সাইদ সবুজ, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে মিথ্যা ঘোষণায় সিগারেট আমদানি করায় তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এই মামলায় কাগজের আড়ালে এক কনটেইনার সিগারেট আনায় আমদানিকারক করিম ট্রেডিংয়ের স্বত্বাধিকারী মো. আবদুল করিম এবং চালান খালাসে সহায়তাকারী সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট সুরমা এন্টারপ্রাইজের মালিক কাওসার ইয়াসমিনকে আসামি করা হয়েছে। একই সঙ্গে ওই মামলায় তাদের সহায়তাকারী হিসেবে সুরমা এন্টারপ্রাইজের কাস্টমস সরকার নূর মোহাম্মদকেও আসামি করা হয়েছে। তার আগে মিথ্যা ঘোষণার চালান আটকের পর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের লাইসেন্স বাতিল করেছিল চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।
চট্টগ্রাম কাস্টমস কমিশনারের পক্ষে ২২ মার্চ বন্দর থানায় মামলটি করেন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মো. মাহফুজুর রাহমান। তিনি মামলার বিবরণে উল্লেখ করেন, আমদানিকারক ২৬ হাজার ২০০ কেজি এ-৪ সাইজের কাগজ ঘোষণা দিলেও নিয়ে এসেছে মাত্র ১৪ হাজার ২০০ কেজি কাগজ। পাশাপাশি কাগজের আড়ালে দুই হাজার ৩৬৯ দশমিক ৩৮ কেজি অর্থাৎ ২২ হাজার ২১৬ ছোট কার্টনে ৪৪ লাখ ৪৩ হাজার ২০০ শলাকা কোরিয়ার তৈরি ইজি ব্র্যান্ডের সিগারেট নিয়ে আসে। একই সঙ্গে ৮৩ দশমিক ৬২ কেজি অর্থাৎ ৭৮৪ ছোট কার্টনে এক লাখ ৫৬ হাজার ৮০০ শলাকা সংযুক্ত আরব আমিরাতের তৈরি মন্ড ব্র্যান্ডের সিগারেট নিয়ে আসে, যা আমদানি নীতি আদেশ ২০১৫-১৮-এর শর্ত ভঙ্গ করে অসত্য ঘোষণায় চোরাচালানের মাধ্যমে আনা হয়েছে। এছাড়া কাগজ আমদানির বিপরীতে ৫৮ দশমিক ৬০ শতাংশ শুল্ক হলেও সিগারেট আমদানির বিপরীতে শুল্কহার ৫৯৬ দশমিক দুই শতাংশ। অর্থাৎ এখানেও আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান শুল্ক ফাঁকির উদ্দেশ্যে কম শুল্ক ঘোষণায় উচ্চ শুল্ক হারের পণ্য আমদানি করেছে।
সূত্রে জানা গেছে, সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে অভিনব কায়দায় আনা সিগারেটের চালানটি গত ১৩ ফেব্রুয়ারি জব্দ করে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের অডিট, ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড রিসার্চ (এআইআর) শাখা। চালানটিতে এ-৪ সাইজের ১৪ টন কাগজের পাশাপাশি ২৩ হাজার কার্টনে ৪৬ লাখ শলাকা ইজি এবং মন্ড ব্র্যান্ডের সিগারেট পাওয়া যায়। সিগারেট শর্তসাপেক্ষে আমদানিযোগ্য। কিন্তু ওই চালানে মিথ্যা ঘোষণায় আমদানি করে প্রায় ১১ কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকির অপচেষ্টা করেছিল আমদানিকারক ও সিঅ্যান্ডএফ।
চট্টগ্রাম রিয়াজুদ্দিন বাজারের সামসুদ্দিন টাওয়ার ঠিকানার আমদানিকারক করিম ট্রেডিংয়ের পণ্যচালানটি খালাসের জন্য গত ৪ ফেব্রুয়ারি সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট সুরমা এন্টারপ্রাইজ আমদানিকারকের পক্ষে কাস্টম হাউসে বিল অব এন্ট্রি (নম্বর সি-২২১১৮৬) দাখিল করে। তারপর এআইআর শাখার ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার আওতায় রপ্তানিকারক, তৈরি দেশ প্রভৃতি গবেষণা করে চালানটি সন্দেহ হলে একই মাসের ৭ তারিখে অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেমে বিল অব এন্ট্রিটি লক করে রাখে। এরপর রোববার (১৪ ফেব্রুয়ারি) পণ্য চালানটি কায়িক পরীক্ষা করে ওই পণ্য পাওয়া যায়।
এআইআর শাখার কর্মকর্তারা জানান, কনটেইনারের সামনের দিকে রাখা সুসজ্জিত কাগজ দেখিয়ে কর্মকর্তাদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট। তারপর কনটেইনারের ভেতরের পণ্য বের করার জন্য সিঅ্যান্ডএফ প্রতিনিধি কাস্টমস সরকারকে অনুরোধ করলে তারা গড়িমসি শুরু করে এবং একপর্যায়ে কায়িক পরীক্ষা স্থগিত করার জন্য পাল্টা অনুরোধ করে।
পরে কনটেইনার থেকে সব পণ্য বের করে দেখা যায়, ৪৮টি পলিথিনে মোড়ানো প্যাকেটের প্রতিটিতে ৪৮টি কার্টন রয়েছে, যার ওপরের স্তরের ১২টি কার্টনে শুধুই কাগজ এবং পরবর্তী ৩৬ কার্টন খুলে ওপরে এক রিম এ-ফোর সাইজের কাগজ পাওয়া যায়। কাগজের নিচে আলাদা অন্য একটি কার্টনে পাওয়া যায় অভিনব কায়দায় লুকানো সিগারেট। কনটেইনারের প্রথম আটটি প্যাকেটে ছিল শুধুই কাগজ এবং নবম প্যালেট থেকে পরবর্তী ৪৮টি প্যাকেটে পাওয়া যায় লুকানো সিগারেট। রাত ২টায় শেষ হওয়া ওই কায়িক পরীক্ষায় ৪৬ লাখ শলাকা সিগারেট পাওয়া যায়।
কাস্টম হাউসের সহকারী কমিশনার রেজাউল করিম শেয়ার বিজকে জানান, আমদানিকারক ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট মিলে যোগসাজশ করে রাজস্ব ফাঁকির চালান খালাসের অপচেষ্টা করে। এখানে সংগঠিত অপরাধের মধ্যমে সরকারি রাজস্ব ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। তাই কাস্টমস আইন অনুসারে প্রথমেই সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের লাইসেন্স বাতিল করা হয়। তারপর ব্যবসায়িক শৃঙ্খলা ভঙ্গের মাধ্যমে অরাজকতা সৃষ্টির জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করা হয়েছে।