সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: দেশে চলমান আন্দোলন ও রাজনৈতিক অস্থিরতায় দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর দিয়ে আমদানি ও রপ্তানি কার্যক্রম অনেকটাই স্থবির হয়ে পড়ে। এতে চট্টগ্রাম বন্দরের পণ্যবাহী জাহাজের খালাসের অপেক্ষমাণ সময় বাড়ছে। বন্দরে কনটেইনার ইয়ার্ডে কনটেইনার রাখার জায়গার স্বল্পতার কারণে ৫৪টির অধিক পণ্যবাহী জাহাজ সাগরে অলস বসে রয়েছে। এর মধ্যে কনটেইনার জাহাজ ১৮টি, সাধারণ কার্গো জাহাজ ১৯টি, তেলবাহী ট্যাংকার পাঁচটি, ফুড গেইন জাহাজ পাঁচটি, ক্লিংকারবাহী জাহাজ চারটি, চিনিবাহী দুটি এবং সারবাহী একটি জাহাজ রয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দর সূত্রে জানা যায়, পহেলা আগস্টে টানা দেশব্যাপী কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সহিংসতা ও অস্থিরতায় সড়ক যোগাযোগ অনেকটা বন্ধ ছিল। আর ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগে অচল হয়ে যায় সবকিছু। এমন পরিস্থিতির কারণে দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দরে পণ্যবাহী জাহাজের পণ্য খালাসে অপেক্ষমাণ সময় বেশি লাগছে। একই সময় বন্দর থেকে আমদানিকারদের কনটেইনার ডেলিভারি কম হওয়ায় প্রধান সমুদ্রবন্দর পরিচালন কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হয়। তবে বর্তমানে কনটেইনার ডেলিভারি স্বাভাবিক আছে। গতকাল সোমবার দুপুর পর্যন্ত বন্দরের বিভিন্ন বার্থ ও বহির্নোঙরে পণ্যবাহী জাহাজের সংখ্যা ছিল ১০৬টি। এর মধ্যে ৬১টি জাহাজ থেকে পণ্য খালাসের কার্যক্রম চলছিল। আর ৪৫টি জাহাজ অলস পণ্য নিয়ে বসে ছিল। এছাড়া পণ্য নিয়ে বন্দরের জলসীমায় প্রবেশের অপেক্ষায় অলস বসে রয়েছে একাধিক জাহাজ।
অন্যদিকে বন্দরের বিভিন্ন ইয়ার্ডে কনটেইনার ধারণক্ষমতা ৫৩ হাজার ৫১৮ একক কনটেইনারের বিপরীতে গতকাল বেলা ২টা পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন ইয়ার্ডে ৩৯ হাজার ৯০৮ একক। একই সময়ে বেসরকারি কনটেইনার ডিপোগুলোয় মোট ১৫ হাজার ৫৭৫ একক রপ্তানি কনটেইনার অবস্থান করছিল। এছাড়া আট হাজার ৩৭৭ একক আমদানি পণ্যবাহী কনটেইনার এবং ৪১ হাজার ৮৫ একক খালি কনটেইনার ছিল, যা স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় অনেক বেশি।
গতকাল বেলা ১টায় পরিবহন শাখার কর্মকর্তারা বলেন, আগের দিন দুপুর ১২টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত তিন হাজার ৪৯০ একক কনটেইনার ডেলিভারি হয়েছে। এর আগের দিন তিন হাজার ৫৯২ একক কনটেইনার ডেলিভারি হয়েছে। মাঝে দুই সপ্তাহ কনটেইনার ও জাহাজের অনেক চাপ ছিল। এখন সবকিছু স্বাভাবিক সময়ের মতো চলছে। কর্মকর্তারা আরও বলেন, জুলাইয়ের ১৫ তারিখের পর থেকে কোটা সংস্কার আন্দোলনে শাটডাউনে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ, টানা অবস্থান কর্মসূচি, সরকার পতন, দেশব্যাপী অস্থিরতায় বন্দর থেকে কনটেইনার ডেলিভারি কার্যক্রম অনেক ধীরগতির হয়েছে। মাঝে চলমান অস্থিরতায় কনটেইনার ডেলিভারি নেয়া অনেকটা বন্ধ হয়ে পড়েছিল। এতে জাহাজ থেকে কনটেইনার নামানো ও ওঠানো বাধাগ্রস্ত হয়।
গতকাল চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন ব্যাণিজ্যিক ব্যাংকের শাখা চালু থাকলেও গ্রাহকের উপস্থিতি কম। সকাল থেকে কিছু লোক টাকা উত্তোলন করার জন্য এসেছিল। তবে তেমন আমদানি-রপ্তানিবিষয়ক কাজ হয়নি। আগের কাজগুলো চলছে। কর্মীরা অনেকটা অলস সময় পার করছেন। এ বিষয়ে চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ ওমর ফারুক শেয়ার বিজকে বলেন, চলমান পরিস্থিতি বিবেচনায় দেশের সব ধরনের সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম চালু এবং অফিস-আদালত খুলে দেয়া হয়। কিন্তু অনেক প্রতিষ্ঠান নানা জটিলতায় এখনও পুরোপুরি স্বাভাবিক কার্যক্রমে ফিরে আসতে পারেনি। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে রপ্তানিমুখী শিল্পের কাঁচামাল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসহ বিভিন্ন আমদানি পণ্যের সরবরাহ, বিঘ্নিত হচ্ছে সামগ্রিক সাপ্লাই চেইন ব্যবস্থা ও ব্যাহত হচ্ছে রপ্তানি কার্যক্রম। একদিকে আমদানিনির্ভর কাঁচামাল সংকট, অন্যদিকে রপ্তানি বিলম্ব, সবমিলিয়ে শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোয় কর্মহীনতা ও স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। তবে কয়েক দিনের মধ্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।
ওমর ফারুক আরও বলেন, মাঝে কয়েক দিন কনটেইনার ডেলিভারি তেমন হয়নি। তার নেতিবাচক প্রভাবে বন্দর ইয়ার্ডে কনটেইনার জমেছে। এখন কনটেইনার ডেলিভারি আগের মতো স্বাভাবিক রয়েছে। আমরা ডেলিভারি দিতে প্রস্তুত। কিন্তু সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের তো ডেলিভারির জন্য আসতে হবে। আমরা সবাইকে অনুরোধ করছি দ্রুত সময়ে কনটেইনার ডেলিভারি নিতে। তবে আমাদের জাহাজ থেকে পণ্য খালাস কার্যক্রম স্বাভাবিক। নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় থাকা চট্টগ্রামের কয়েকজন বড় ব্যবসায়ী শেয়ার বিজকে বলেন, কোটা আন্দোলন ও চলমান অস্থিরতায় আমাদের ব্যবসায়িক পরিবেশ চরমভাবে নষ্ট হয়েছে। এর মধ্যে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের আক্রমণের আশঙ্কা থাকায় আমদানি পণ্য খালাস ও পণ্য সরবরাহ কমে ছিল, যার প্রভাব পড়েছে পণ্য খালাসে। আবার ব্যাংক লেনদেন নিয়ে চলছে নানা বিধিনিষেধ। এমনিতে ব্যবসায়ীরা নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। তাই উপদেষ্টা পরিষদের উচিত হবে তাড়াতাড়ি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন করে সবকিছুকে গতিশীল করা।
