুধের সাহায্যে রোগের উপসর্গ অনেকটা হ্রাস পায়। রোগীর সহ্য ক্ষমতা, রোগের পর্যায়, পারিবারিক চিকিৎসা, এমনকি বয়সের ওপর নির্ভর করে চিকিৎসা করা প্রয়োজন। তবে খেয়াল রাখতে হবে, মাঝপথে যেন চিকিৎসা বন্ধ না হয়ে যায়, তাহলে রোগীর অবস্থার দ্রুত অবনতি ঘটবে।
সঠিক চিকিৎসায় রোগের উপসর্গ নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে। দৈনন্দিন কাজকর্ম স্বাভাবিক হবে। আত্মহত্যা বা নিজের কোনো ক্ষতি করা থেকে আটকানো সম্ভব হবে।

রোগীর খেয়াল রাখবেন যেভাবে
পরিবারের সদস্যদের কেউ এ রোগে আক্রান্ত হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী তার খেয়াল রাখতে হবে। রোগীর সঙ্গে কথা বলার সময় মাথা ঠাণ্ডা রেখে কথা বলতে হবে। তাকে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চলতে উৎসাহ দিতে হবে। যে পরিস্থিতিগুলোয় উত্তেজিত হয় বা কষ্ট পায়, সেগুলো এড়িয়ে চলতে হবে। রোগীর মাথা ঠাণ্ডা হলে তার অপরাধমূলক কাজগুলোকে ঠাণ্ডা মাথায় বোঝাতে হবে। এমন ভাব দেখাতে হবে যে, এতে তার কোনো দোষ নেই। এ ধরনের রোগীকে এমন কিছু বলা যাবে না, যাতে রোগী বিপজ্জনক কোনো পদক্ষেপ নেয়।

সমস্যা রোধ করা যাবে যেভাবে

মদপান কিংবা নেশাজাতীয় অভ্যাস ছাড়তে হবে

চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ সেবন যাবে না

নিয়মিত মানসিক ও শারীরিক অনুশীলন করতে হবে

নিয়মিত ও পর্যাপ্ত ঘুমাতে হবে

টেনশনমুক্ত থাকতে হবে।

কামরুন নাহার ঊষা

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০